Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সৃজন, মনন ও প্রযুক্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব আনতে হবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:৩৬ পিএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, শুধুমাত্র রোবটিক বা প্রযুক্তির বিকাশ নয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শ্রেষ্ঠত্ব আনতে হবে সৃজনশীলতা, মানবিকতাসহ সকল ক্ষেত্রে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী দেশগুলোতে যে সীমা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেসবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের প্রাচ্য শক্তিরও বিকাশ ঘটাতে হবে। শুধু পাশ্চাত্য হুবহু অনুকরণ নয়, প্রাচ্যের নিজস্ব শক্তির যে বিকাশ সেটিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ এই প্রাচ্যেরও রয়েছে অফুরান প্রাণশক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়। এর সঙ্গে শিল্প, সাহিত্য ও মানবিকতার সমন্বয় সাধন করতে হবে। তাহলেই আগামীর বিশ্ব গড়ার যে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবেলা যথার্থ হবে।

গত সোমবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ (ভিসিডিএস) আয়োজিত আইপিডিসি ৮ম আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তরুণ বিতার্কিকদের উদ্দেশে ড. মশিউর রহমান বলেন, বিতর্ক আর কিছু নয়, সত্য অনুসন্ধানের নিরলস প্রচেষ্টা। যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা, গণতান্ত্রিক ভাবধারা, দেশপ্রেম, প্রকৃতিকে বোঝা, বিজ্ঞানকে বোঝা, যুক্তিকে বোঝা যায়। প্রমাণিত বিষয় অনুসন্ধানে বিজ্ঞান যেমন নিরলস কাজ করে, তার্কিকের যুক্তির প্রখরতা মূলত সেই বিজ্ঞান অনুসন্ধানের প্রয়াস।

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, ‘বিতার্কিকরা ভারসাম্যের পৃথিবীর কথা বলছেন। আমরা কী মার্কিনিদের আদলে দেশ গড়তে চাই। নাকি ধনবান ও পুঁজিবাদী সমাজ-রাষ্ট্র গড়তে চাই। বরং পুঁজি এবং ধনতন্ত্রের মধ্যে যে সীমা এবং সীমাবদ্ধতা আছে সেটিকে নির্ধারণ করে বাংলাদেশ তার স্বকীয় জায়গা দাঁড়াবে আমরা সেটি চাই। আমি তো মনে করি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যে অভিঘাত, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এবং ধনিক শ্রেণির বিকাশ হয়েছে তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু প্রণীত শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা-যেটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যেই জায়গায় দাঁড়ালে বাংলাদেশ হয় পৃথিবীর অনন্য মডেল।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত রাষ্ট্রকে মানবিকতায়, সৎ উচ্চারণে, দৃষ্টান্ত স্থাপনে আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় মিয়ানমারের লাখো শরণার্থীদের আমাদের আশ্রয় দেয়ার কথা ছিল না। পুঁজিতে, ধনে যারা উন্নত তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা ছিল। তারা মানবিকতা দেখাতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এটাই তো শিল্পায়ীত ধনবান সমাজের সীমাবদ্ধতা। আমাদেরও তো স্বাস্থ্যের, খাদ্যের ঝুঁকি ছিল। তারপরেও মানবিকতাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার কেন দিলাম। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দর্শন। তাই বলে আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে একটি অগণতান্ত্রিক মিয়ানমারের সকল দায় নিবো? এটিও যেমন সমীচীন নয়, সেটি বলার অধিকারও আমার যেমন থাকবে, তেমনি এটির ব্যবস্থা বিশ^বাসীর করতে হবে- সেটিও সোচ্চারভাবে বলতে হবে।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুধু প্রযুক্তির বিকাশ নয় উল্লেখ করে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমি মনে করি একদিকে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে। অন্যদিকে মানবিক সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। সেটি করতে না পারলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রশ্নের মুখে থেকে যাবে। প্রচলিত সমাজ ভেঙে দিয়ে নতুন সমাজ তৈরি হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিউটি। সেই সৌন্দর্যকে আনতে হলে বহুমাত্রিকতার যে সমাজ সেটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, উচ্চতা যাই হউক, প্রতিটি মানুষের অন্তর্নিহিত মানবিকতা এবং বিজ্ঞানমুখী চেতনা যেন আরও বেশি অগ্রসর হয়। যুদ্ধ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আকাক্সক্ষা নয়। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাই ধনবান হতে চায় না। কেউ কেউ নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত, জদগীশ বসু, শিল্পাচার্য জয়নুল হতে চায়। আমাদের ঐতিহ্যের পথ ধরে, পাশ্চাত্যের সকল কিছু অনুকরণ নয়, প্রাচ্য অঞ্চলের স্বীয় শক্তিতে আত্মবিশ^াসে রেখে আমাদের এই প্রিয় স্বদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বাঙালি সংস্কৃতি-কৃষ্টির চেতনায় আপন শক্তিতে বলীয়ান করে তোলতে হবে।’

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর সুমেশ কর, কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাহাদুর হোসেন, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জামাল নাসের, কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফরিদ আহমেদ ভুইয়া, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী, কুমিল্লা সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরব, এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা গাজী মো. নামজুল হোসেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন। ভিসি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য কলেজের বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করেন। এছাড়া ভিক্টোরিয়া কলেজে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধীনে চলমান ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। পরীক্ষা হলের সার্বিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন ভিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ