গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সরকার হটানোর ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি এবং দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। অতিদ্রুত এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিযে আমরা আপনাদের সামনে, জাতির সামনে আসব।
মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রূপরেখায় কি থাকবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে একটা সুষ্ঠু অবাধ গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য। এই সংসদ বাতিল করতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে যাদের নেতৃত্বে নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তারা সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে সকল ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এটাই আমাদের প্রধান বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন যে, নির্বাচনের পরে আন্দোলনকারী যেসব দলগুলো থাকবে তাদের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এর প্রধান কারণটা হচ্ছে এখানে এই যে ক্ষতগুলো সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সেগুলো এককভাবে করাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না-সেই কারণে অন্যান্য দলকে যুক্ত করতে চাই যাদের যৌথ আলোচনায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পার্লামেন্ট, মিডিয়া এসবের ক্ষেত্রে যেন আমরা সুস্পষ্ট সকলের সর্বসম্মতিক্রমে না হলেও কনসেনসাসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারি সেজন্য আমরা এই চিন্তাটা (জাতীয় সরকার) করেছি।
আন্দোলন একমঞ্চে নয়, যুগপৎ হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো এবং সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আহ্বানও তাই। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে যুগপৎ আন্দোলনের আহবান জানাচ্ছি। তারপরে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নির্ধারিত হবে।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সাথে আন্দোলনের বিষয়ে সংলাপ করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে এখনো আমরা ফরমালি কোনো আলাপ-আলোচনা করিনি।
যুগপৎ আন্দোলনে সব দলের জন্যই দরজা খোলা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের রাস্তা খোলা। আমরা পরিস্কার করে বলেছি, যে কেনো রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সংগঠন যারা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করবে তাদের নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এবং তাদের ২০ দলে থাকা না থাকা নিয়ে দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি আপনাদের সাথে আগে কথা বলেছি। ওরাও (জামায়াত) একটু বক্তব্য দিয়েছে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলছি এখন। এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে। সকল দল সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে। এটাই হচ্ছে আমাদের কথা।
অর্থ লুট করতে চার কুইক রেন্টালে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানে বিদ্যুত বোর্ড জ্বালানি অপ্রতুলতার কারণে সবকয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন করতে পারছে না, উৎপাদন না করেও শত শত কোটি টাকা ভুর্তকি প্রদান করছে সরকার সেখানে চারটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে। আমরা সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আরো চারটা কুইক রেন্টালের মেয়াদ বৃদ্ধির একটাই কারণ হচ্ছে যে, ওই ক্যাপাসিটি চার্জ যা আসবে সেই টাকাটা ভাগ করে খেয়ে ফেলা।
ঔষধের দাম বৃদ্ধি অনৈতিক মন্তব্য করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫০টি ব্যান্ডের ঔষধের দাম ৫০% থেকে ১৩৪% পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গুটিকতক ব্যবসায়ীকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনৈতিকভাবে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি করছে। আমরা এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
পুলিশ বিএনপির প্রতিপক্ষ নয় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশ হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগঠন। আমরা কখনই পুলিশকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। পুলিশ জনগনের বন্ধু হওয়া উচিত, বন্ধু বলে মনে করি আমরা এবং সেটাও আমরা মনে করি যে, তাদের সংবিধানিক যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব তারা পালন করবে। কিন্তু সরকার অবৈধভাবে টিকে থাকার জন্য সংবিধান লঙ্ঘন করে, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যথন পুলিশকে ব্যবহার করে তখন নিসন্দেহে সেই বিষয়গুলো জনগণের সামনে, মানুষের সামনে এসে দাঁড়ায়। আজকে র্যাববে যে কারণে সেনশন দেয়া হেেয়্ছ, আমেরিকা যে কারণে সেনশন দিয়েছে সেই র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগটা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে আমি অবশ্যই একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব এবং কর্তৃব্য যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃব্য সম্পর্কে সচেতন করে দেয়া যে, আপনারা সরকারের অবৈধ নির্দেশে, বেআইনি নির্দেশে এমন কেনো কাজ করবেন না যে কাজগুলো আবার আপনাদের ওপরেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটা অভিযোগ আসতে পারে। আপনারা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন যে, সব জায়গায় এই ঘটনাগুলো ঘটছে না বা সব পুলিশই এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে না। কয়েকটা জায়গাতে অতি উতসাহী কিছু অফিসার তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি যেটা জানতে চেয়েছিলাম যে, নারায়ণগঞ্জে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি হলো সেটা কিভাবে হলো, কোন কর্তৃত্ব থেকে সে (গোয়েন্দা পুলিশ) এটা ব্যবহার করতে পারলো। সেই উত্তর কিন্তু এখনো বাংলাদেশের মানুষ পায় নি।
গতকাল জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বড় করে উঠে এসেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে তারা এখানে একটা নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সহায়তা করতে তারা সরকারকে বলেছে যে, আমাদেরকে সুযোগ দাও, আমরা এটা করতে চাই। অর্থাত এখানে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘেন হচ্ছে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো যেন বন্ধ করা যায়।
একসঙ্গে অত্যন্ত পরিস্কার করে বলেছে যে, মানুষের কথা বলার যে অধিকার, তার মত প্রকাশের যে অধিকার তাকেও এখানে আপহোল্ড করতে হবে। একই সঙ্গে বলেছে যে, নির্বাচনের পূর্বে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে যেন শুধুমাত্র তার মতের জন্য হয়রানি না করা হয়।
গতকাল রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্তসমূহ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।