পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আগুন ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সেই বিএম কনটেইনার ডিপো। বিস্ফোরণের আড়াই মাসের মাথায় খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও পরিবহনের কাজ শুরুর পর এখন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরুর জোর প্রস্তুতি চলছে। এই লক্ষ্যে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গতকাল রোববার নতুন করে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।
গত ২২ আগস্ট তিনটি শর্তে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও স্থানান্তরের মাধ্যমে ডিপোর আংশিক কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে ওই তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারায় খুবশিগগির পুরোদমে ডিপো পরিচালনার অনুমোদন মিলবে বলে আশা করছেন ডিপোর কর্মকর্তারা। এদিকে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রামের অন্য ডিপোগুলোতেও অগ্নি-নিরাপত্তার পাশাপাশি আইএসপিএস কোড অনুযায়ী সব ধরনের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে তোড়জোড় চলছে।
গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারী ১৪ জন। এ ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক। বিস্ফোরণের পর টানা অগ্নিকাণ্ডে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এতে শুধু ডিপোর ক্ষতি হয়েছে শতকোটি টাকা। দুর্ঘটনায় আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ১৭০টি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের পর ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামের অন্যান্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে। এসব ডিপোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্ভাডভ্যানের জট বেড়ে যায়। বিএম ডিপোতে মোট আমদানি-রফতানি পণ্যের আট শতাংশ ব্যবস্থাপনা হতো। চট্টগ্রামে আরও ১৯টি ডিপো চালু রয়েছে। এসব ডিপোর মূল কাজ রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রফতানি পণ্য প্রথমে কাভার্ডভ্যানে এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যান থেকে রফতানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর শেডে। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় এসব ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশও বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। এর বাইরে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করাও ডিপোর কাজ।
বিএম ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে সাতটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ডিপো কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি করে দুর্ঘটনার কারণ ও এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় নির্ধারণ করে। তারই আলোকে কনটেইনার ডিপোর সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার ওঠা-নামা ও সংরক্ষণের অনুমতি দেয় কাস্টমস।
এতে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এই শর্তের একটি হলো পরিবেশ অধিদফতর, বিস্ফোরক অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ১৫ দিনের মধ্যে নিতে হবে। আরেকটি হলো ১৫ দিনের মধ্যে কাছাকাছি কোনো অগ্নি নির্বাপণ কার্যালয় বা ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই সবকয়টি শর্ত পূরণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর ও বিস্ফোরক অধিদফতরের এনওসি বা ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মীকে ফায়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
ডিপোর অভ্যন্তরে অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, বিপদজনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ ডিপোতে আইএসপিএস কোড কমপ্লায়েন্স বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের জঞ্জাল অনেক আগেই সরানো হয়েছে। ডিপোর অফিস, প্রশাসনিক কার্যালয়, হিসাব বিভাগ, প্রশাসন বিভাগ, আইটি বিভাগ, অপারেশন বিভাগ, কাস্টমস বিভাগের পরিচালনার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। আইটি বিভাগের কাজও চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের কাজ শেষ হয়েছে।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ডিপোর অভ্যন্তরে সবকিছু সাজানো-গোছানো। প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জামাদি ফায়ার এক্সটিংউইসার, হোজ রিল স্থাপন করা হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে এক লাখ ১০ হাজার লিটার এবং ৩০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটো পানির রিজার্ভার ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অগ্নি নির্বাপণের জন্য পুরো ডিপোতে পর্যাপ্ত পানির পাশাপাশি ফোম টাইপ হাইড্রেন্ট সিস্টেমেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আইএসপিএস কোড নীতিমালা মেনে রাসায়নিক পদার্থসহ বিপদজনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পৃথক শেড তৈরি হচ্ছে।
আমদানি-রফতানি পণ্য রাখার জন্য দুই লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের শেড তৈরি করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাইম মুভারসহ ইক্যুইপমেন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হলে সক্ষমতার ৭৫ ভাগ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে এবং আগামী জানুয়ারি নাগাদ শতভাগ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। ২৪ একর জমিতে গড়ে ওঠা চট্টগ্রামের তৃতীয় বৃহত্তম এ ডিপোর সক্ষমতা বছরে এক লাখ টিইইউএস। তবে এখন বছরে ৯০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে ১০ হাজার টিইইউএস ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ অফডকটি চালু করা হয়। নিজস্ব ৫১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে এক হাজার দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক মিলিয়ে ডিপোয় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা দেড় হাজার।
বিএম কনটেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান বলেন, দুর্ঘটনার পর ডিপো পুনরায় চালু করার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া সব শর্ত পূরণ করেই ডিপোর কমপ্লায়েন্স আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হচ্ছে। আমদানি-রফতানি চালু করতে কাস্টম হাউসে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আশা করি খুব শিগগির পুরোদমে কাজ শুরুর অনুমোদন পাব। তিন মাস হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকলেও ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, হতাহত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ইতোমধ্যে ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী দুর্ঘটনার নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের কাছে বেতন সমপরিমাণ অর্থ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, আংশিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদনের সাথে দেয়া শর্ত পূরণ করার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। যাচাই-বাছাই করে সহসা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।