Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে কি এনেছেন? জানতে চান মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:০৪ পিএম

আবারও কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সে ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্যে একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন। কি এনেছেন ভারত থেকে? কিছুই না। ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এছাড়া তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয় সেইদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশী একজন ১৪ বছরের বালককে, আরো দুই জন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা(সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইতি প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘রাজনীতি : পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায় আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক -আপনাদের মন্ত্রী বলেন। এগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করতে করতে এবং মানুষ পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতির নির্মাণ হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন জয়পুর এয়ারপোর্টে নৃত্যগীতে ভরপুর। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেখানে অংশ নিয়েছেন। আমরা ছবিতে দেখলাম। দেশের মানুষকে যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন চাল-ডাল-তেলের দাম বৃদ্ধির পাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে গুলি করে মারছেন, যখন এদেশে চরম একটা অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই সময়ে জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্য গীতের সঙ্গে একসঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।

দমনপীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন। আবার আগের মতো একই কায়দা মামলা করছেন। এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তারা তা অর্জন করবে।

হাওড়ে উড়াল সেতুর প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, উড়াল সেতু নির্মাণে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখবেন নিঃসন্দেহে সেটা গিয়ে পৌঁছাবে ২৬ হাজার কোটি টাকায়। এটার প্রয়োজন আছে কিনা, কত গুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, দুই বেলা দু’মুঠো খেতে পারে না, যেদেশের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বিএ-এমএ পাস করে কোনো কর্মসংস্থান নেই। তারা মোটর বাইক চালাচ্ছে, রিকসা-ভ্যান চালাচ্ছে সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মোডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি একটা বেঈমানি করে গণতন্ত্র বিনাসী একটা শক্তি হয়ে উঠে- সমস্ত কিছু ধবংস করে দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের যে অবস্থা, এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ, আজকে এই রাষ্ট্রের যে অবস্থা এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ, আজকে এই দেশে গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, আজকে এই দেশে অর্থনীতিকে পুরোভাবে লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।

এই জাতিকে এই রাষ্ট্রকে তারা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আজকে কোথাও বিচার নেই, আইন শৃঙ্খলা ধবংস হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কল্পনা করা যায় যে, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে যারা সেখানে কথার আগেই গুলি করে মারে, গুলি করে হত্যা করে। পাকুন্দিয়ায় যে ছেলেটাকে কাছে থেকে গুলি করেছে তার ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে, তার লিভার ফুটো হয়েছে, তার কিডনি ফুটো হয়েছে- এখনো বেঁচে আছে।

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বইটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। যখন দেশে ইতিহাস বিকৃতির সুপরিকল্পনা চলছে সেই মুহুর্তে এমন বই লিখে প্রকাশ করা কঠিন কাজ এবং প্রশংসনীয়। সাধারণত এ ধরনের বই গ্রহণযোগ্য হয় যখন নির্মোহভাবে লেখা হয়। লেখক রাজনীতি করলেও ইতিহাসের আলোকে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানকার মানুষ সবসময় বঞ্চিত হয়েছে। একই সাথে স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সেই অর্থে বাংলাদেশের ইতিহাস গর্বের। আজকে জবরদখলকারী সরকার গায়ের জোরে ইতিহাস বিকৃতি ঘটাচ্ছে । অবশ্য এটা তাদের পুরনো ইতিহাস ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা একটা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। স্বাধীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। আমরা জাতি হিসেবে এখানে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। ১৯৭২ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্লজ্জভাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তারা ভোটার বাক্স তুলে নিয়ে গেছে। সেই তখন থেকেই দুর্বৃত্তায়নের শুরু। যদিও তারা এমনিতেই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।

 

তিনি বলেন, কেনো সেদিন রক্ষী বাহিনী তৈরি হয়েছিলো? কেনো বাকশাল করতে হয়েছিলো? কেনো একজন ব্যাক্তিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে হবে। কেনো আপনাদের থেকে জাসদের জন্ম হলো? এসব উত্তর আওয়ামী লীগ ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা দেননা। তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। মূলত তখন থেকেই তারা দেশের সকল ন্যায় নীতিকে ধ্বংস করেছে।

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি বইটি পড়েছি। অনেক বিষয়ের সমাহার ঘটেছে। কিছু কিছু লেখকের নিজস্ব মতামতও রয়েছে। যা লেখকের সাহসিকতার প্রমাণ বহন করে। যারা পড়ালেখা করেন তাদের জন্য বইটি কাজে আসবে। বইটি বেশ তথ্যবহুল।

 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম বইটি প্রসঙ্গে বলেন, ইতিহাসের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছেন। পাকিস্তান সৃষ্টি ও এর যৌক্তিকতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নিরমোহভাবে তুলে ধরেছেন। যা নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আজকে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেও স্বাধীন না। গণতন্ত্র নেই। অর্থনীতি ভঙ্গুর। এখানে এখনো নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক সরকার এখনো ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস বিকৃতি করছেন। আজকে দেশের স্বাধীনতা সংস্কৃতি ধ্বংস হচ্ছে সেদিকে তার নজর নেই। আজকে সমাজের অবক্ষয় শুরু হয়েছে মাথা থেকে। লেখক তার বইয়ে অনেকগুলো সত্য ঘটনা তুলে ধরেছে। এজন্য তাকে ধন্যবাদ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যা বলছে তা সর্বৈব মিথ্যা। বরং এই সরকার ক্ষমতার আসার পর দেশে গুন, খুন, ব্যাংক ডাকাতি সহ নানা ধরনের অন্যায় অনিয়ম বেড়েছে। হারুন যে বইটি। লিখেছে তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এ ধরনের লেখালেখি অব্যাহত রাখা দরকার। যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্ম সম্পর্কে জানতে পারে। কেননা তারা জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। আজকে দেশের সংকটের সমাধান করতে হলে সবার আগে গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবেনা।

 

বইটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র সাবেক ছাত্র ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মো: হারুন-অর-রশিদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বইটির লেখক ও কলামিস্ট মো: হারুন অর রশিদ, প্রকাশক জহির দীপ্তি, স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মো: নূরুজ্জামান প্রমুখ। ‘ইতি প্রকাশন’ এর ৩২০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির মূল্য হচ্ছে ৬০০ টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ