চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুসলীম সৈন্যগন বিজয় বেশে ফতেহপুর নামক স্থানে এসে উপস্থিত হল। পরদিন ভোর বেলা ফজরের নামাজ আদায় করে সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ.সৈন্যসামন্ত সহ গৌঢ গোবিন্দের প্রাসাদ ঘেড়াও করে ফেলল। গৌড় গোবিন্দের কোনো কুট চক্রই যাত্রা পথে তাদের বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। পাপাচারী গৌড় গোবিন্দ এবার প্রমাদ গুনল তার আর নিস্তার নেই। একথা মর্মে মর্মে উপলবদ্ধি করে গৌড় গোবিন্দ চারদিকে অন্ধকার দেখল। কিন্তু ধুর্ত গৌড় গোবিন্দ সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন। পরাজয়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে এক ভীষন অগ্নি পরিক্ষায় মুসলীম বাহীনিকে আবার যাচাই করে দেখার চিন্তা করল। একদিকে নিজের প্রাণ অপর দিকে রাজ্য রক্ষার চিন্তায় একেবারে দিশেহারা হয়ে শেষ বারের মত নিজ ভাগ্য কে পরিক্ষা করে দেখার জন্য মুসলীম বাহীনির কাছে দূত প্রেরণ করল। গৌড় গোবিন্দের দূত বলল, আমাদের মহারাজার অশ্রাগারে একটি বৃহৎ ধনুক আছে, সে ধনুকে যদি কেউ জ্যা যোজনা করতে পারে তাহলে সে ব্যাক্তি আমাদের মহারাজা কে পরাজিত করতে পারবে। অন্যথায় শত চেষ্টা করলেও কারও সাধ্য হবে না আমাদের মহারাজার অনিষ্ট করার। সুতরাং আপনাদের সৈন্য বাহীনির মধ্যে যদি কোন মহাবীর পুরুষ থাকে তাহলে তার দ্বারা নিজেদের ভাগ্য পরিক্ষা করিয়ে দেখুন। শুনে সিপাহসালার নাসিরুদ্দীন রহ শাহজালাল রহ. এর সাথে পরামর্শ করলেন, এবং তিনি এও বল্লেন আপনাদের মধ্যে যে ব্যাক্তির আছরের নামাজ কোনদিন কাযা হয়নি সেই ব্যাক্তিই পারবে এই অসাধ্য কাজ সাধন করতে। সেই ব্যাক্তি পারবে গৌড় গোবিন্দের লোহার ধনুকে জ্যা যোজনা করতে।
একথা শুনে সবাই নত মুখি হয়ে গেলেন। আসলে দিল্লীর বাদশাহ আলাউদ্দীন খিলজী অনেক যাচাই- বাছাই করেই সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ.কে সিলেট বিজয়ের প্রধান সেনানায়ক হিসাবে নিয়োগ দান করেছিলেন, কোনো দিক থেকে কোনো উত্তর না আসায় সিপাহসালার নিজেই দাঁড়িয়ে বললেন হযরত আমার জ্ঞাতসারে আমি কোন দিন আছরের নামাজ কাযা করিনি। আপনি আমায় দোয়া করুন আমি এই কাজ সাধন করি। মূহুর্তের মধ্যেই বক্তার মুখের দিকে তাকিয়ে খুশিতে সবাই আটখানা হয়ে গেল। সে ব্যাক্তিই হলেন ইতিহাস প্রসিদ্ধ আউলাদে রাসূল সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ.।
(এখানে উল্লেখ্যযে হযরত শাহ জালাল রহ. বয়সে নাসিরুদ্দীন রহ. এর বড় ছিলেন। তাই সকল কাজই তিনি শাহজালাল রহ এর সাথে পরামর্শ করেই করতেন। এছাড়া নবী খান্দানের বিনয় ছিল তার স্বভাব জাত।) হজরত শাহজালাল রহ. খুশিতে বললেন, বেশ আপনিই পারবেন এ অসাধ্য কাজ সাধন করতে। তারপর সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. কয়েকজন বিশ্বস্থ্য সৈন্য নিয়ে গৌড় গোবিন্দের অশ্রশালায় এসে উপস্থিত হলেন। গৌড় গোবিন্দ ভাবল এ মুসলীম বাহীনির অসাধ্য কি আছে? দৈবশক্তি বলে এরা যখন ভরা নদী পার হয়ে এসেছে তখন একাজ করা তাদের পক্ষে কোন ভাবেই অসাধ্য হবে না। তা সত্বেও গৌড় গোবিন্দ সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রহ. কে ধনুকে জ্যা যোজনা করার অনুমতি দিলেন। সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ. সর্ব শক্তিমান আল্লাহর নাম নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে প্রথম চেষ্টাতেই তিনি ধনুকটি উঠিয়ে নিলেন এবং অনায়াসেই তাতে জ্যা যোজনা করে ফেললেন। সহচরগণ হর্ষোৎফুল্ল কন্ঠে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুললেন, পাপাচারী গৌড় গোবিন্দের অন্তরাত্মা কেপে উঠল। রাজ্য রক্ষার শেষ আশাটিও তার ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল এ অসাধ্য সাধন যার দ্বারা সম্ভব হয়েছে তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বোকামিই বটে । রাজ্য রক্ষা আর কিছুতেই সম্ভব হবে না। এবার প্রাণ রক্ষার উপায় স্থির করতে হবে। তার সকল চেষ্টা-কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। উপায়ান্তর না দেখে ধনরত্ন ও মণি মানিক্য নিয়ে রাজপুরীর অভ্যন্তরীন এক দুর্ভেদ্য কক্ষে সপরিবারে আত্মগোপন করল বিশ্বাস ঘাতক গৌড় গোবিন্দ।
এ সংবাদ পেয়ে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. সমস্ত সৈন্য সহ গৌড় গোবিন্দের রাজপুরীর সামনে এসে হাজির হলেন। অতঃপর হযরত শাহজালাল রহ, সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. কে গৌড় গোবিন্দের রাজবাড়ীর উচ্চ বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে আযান দিতে অনুরোধ করলেন। সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. এর গুরুগম্ভীর আযানের ধ্বনিতে গৌড় গোবিন্দের সপ্ততল বিশিষ্ট সুদৃঢ় রাজপ্রাসাদ দড়মড় করে ভেঙ্গে ভূতলশায়ী হয়ে গেল। দিশেহারা হয়ে গৌড় গোবিন্দ রাতের আধাঁরে কোন রকমে জীবন নিয়ে পলায়ন করল। ইসলামের বিজয় হুংকারে মিথ্যার উপর সত্য প্রতিষ্ঠা হল। সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. সিলেট জয় করে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিলেন।
সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ. এর তরপ বিজয় : সিলেট বিজয়ের পর দিল্লীর সম্রাট হিন্দু অত্যাচারি রাজা আচক নারায়ণকে সমুচিত শাস্তি প্রদান করতে মনস্থ করলেন। দিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. এর উপর দায়িত্ব অর্পন করেন। সিলেটের রাজত্বের দায়িত্বভার সুলতানের ভাগিনা সিকান্দার গাজীর হাতে অর্পণ করে অনতিবিলম্বে তিনি তরপের উদ্দশ্যে যাত্রা করেন। সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ. কয়েক হাজার পদাতিক ও এক হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে তরপ অভিমুখে রওয়ানা হন। তার সঙ্গে ১২জন আউলিয়া ছিলেন। তাই তরপকে বার আউলিয়ার দেশও বলা হত। হবিগঞ্জ জেলা, বি বাড়িয়া ও ত্রিপুরার কিছু অংশ জুড়ে তরপ রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত ছিল। তরপ রাজ্য আগে রাজপুর ও তুঙ্গাঞ্চল নামে পরিচিত ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।