পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}। কোরবানির জবাইকৃত পশুর প্রতিটি পশমে নেকি রয়েছে। ঈদুল আযহা দিবসে একমাত্র রক্ত প্রবাহিত করা ( কোরবানি করা) ব্যতীত আদম সন্তানের অন্য কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে অধিক পছন্দনীয় নয়। যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব তারা অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়েছে। গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুৎবায় বলেন, জিলহজ অত্যন্ত সম্মানীত একটি মাস। এ মাসেই শুধু ইসলামের সমস্ত মৌলিক ইবাদত করার সুযোগ আছে। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি। ১২টি মাসের মাঝে চারটি মাসকে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম।
খতিব বলেন, এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের সূরা ফজরের শুরুতে আল্লাহ্ তায়ালা এই জিলহজের প্রথম দশ দিনের শপথ করে বলেন “কসম প্রভাতের এবং ১০ রাতের।” (সূরা : ফজর, আয়াত : ১-২) এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা কোন কোন তাফসিরকারক এ আয়াতের মাধ্যমে জিলহজের প্রথম ১০ রাতকে বুঝিয়েছেন বলে মনে করেন (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তায়ালার নিকট জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোন ইবাদত নেই। [সহিহ্ বুখারী খন্ড ২, ৪৫৭] এছাড়াও এ মাসে আছে ‘আরাফাহ্ ‘এর দিন। যেদিন ইসলাম হয়েছে পরিপূর্ণ। আল্ কোরআনে মহান আল্লাহ্ বলেছেন “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। “[সূরা মায়িদা ৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ্ সুবাহনহুতালার কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)। তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।
হজ ও ওমরাহ এ দুটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫) খতিব বলেন, ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হল আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬} আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জিলহজ মাসের গুরুত্ব বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব সিফাতুল্লাহ রাহমানি জুমার নামাজের বয়ানে বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে অনেক গুলো ফযিলতপূর্ণ আমলের কথা হাদিসে পাকে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোনো বান্দা যদি একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা সেই রোজার পরিবর্তে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে দিবেন।" (বুখারি ও মুসলিম) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "মহান আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতের তুলনায় অন্য কোনো দিনের ইবাদত অধিক প্রিয় নয়। জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনের প্রতিটি রোজা ১ বছরের নফল রোজার সমতুল্য আর প্রতিটি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য।" (তিরমিজি, ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরিফ পৃ:১২৮) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "আরাফাহর (৯ জিলহজের) নফল রোজার ব্যাপারে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।"
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "ঈদুল আযহা দিবসে একমাত্র রক্ত প্রবাহিত করা ( কোরবানি করা) ব্যতীত আদম সন্তানের অন্য কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে অধিক পছন্দনীয় নয়। কিয়ামত দিবসে কোরবানিকৃত ওই শিং, লোম এবং খুরসহ উপস্থিত হবে আর কোরবানির রক্ত মাটিতে পতীত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহর দরবারে বিশিষ্ট স্থান লাভ করে (কবুল হয়ে যায়)। সুতরাং তোমরা কোরবানি করে সন্তুষ্ট থাকো।" (তিরমিজি, ইবনে মাযাহ, মিশকাত পৃ:১২৮) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোরবানির জবাইকৃত পশুর প্রতিটি পশমে নেকি রয়েছে।"( আহমাদ ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরিফ ১২৯ নং পৃ)। ঢাকার নীলক্ষেতস্থ গাউসিয়া মার্কেট জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া জুমার খুৎবায় বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত জিহাদের চেয়েও মর্যাদাবান। হাদিসে এসেছে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ দিনগুলোর (জিলহজের প্রথম ১০ দিনের) আমলের তুলনায় কোনো আমলই অন্য কোনো সময় উত্তম নয় । তারা বলল : জিহাদও না ? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (বুখারি)
খতিব বলেন, জিলহজ মাসটি মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ হওয়ার অন্যতম দুটি। প্রথমটি হলো এ মাসেই হজ তথা ইয়াওমে আরাফাহ অনুষ্ঠিত হয়। হাদিসে পাকে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়াকেই হজ বলা হয়েছে। তাছাড়া কেউ যদি ৯ জিলহজ (আরাফার দিন) সন্ধ্যার আগে মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে উপস্থিত না হয় তবে তার হজ হবে না। পরবর্তী বছর আবার তাকে হজ আদায় করতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো কোরবানি। যা ইসলামের অন্যতম নির্দশন ও সুন্নাত। ফজিলতপূর্ণ এ দুইটি কাজ মর্যাদাপূর্ণ মাস রমজানেও আদায় করা সম্ভব নয়।
ঢাকা লালবাগ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন বলেছেন, হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)। জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন কোরবানি করার আগ পর্যন্ত রোজা পালনসহ যে কোনো নেকির কাজ অধিক সাওয়াব ও ফজিলতপূর্ণ। সে হিসাব ১ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত রোজা রাখা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এ দিনগুলোতে রোজা রাখতেন।’ খতিব বলেন, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা রাখা বিশেষ মর্যাদার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিনের রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার এক বছর আগের এবং এক বছর পরের সব ছোট গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম, মিশকাত)। আল্লাহ জিলহজ মাসের নেক আমলগুলো সবাইকে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।