টুইটার ডাউন: সমস্যায় কোটি ব্যবহারকারী
বিশ্বের অনেক দেশে ‘টুইটার ডাউন’। বৃহস্পতিবার সকালে টুইটার সাপোর্ট সেন্টার টুইট করে এই তথ্য জানিয়েছে।
আব্দুস সোবাহান রনি : শিশু থেকে বৃদ্ধ এমন কেউ নেই, যিনি নিজের ছবি দেখতে পছন্দ করেন না। আর আত্মতুষ্টির নতুন অনুষঙ্গের নাম সেলফি। তরুণ প্রজন্ম কথায় কথায় সেলফি তুলতে ব্যস্ত। সেলফি নিয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। সেখানে বলা হয়েছে, বেশি বেশি সেলফি যারা তোলেন, তাদের মধ্যে কিছুটা মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। নিজে নিজের ছবি তোলার এই চর্চাকে মাঝে কিছু বিজ্ঞানী এক ধরনের মেন্টাল ডিসঅর্ডার হিসেবে দাবি করলেও তা দিয়ে মানুষের সেলফি প্রীতিকে দমানো সম্ভব হয়নি; বরং সেলফি-রোগ তরুণদের অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে। সিনেমা-নাটকের তারকা থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ, এমনকি বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রনেতা পর্যন্ত সময় পেলে কিছু সেলফি তুলে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি মি মাইসেলফ অ্যান্ড মাই কিলফি শিরোনামে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বেড়ে চলছে সেলফি মৃত্যুর হার। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ার কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের দুটি কলেজের একদল গবেষক বর্তমান দুনিয়ার সেলফি প্রবণতা এবং এর ফলে যে দূর্ঘটনা ঘটছে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা পরিচালিত করেন। গবেষণায় দেখা গেছে গত সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত ২৯ মাসে ১২৭টি সেলফি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭৬টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে শুধু ভারতে, ৮টি যুক্তরাষ্ট্র এবং বাকীগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশে। দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে এছাড়াও উল্লেখ করা হয়েছে সেলফি মৃত্যু সাধারণ এখন পর্যন্ত দুইভাবে ঘটছে।
একটি এককভাবে, দ্বিতীয়টি দলগতভাবে। আর সবগুলো মৃত্যুর পিছনে রয়েছে ভয়ংকর, বিপদজ্জনক আর অনিরাপদ জায়গায় সেলফি তোলার প্রবণতা। এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় সেলফি মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশী ঘটেছে তার মধ্যে উঁচু পাহাড় এবং উঁচু ভবনের প্রান্তদেশ, পানি এবং রেলপথ উল্লেখযোগ্য। তবে গবেষকরা তাদের গবেষণায় সেলফি মৃত্যুর জন্য ৮টি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। উল্লেখিত প্রথম ৪টি বাদে বাকী ৪টি হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র, যানবাহন, বিদ্যুৎ এবং জানোয়ারের সাথে সেলফি তোলার বাসনা। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যদিও মেয়েরা সবচেয়ে বেশী সেলফি তুলতে পছন্দ করে কিন্তু ভয়ংকর জায়াগায় সেলফি তোলার ক্ষেত্রে ছেলেরাই এগিয়ে। আর বিপদজ্জনক সেলফি তুলতে গিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স আবার ২৪ বা তার আশেপাশে।
২০১৪ সালের মার্চে প্রথম সেলফি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই বছর ১৫ জন, ২০১৫ সালে ৩৯ জন এবং ২০১৬ সালের প্রথম আট মাসে ৭৩ জন সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যান। এবছর সেই সংখ্যাটা অনেকাংশেই বেড়েছে। বেশি সংখ্যায় লাইক বা কমেন্টস পেতে মানুষ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আজকাল সেলফি তোলেন। এসব অতিরিক্ত অ্যাডভেঞ্চারাস সেলফি তুলতে গিয়েই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। মনস্তত্তবিদরা ইতিমধ্যে একে ‘মানসিক রোগ’ হিসেবেও চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন। ‘কিলফি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই প্রাণঘাতি সেলফিতে আরেকটা মজার ব্যাপার হল এতেও ভারতের একনম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। করণ সেলফি মৃত্যুর সংখ্যায় ভারতের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
এখন পর্যন্ত ৭৬টি সেলফি মৃত্যু নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানে মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। কারণ নয়টি সেলফি মৃত্যু নিয়ে আপাতত এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্থান। তৃতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে সেলফি মৃত্যু হয়েছে আট জনের। ছয় সেলফি মৃত্যু নিয়ে চৃতুর্থ স্থানে আছে রাশিয়া। আর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেলফি তুলতে গিয়ে গত দুই বছরে বিশ্বে যত মানুষ মারা গেছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ভারতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।