মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস এবং তিনিই দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আজ বরিস জনসন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায় নেয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। লিজ ট্রাস হবেন যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। তিনি ১৯৭৯ সাল হতে টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তেরেসা মে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে তীব্র বিভেদ এবং টানাপড়েনের মধ্যে তাকে বিদায় নিতে হয়।
গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যখন দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন, তার পরই ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টিতে নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে শেষ পর্যন্ত এতে জয়ী হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনি ৮০ হাজার ৩২৬ ভোট পান, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক পান ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট।
কনজারভেটিভ পার্টির ভোটের ফল ঘোষণার পর লিজ ট্রাস তার প্রথম ভাষণে বলেন, ব্রিটিশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং কর কমানোর জন্য তার একটি ‘বলিষ্ঠ পরিকল্পনা’ রয়েছে।
ছাত্র জীবনের শুরুতে লিজ ট্রাস মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তিনি ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। ২০১০ সালে তিনি প্রথম দল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির পেছনের সারি থেকে যেভাবে সরকারের শীর্ষ পদে তার দ্রুত উত্থান ঘটেছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ : লিজ ট্রাস এমন এক সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যখন দেশটিতে মূদ্রাস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিরাট সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আসন্ন শীত মৌসুমে ইউরোপে জ্বালানি গ্যাসের ঘাটতির কারণে যে সঙ্কট তৈরি হবে, সেটিই নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। দায়িত্ব নেয়ার পরই লিজ ট্রাস জ্বালানির ব্যয় মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে একটি বড় সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই লিজ ট্রাসকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছে ক্রেমলিন। তাই নির্বাচিত হওয়ার পরও যে রাশিয়ার তরফ থেকে তিনি উষ্ণ অর্ভথ্যনা পাবেন না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে প্রকাশ্যে শত্রুতার মুখোমুখি হয়েছেন লিজ ট্রাস।
ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো পালাবদল আশা করছে কী না জিজ্ঞাসা করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ইতিবাচক কিছুর আশা নেই। তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমরা ইতিবাচক কিছু আশা করতে পারি। এ বছরের শুরুতে ইউক্রেন আক্রমণ বন্ধ করার প্রয়াসে যে অনেক বিদেশী রাজনীতিবিদ মস্কোতে উড়ে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে ট্রাসই রাশিয়ার নেতৃত্বকে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি বিরক্ত করতে দেখা গেছে।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে রুশ বিরোধীদের বিশ্বনেতাদের কাতারে শীর্ষে রেখেছিল রাশিয়া। লিজ ট্রাসের বেলাতেও ব্রিটেনের রুশ বিরোধী মনোভাবের নড়চড় তো হবেই না বরং আরও খারাপ হবে সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল রাশিয়া। চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেন আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে যেসব রাজনীতিবিদ মস্কোতে তাদের মধ্যে ট্রাসকেই রাশিয়ার নেতৃত্বের ব্যাপারে সবচেয়ে বিরক্ত হতে দেখা গেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সে সময় তাদের আলোচনা বধির এবং বোবা মানুষের মধ্যে কথোপকথনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
সে সময় একটি রাশিয়ান সংবাদপত্র জানিয়েছিল, ট্রাস ওই বৈঠকের সময় অসাবধানতাবশতঃ লাভরভকে বলেছিলেন যে, ব্রিটেন কখনই রাশিয়ার দুটি শহর রোস্তভ এবং ভোরোনেজের ওপর মস্কোর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেবে না।
পশ্চিমা নেতাদের বাজেভাবে তুলে ধরার উদাহরণ হিসাবে ক্রেমলিন ট্রাসের অসাবধানতাবশতঃ বলা ত্রুটিটি ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ব্রিটেন অবশ্য ওই অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্রিটেনের দাবি ট্রাস কেবল লাভরভের একটি প্রশ্ন ভুল শুনেছেন। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সংস্থা আর পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া বলেছেন, ওই ঘটনা ট্রাসের প্রতি রাশিয়ার মনোভাব তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট ইয়ার লাপিড তাকে ইসরাইলের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন। জেরুজালেম পোস্ট গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। লিজ ট্রাস ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ইয়ার লাপিড বলেন, আমার নতুন বন্ধু, ইসরাইলের সত্যিকারের বন্ধু লিজ ট্রাসকে আমি অভিনন্দন জানাই। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ‘একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি আমাদের দেশের জন্য এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা করছি। সূত্র : বিবিসি বাংলা ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।