Inqilab Logo

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘অভিবাসীদের জন্য কবরস্থান সাহারা মরুভূমি’

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৩৯ এএম

ভূমধ্যসাগরকে সবচেয়ে ভয়ংকর রুটগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে আখ্যা দেয়া হলেও ইউরোপে অভিমুখে আসার পথে বেশ কয়েকটি অভিবাসন রুট রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও তেমন আলোচিত নয়। সাহারা মরুভূমি এমনই একটি অঞ্চল। এটিকে অবৈধভাবে ইউরোপ পাড়ি দিতে চাওয়া অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় কবরস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) আঞ্চলিক প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র লুসিল মারবু।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক সহ-অর্থায়িত অভিবাসীদের সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন লুসিল মারবু।


বর্তমানে কতজন নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান করছে রেডক্রস? এমন প্রশ্নের জবাবে লুসিল বলেন, ইউরোপে আসার পথে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অভিবাসীদের জন্য রেডক্রস ‘ট্রেস দ্য ফেস’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি ডাটাবেস যা ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করতে সহায়তা করে। এটির সাহায্যে উভয়পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।

ইউরোপের বহিঃসীমান্তে এসে অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই প্লাটফর্মে ১৬,৫০০ জন ব্যক্তি ২৫,৬০০ জন অভিবাসীর সন্ধানে যুক্ত হয়েছেন। ‘ট্রেস দ্য ফেস’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একটি পরিবার তাদের পরিবারকে খুঁজে পান।

লুসিল মারবু বলেন, ‘ট্রেস দ্য ফেস’ প্লাটফর্মে নিবন্ধিতদের মধ্যে প্রচুর আফগান রয়েছে। অন্যান্য সর্বাধিক প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয়তাগুলো হল সিরীয়, ইরিত্রীয়, ইরাকি এবং সোমালি। এর বাইরে কঙ্গো এবং টিউনিশিয়ার নাগরিকরাও আছেন।

তিনি জানান, সমুদ্রে নৌকাডুবির ফলে অনেকেই ডুবে যায় যাদের পরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। অনেক সময়, পুরো নৌযানটির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। এই ক্ষেত্রে অনেকে কোনো প্রকার সাক্ষী ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়।

পাশাপাশি, এমন পরিবারও থাকতে পারে যারা তাদের প্রিয়জনের নিখোঁজ হওয়ার পর আমাদের প্লাটফর্মে যোগাযোগ করেন না। এ কারণে অনেকেই আমাদের ডাটাবেসে গণনায় আসে না। আমরা এটাও জানি যে, কিছু সীমান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক। ভূমধ্যসাগর, আটলান্টিক (ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের) বা এজিয়ান সাগর খুবই বিপজ্জনক বলে পরিচিত। তবে ঝুঁকি এসব অঞ্চলের বাইরেও ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, সাহারা মরুভূমি অজ্ঞাতনামা অভিবাসীদের জন্য একটি বিরাট কবরস্থান হিসেবে পরিচিত।

রেডক্রসের এই কর্মকর্তা জানান, অভিবাসন রুটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিখোঁজ হয় সমুদ্রে। তবে এর বাইরে ইউরোপীয় মহাদেশের বহিঃসীমান্তেও অভিবাসীরা নিখোঁজ হয়। বিশেষ করে যখন তারা বলকান রুটসহ বিভিন্ন স্থল সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। অনেক অভিবাসীরাই সীমান্তে এসে দেশে থাকা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। আবার অনেকের ফোন চুরি বা হারিয়ে যায়। অভিবাসীরা যদি তাদের আত্মীয়দের টেলিফোন নম্বর মুখস্থ না রাখে তাহলে পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে অসুবিধা হয়।

অনেক পরিবার এভাবে মাসের পর মাস তাদের সদস্যদের কোনো খবর ছাড়াই অপেক্ষায় থাকেন। সব নিখোঁজ ব্যক্তি কিন্তু মারা যায় না। কিছু অভিবাসী বেঁচে থাকেন কিন্তু আমরা তাদের খুঁজে পাই না অথবা তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি না। একই দেশে থেকেও দুই ভাইবোন বহু বছর ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার আশ্চর্যজনক ঘটনাও রেডক্রস দেখতে পেয়েছে। জার্মানিতে থাকা দুই অভিবাসী ভাই একে অপরের থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে থেকেও একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ