Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুছাতে আটকে আছে নির্দেশদাতার নাম?

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : কার নির্দেশে সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হলো তা এখনও অজানা। পুলিশ বলছে, খুনি চক্রের সদস্যদের ভাড়া করেছে কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। তাকে পাওয়া গেলে আলোচিত এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে কে তা জানা যাবে। তবে সে মুছাকেই এখন খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। মিতু হত্যাকা-ের ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। কী কারণে, কার নির্দেশে এই হত্যাকা-, তা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, ‘হত্যার পরিকল্পনাকারী’ কামরুল শিকদার ওরফে মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা যাবে, মিলবে এসব প্রশ্নের উত্তরও।
তবে মোস্টওয়ান্টেড সেই মুছা এখন কোথায় সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। মুছাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। মোটা অংকের এই পুরস্কার ঘোষণার দুই মাস পার হলেও মুছার সন্ধান মেলেনি।
তবে মুছার স্ত্রীর দাবি, অনেক আগেই তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সে পুলিশ হেফাজতে এমন দাবিও করেছেন মুছার স্বজনেরা। পুলিশ বলছে, মুছা এই মামলার প্রধান আসামী। তাকে ধরা গেলেই রহস্যের জট খুলে যাবে।
গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন মিতু। খুনিরা প্রথমে গুলি করে এবং পরে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে পুলিশ কর্মকর্তারা এই হত্যকা-ের জন্য জঙ্গিদের দায়ী করেন। ওই দিন রাত থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় জঙ্গি ধরার সাঁড়াশি অভিযান। গ্রেফতার করা হয় প্রায় বিশ হাজার মানুষকে। পরে বলা হয় এই খুনের সাথে জামায়াত-শিবির জড়িত। ধরা হয় কথিত সাবেক শিবির কর্মী আবু নসর গুন্নুকে। তবে তার স্বজনেরা দাবি করেন, হাটহাজারী মুসাবিয়া দরবারের খাদেম গুন্নু কখনো শিবির করেনি। তাদের অভিযোগ মাজারের বিরোধে ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। এরপর পাকড়াও করা হয় রবিন নামে এক যুবককে। পরে জানা যায়, সে মাদকাসক্ত।  
এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে পুলিশ এই হত্যা মামলায় ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে দুই জনকে গ্রেফতার দেখায়। তারা দু’জনেই গত ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা স্বীকার করে মুছার নেতৃত্বে হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। হত্যা মিশনে অংশ নেয়া আরও কয়েকজনের নামও প্রকাশ করে তারা। ওয়াসিম ও আনোয়ারের দাবি তারা মুছার নির্দেশে খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছে। হত্যাকা-ের ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছে মুছার বন্ধু ভোলা। খুনের পর ওই অস্ত্র দু’টি তারা ভোলার বাসায় জমা দিয়ে এসেছে।
কিন্তু মুছা কার নির্দেশে ও কেন এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি তাদের জবানবন্দিতে। জবানবন্দিতে বলা হয়, হত্যাকা-ে তারা (ওয়াসিম ও আনোয়ার) ছাড়াও মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল সিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নিয়েছেন।
তাদের মধ্যে নবী ও রাশেদ গত ৪ জুলাই রাতে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মিতুকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। অস্ত্র সরবরাহ করেন ভোলা।
হত্যাকা-ের ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় গত ২৮ জুলাই অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ভোলা ও তার সহযোগী কিন্তু ভোলা অস্ত্রগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে ও কার নির্দেশে হত্যাকা-ে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন, তা তদন্তে বের হয়নি।
স্ত্রী খুনের পর বাবুল আক্তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাড়িতে উঠেন। ওই বাড়ি থেকে বাবুলকে গত ২৪ জুন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর নানা গুঞ্জন ছড়ায়। নবী ও রাশেদ কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত ঝিমিয়ে পড়ে। এর মধ্যে অক্টোবরের শুরুতে মিতু হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো: কামরুজ্জামান বলেন, মুছাকে ধরতে পুলিশের প্রচেষ্টার শেষ নেই। পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সাত মাসে মামলার তদন্তে অগ্রগতি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মামলা তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বেশ কয়েক জন আসামীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
এদিকে স্ত্রী হত্যাকা-ের পর রহস্যজনক এক কারণে চাকরি হারা হয়েছেন বাবুল আক্তার। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে পরে শোনা যায়, তিনি তার ‘পদত্যাগ পত্র’ প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদনও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত জানা গেল তিনি আর চাকরিতে নেই। স্ত্রী খুনের রহস্যের মতোই আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি যাওয়ার ঘটনা রহস্যে ঘেরাই রয়ে গেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাবুল আক্তার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ