Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবুল আক্তারই খুনি নেপথ্যে ভারতীয় নারী

তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলায় চার্জশীট প্রস্তুত

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশজুড়ে আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু খুনিচক্রের হোতা তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তাকে প্রধান আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলার সাক্ষ্যস্মারকে সইও করেছেন। আগামি সপ্তাহে চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হতে পারে। অভিযোগপত্রে বাকি ছয় আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় নাগরিক এক মহিলার সাথে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার জেরে সংসারে অশান্তি হয়। এ অশান্তি থেকে স্ত্রীকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। এ লক্ষ্যে তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করা হয়। কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন বাবুলের একসময়কার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম ওরফে মুসা শিকদার। সঙ্গে ছিল আরও ছয়জন। ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে স্ত্রীকে খুনের পর বাবুল নিজেকে আড়াল করতে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছিলেন বলেও তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পিবিআই।
বিগত ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নির্মম খুনের শিকার হন মাহমুদা খানম মিতু। প্রকাশ্যে তাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ওইসময় পুলিশ সদর দফতরে যোগ দিতে ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম ছুটে আসেন তিনি। এরপর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ে কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত ও নানা নাটকীয়তা শেষে আদালতের আদেশের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের কাছে। কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ধরে সর্বশেষ পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে মামলাটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছেন। আর তদন্ত তদারকের দায়িত্বে ছিলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার কাজী নাইমা হাছান।
নিহত মাহমুদা খানম মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন বাবুল আক্তার।
গায়ত্রী কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকালে পরিচয় হয় বাবুল আক্তারের সাথে। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর মিতুর সম্পর্কের অবনতি হয়। এর জের ধরে বাবুল আক্তার পরিকল্পিতভাবে লোক ভাড়া করে মিতুকে খুন করেন। পিবিআই বলছে, তদন্তে মোশাররফের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলার আলামত হিসেবে উপহার পাওয়া বাবুল আক্তারের একটি বই জব্দের পর হত্যাকাণ্ডের জট খোলে। ২০১৩ সালে কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত থাকার সময় বাবুলের সঙ্গে গায়ত্রী অমর সিংয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পিবিআই জানায়, অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে বাবুলের কাছে কৈফিয়ত চান মিতু। শুরু হয় সংসারে অশান্তি, দাম্পত্য কলহ। একই বাসায় আলাদা-আলাদা কক্ষে বসবাস শুরু করেন দু’জন। এর জেরে বাবুল আক্তার সিদ্ধান্ত নেন মিতুকে খুনের। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) বাবুল আক্তার তার বিশ্বস্ত সোর্স মুসাকে ‘কিলিং মিশনের’ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুলের মাধ্যমে মুসার কাছে তিন লাখ টাকা পাঠানো হয়। সাইফুল আদালতে জবানবন্দিতে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিলিং মিশনে যারা ছিল তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেন এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া। ২০১৬ সালের ২৮ জুন পুলিশ ভোলাইয়া ও মনিরের হেফাজত থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের পিস্তলটি উদ্ধার করেছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার ফোন করে মুসাকে ‘গা ঢাকা’ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত কলরেকর্ড পিবিআই সংগ্রহ করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বাবুল আক্তারই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা। তিন লাখ টাকার চুক্তিতে লোক ভাড়া করে বাবুল আক্তার এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।
এদিকে মিতু খুনের পর মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। এরা হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, নুরুন্নবী, রাশেদ ও গুইন্যা। সাইদুল ও গুইন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাকে অভিযোগপত্রে বাদ দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।
গ্রেফতার ভোলাইয়া, ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কারাগারে আছে- বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন। ভোলাইয়া জামিনে আছেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ আছেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৬ সালের ২২ জুন ‘প্রশাসনের লোকজন’ তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। তার সন্ধান দিতে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। মিতু হত্যা মামলায় মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে মোট ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে বাবুলের বন্ধু সাইফুলও আছেন।
স্ত্রী খুনের কয়েক মাস পর ঢাকায় গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ^শুরের বাড়িতে ওঠেন বাবুল আক্তার। কিন্তু এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। ২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তারের মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- তদন্তে ঘটনার সঙ্গে বাদী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে ১২ মে মোশাররফের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে দেওয়া ভোলাইয়া, বাবুলের ঘনিষ্ঠ সাইফুল হক, গাজী আল মামুন, মোকলেসুর রহমান ইরাদ এবং আসামি মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের জবানবন্দিতে বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য আরও জোরালো হয়।



 

Show all comments
  • সংগ্রাম চলবে ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:২৭ এএম says : 0
    বনজ কুমারের সাজানো মিথ্যা মামলা।এ সরকার তো এদের
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাবুল আক্তারই খুনি নেপথ্যে ভারতীয় নারী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->