পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ট্রানজিটের জন্য কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায় ভারত। নয়াদিল্লির তরফে বলা হয়েছে, নিজের দেশ থেকে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করবে, তবে কাস্টমস ডিউটি বা অন্য কোনো শুল্ক দেবে না। শুধু প্রশাসনিক ফি দেবে। এ ছাড়া তাদের ওই দুই বন্দরে পণ্য রাখার জন্য আলাদা জায়গা দিতে হবে। বাংলাদেশী আমদানি-রফতানির কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা বন্দর দু’টি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তাও তাদের দিতে হবে। বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বরাবরে পাঠানো ভারতের ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের’ (এসওপি) এক খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে ভারতের নৌ মন্ত্রণালয়ের যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয় তার মূল বিষয় ছিল কিভাবে ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও বাংলা বন্দর ব্যবহার করা যায়। এরই প্রেক্ষাপটে গত মাসে কথিত এসওপি বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ভারত। ভারত চাচ্ছে দ্রুত এ এসওপি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেন অভিহিত করা হয় যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করা সংক্রান্ত একটি ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দ্রুতই এসওপি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভারতকে মতামত দেয়া হবে। অন্য আরেক খবরে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ‘ওপেন স্কাই’ সুবিধা চায়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে তার সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে এটিও অন্তর্ভুক্ত করার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ভারত। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্র্যাকটিক্যাল ওপেন স্কাই হয়েই আছে। তিনি এ-ও বলেছেন, এবারের আলোচনায় এভিয়েশন সেক্টরও যেন থাকে সে জন্য তারা কাজ করছেন।
ভারতের আবদারের কোনো শেষ নেই। বাংলাদেশের কাছে পূরণযোগ্য আবদার তো বটেই, অপূরণযোগ্য আবদারও সে একের পর এক জানিয়ে যাচ্ছে। আবদারের এ বহর থেকে এটা স্পষ্ট, তার কোনো আবদারই ফেলা হচ্ছে না। যা সে চাইছে, কোনোরূপ প্রশ্ন ও বিবেচনা না করেই তা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। চাওয়ার আগেই দিয়ে দেয়ার যে মনোভাব সরকার প্রদর্শন করছে তাতে তার চাওয়ার পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে। বিনা শুল্কে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার যে আবদার ভারত জানিয়েছে তাকে প্রবাদের ভাষায় বলা যায়, ‘মামা বাড়ির আবদার’। এর আগে ভারতের মালামাল ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য যে মাসুল নির্ধারণ করা হয়েছে, তাকে আসলে কোনো মাসুলই বলা যায় না। বাংলাদেশের তরফে টনপ্রতি ১০৫৮ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাব গ্রাহ্যে না নিয়ে টনপ্রতি ১৯৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি, ভারতের প্রস্তাবই মেনে নিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ভারত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মালামাল পরিবহন করতে কোনো শুল্ক বা ফি দেয়নি। মানবিক কারণ দেখিয়ে বিনা মাসুলে পণ্যাদি পরিবহন করেছে। বোধ হয়, এই সূত্র ধরেই এখন বিনাশুল্কে বন্দর ব্যবহার করতে চাইছে ভারত। প্রশ্ন হলো, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে, বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশ যদি ভারতকে তার সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য সেই একই প্রস্তাব দেয়, ভারত কি তা মেনে নেবে? আমরা নিশ্চিত, ভারত তা মানবে না। আমরা নিশ্চিত, ভারত আকাশসীমা ও বিমান বন্দর ব্যবহারে যে ওপেন স্কাই সুবিধা চাইছে, বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশকে সে সুবিধা দেবে ভারত না। ভারত যদি না দেয়, আমরা দেবো কেন? বাংলাদেশের এমন কি দায় পড়ে গেলো যে, সে নিজের নাক কেটে হলেও ভারতের যাত্রা মসৃণ করে দেবে? এর সদুত্তর পাওয়ার অধিকার অবশ্যই দেশের মানুষের রয়েছে। ভারত বা অন্য কোনো দেশকে সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার মতো অবস্থা বা সুযোগ বাংলাদেশের নেই। এ বাস্তবতাও বিবেচনার দাবি রাখে। একই কথা ওপেন স্কাই সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভারত যা কিছু চাইছে বাংলাদেশ অবলীলায় তা দিয়ে দিচ্ছে। চাইলেই দিই, সরকারের এই নীতি দেশের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা ন্যায়সঙ্গত লেনদেনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে তার দুর্ভাগ্যজনক ব্যতিক্রমই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছুই পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো অনেক কিছু পাবে। কিন্তু বাংলাদেশ কি পেলো বা পাবে? এ যাবৎ কিছু পায়নি, ভবিষ্যতেও কিছু পাবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশী পণ্যে শুলকমুক্ত সুবিধা পায়নি। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের যা কিছু চাওয়ার, তার একটাও পূরণ হয়নি। ভবিষ্যতে পূরণ হবে, এমন কোনো আলামত লক্ষ্যযোগ্য নয়। আসলে সরকারের ‘অনুসৃত’ নীতির কারণেই ভারত বাংলাদেশকে কোনো ক্ষেত্রে পাত্তা দেয় না। তার অধিকার ও দাবীর কোনো মূল্য নেই ভারতের কাছে। বন্দর ব্যবহার ও ওপেন স্কাই সুবিধা দেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটি সরকারকে গভীরভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞ মতামত এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাও আমলে নিতে হবে। সিদ্ধান্ত অবশ্যই জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।