Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কাল দেশে ফিরতে পারেন গোতাবায়া রাজাপাকসে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৫০ এএম

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। রাতের আঁধারে দেশ ছাড়ার পর প্রথমে মালদ্বীপ, সেখান থেকে সিঙ্গাপুর, পরে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি।
তবে এবার গোতাবায়া তার নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায় ফিরতে চলেছেন এবং সেটি হতে পারে শনিবারই (৩ সেপ্টেম্বর)। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই।
এর আগে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতের আঁধারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায়ই একটি সামরিক বিমানে করে গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর রাজাপাকসে এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মূলত বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে যান বলে ধারণা করা হয়।
বার্তাসংস্থা পিটিআই বলছে, গোতাবায়া রাজাপাকসে শনিবার দেশে (শ্রীলঙ্কায়) ফিরে আসবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররকে জানিয়েছে। একাধিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে গোতাবায়া রাজাপাকসের ফেরার সকল ব্যবস্থা করেছেন।
মূলত রাজাপাকসাসের নেতৃত্বাধীন দল এসএলপিপি’র অনুরোধ পাওয়ার পরই বিক্রমাসিংহে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট এসএলপিপি’র সাধারণ সম্পাদক সাগারা কারিয়াওয়াসাম বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। সেসময় তিনি আরও বলেন, বৈঠকে তারা প্রেসিডেন্টকে তার (রাজাপাকসের) প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে এবং নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছেন।
এর আগে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কা এয়ারফোর্সের একটি বিমানে মালদ্বীপে পাড়ি জমান গোতাবায়া রাজপাকসে। মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর একইদিন রাতে দেশটি ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন গোতাবায়া। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি আরোহণ করেননি।
পরে সৌদি আরবের একটি বিমানে করে মালদ্বীপ ছেড়ে গত ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া। এরপর সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি।
পরে অস্থায়ী আশ্রয়ের সন্ধানে থাইল্যান্ডে যান গোতাবায়া। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমুদউইনাই বলেছেন, রাজাপাকসে ৯০ দিন দেশে থাকতে পারেন কারণ তিনি এখনও একজন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী।
তবে রাজাপাকসেকে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে দেওয়া হবে না। তিনি সেখানকার একটি হোটেলে কার্যত বন্দি অবস্থায় রয়েছেন এবং নিরাপত্তা কর্মীরা সেটি ঘিরে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
রাজাপাকসেকে ক্ষমতা ছাড়ার পর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং ছয়বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল শ্রীলঙ্কা পোডুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) সমর্থনও ছিল বিক্রমাসিংহের।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রাথমিক এক চুক্তিতে (স্টাফ লেভেল) পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আগামী চার বছর ধরে এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে।
কলম্বোতে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের টানা ৯ দিনের আলোচনা শেষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার নতুন তহবিল-সমর্থিত কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের কাঠামো পুনর্গঠন করা।
সংস্থাটি বলেছে, ঋণের স্থায়িত্ব এবং অর্থায়নের মাঝে যে নিবিড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য পাওনাদারদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে শ্রীলঙ্কার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীলঙ্কা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ