Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত দুই পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৪:৫৫ পিএম

টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত দুই পলাতক ফেরারী আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ সিপিসি ৩ এর কোম্পানী কমান্ডার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান ও স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মোঃ এরশাদুর রহমান এক প্রেস বিফিং এর মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের আউলটিয়া গ্রামে স্ত্রী জাহারা খাতুন হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মো: শাহাদৎ হোসেন এবং সখীপুর উপজেলার এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী বাদল মিয়া।
র‌্যাব আরো জানায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর টাঙ্গাইল র‌্যাবের বিশেষ একটি দল গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে আসামীদের তথ্য সংগ্রহ করে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মো: শাহাদৎ হোসেনকে ঢাকার আশুলিয়া কাইশা বাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও অপর আসামী যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত মো: বাদল মিয়াকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকার হাজী বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের টাঙ্গাইল সদর ও সখীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০০২ সালে দন্ডিত আসামী মো: শাহাদাৎ হোসেনের সাথে সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের আউলটিয়া গ্রামের জাহারা খাতুনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ থেকে ৪ মাস পরে ১০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে শাহাদাৎ। জাহারা খাতুনের পরিবার যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় শাহাদাৎ স্ত্রীকে নির্যাতন করে। পরে ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাৎ শুশুর বাড়িতে যায়। সেখানে রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে ঘুমাতে যায়। পরের দিন ভোরে বাড়ির লোকজন ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরের দরজা খোলা দেখে সেখানে যায়। কিন্তু ঘরের ভিতরে কাউকে না পেয়ে বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুজি শুরু করে। পরে বাড়ির দক্ষিন পাশের মেহেগুনি বাগানের কাছে একটি পুকুরে জাহারা খাতুনের লাশ ভেসে থাকতে দেখে। পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। লাশের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে নিহতের ভাই ইউনুস আলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় চিকিৎসক, আইওসহ মোট ৯ জন স্বাক্ষী স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। এ মামলার আসামী শাহাদাৎ হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারী টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক বেগম খালেদা ইয়াসমিন আসামীর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন।
অপরদিকে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার একটি গ্রামের এক কলেজ ছাত্রীর সাথে ফেসবুকে টাঙ্গাইল শহরের বিবেকানন্দ কলেজের ছাত্র লাবন মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি ভিকটিম তার সর্ম্পকে চাচা দন্ডিত আসামী বাদল মিয়াকে জানালে বাদল মিয়া তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে একটি ঘরে আটক রেখে দীর্ঘ ৬ মাস ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে ভিকটিমকে সেই নির্জন কক্ষ থেকে বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘরের তালা ভেঙে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই সখিপুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ বাদলকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে আসামী আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আসামী বাদল মিয়া পলাতক হয়। পরে ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন আসামী বাদল মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একবছর সশ্রম কারাদন্ড দেন।
রাস্ট্রপক্ষে এ মামলা দুটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আলী আহমেদ ও স্পেশাল এপিপি মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ