Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাইলট নিয়োগে অনিয়ম : নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিমানের সাম্প্রতিক পাইলট নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম-বিধি লংঘন করে নিয়োগ দেয়ার এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিমান বা ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়েও সংগত প্রশ্ন উঠেছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর খবর মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৪ জন পাইলট নিয়োগ দেয়, যাদের ৮ জন ক্যাপটেন ও ৬ জন ফার্স্ট অফিসার। ৪টি ৭৭৭ বোয়িংয়ের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও এভিয়েশন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ওই নিয়োগে বিমানের ‘রুলস্ অ্যান্ড প্রসিডিয়োরে’র সরাসরি লংঘন ঘটেছে। রিপোর্ট মোতাবেক, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএ) বিমানের এমডি ও সিইও বরাবরে চিঠি দিয়ে অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে অনিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ আছে। সে বিমান রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিমানে পাইলট নিয়োগ নিয়ে এধরনের অভিযোগ অতীতে ওঠেনি। পাইলটদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেনি। বরং বিমানের পাইলটদের বরাবরই একটা সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। এবারের নিয়োগে সেটা ভুলুণ্ঠিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জোরালোভাবেই উঠেছে যে, কর্তৃপক্ষ বিমানের নিজস্ব রিসোর্স উপেক্ষা করে অন্যান্য এয়ারলাইনন্সের পাইলট নিয়োগ করেছে, যাদের অধিকাংশই বরাখাস্ত হয়েছিলেন অথবা প্রমোশন পেতে অস্বীকৃত হয়েছিলেন। দক্ষতার অভাব ছিল এর প্রধান কারণ। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করার অভিযোগ আছে। অভিযোগ এমনও রয়েছে যে, ৮ জন ক্যাপটেনের মধ্যে মাত্র ২ জনের এয়ারক্রাপ্ট চালনার অভিজ্ঞতা আছে, যা বোয়িং-৭৭৭ চালনার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। ফার্স্ট অফিসারের ৩শ’ ঘণ্টা ফ্লাই-অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। অথচ, নিয়োগ প্রাপ্ত ৬ জন ফাস্ট অফিসারের কারো এ অভিজ্ঞতা নেই। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে। রিক্রুটমেন্ট কমিটির একজন সদস্যের স্ত্রীকে ফার্স্ট অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি অযোগ্যতার অভিযোগে দুটি এয়ারলাইন্স থেকে চাকরিচুত্য হয়েছিলেন।

এসব অভিযোগ গুরুতর ও ভয়ংকর বললেও কম বলা হয়। অনভিজ্ঞ, অদক্ষ বা কম যোগ্যতাসম্পন্ন পাইলট ফ্লাইট ও যাত্রী নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বোয়িং ৭৭৭ এর যাত্রীসংখ্যা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই। শত শত যাত্রীর নিরাপত্তা নির্ভর করে পাইলটের ওপর। তার দক্ষতা-অভিজ্ঞতার ঘাটতি যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এবং তাতে প্রাণ চলে যেতে পারে ক্রুসহ যাত্রীদের। কাজেই, পাইলটের যথোপযুক্ত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। বিমান কর্তৃপক্ষ কীভাবে এমন পাইলটদের নিয়োগ দিতে পারে, যাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে এবং যাদের বেশিরভাগ বরখাস্ত হয়েছিলেন কিংবা প্রমোশন পাননি? বোয়িং ৭৭৭ বিমানের সম্পদ, জাতীয় সম্পদ। এর সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তাও বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বোয়িং ধ্বংস হলে আর্থিক ক্ষতি যাই হোক, পরবর্তীতে তা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু যাত্রী মারা গেলে তাদের কী ফিরে পাওয়া যাবে? বোয়িং দুর্ঘটনায় পতিত হলে শত শত যাত্রীই মারা যাবে না, তাদের অনেকের পরিবার বিপন্ন ও নিরালম্ব হয়ে পড়তে পারে। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। সেই জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার বিমান কর্তৃপক্ষের থাকতে পারে না। আগেই বিমানের পাইলটদের সুনাম-সুখ্যাতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা তাদের দীর্ঘদিনের অর্জন। তাদের দক্ষতা অভিজ্ঞতা-সাহসিকতার কারণে অনেক দুর্ঘটনা থেকে বিমান রক্ষা পেয়েছে, যাত্রীরা প্রাণে বেঁচেছে। এর একটি বড় কারণ হলো, পাইলট নিয়োগে স্বচ্ছতা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। এই দুটি বিষয়ে কোনো ক্রমেই ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে এটা বলতেই হবে, ফেব্রুয়ারিতে যে নিয়োগ হয়েছে, তা অত্যন্ত বাজে নিয়োগ হিসাবেই চিহ্নিত হবে। কেন এমনটি হলো, তা অনুপুংখ খুঁজে দেখতে হবে। বিমানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু অপ্রত্যাশিত ও অকাম্য ঘটনা ঘটেছে। দলীয়করণ বা দলবাজির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, অব্যবস্থাপনার কথা তো কম বেশি সবারই জানা। আর লোকসানের তো কথাই নেই। বিমান একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান। এসবের দায় সরকার ও কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। পাইলট নিয়োগের সঙ্গে যেহেতু বিমান ও যাত্রীনিরাপত্তার প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে আছে, সেই সঙ্গে বহির্বিশ্বে বিমানের সুনাম ও আস্থার বিষয়ও যুক্ত। সুতরাং প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের নিরপক্ষ তদন্ত হতে হবে। এ ব্যাপারে শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের দিতে হবে কঠোর শাস্তি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন