Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সর্তক অবস্থানে বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২২, ১:০৪ পিএম

পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনায় সর্তক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

গত জুন-জুলাই থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র করছে দেশটির সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি, (রাখাইন) আরাকান রাজ্যেও বিদ্রোহী দমনের নামে গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ, হেলিকপ্টার দিয়ে টহল জোরদার করেছে।

তবে যে কোন ধরণের শরনার্থী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমান্তে বান্দরবনের লাগোয়া সীমান্তের তানপট্রি ও হাকা রাজ্যে গত এক মাস ধরে সংঘর্ষ চলছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া খবরে এতথ্য
জানা গেছে।

সুত্রে আরো জানিয়েছে এই দুই রাজ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাতে এই গুলাগুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ ঘটনায় যাতে বাংলাদেশে কোন প্রকার শরনার্থী অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে, তার জন্য বাংলাদেশ সর্তক অবস্থানের পাশাপাশি গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ইতিমধ্যে মিয়ানমার সরকার, বাংলাদেশের আপত্তি উপেক্ষা করে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে চলেছে বলেও জানা গেছে। এদিকে সীমান্তের শুণ্যরেখায় অবস্থানরত ৪ হাজার ৬ শত রোহিঙ্গা পরিবার (শরনার্থীরা) আতংকে রয়েছেন। যে কোন মুহুর্তে বাংলাদেশে শরনার্থীর ঢল নেমে আসার শঙ্কায় রয়েছে সীমান্ত এলাকার সাধারণ জনগন৷
এসব বিষয়ে সীমান্ত নাগরিকদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গতকাল, ২৮ আগষ্ট রোববার, বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর পাড়া মসজিদের পাশে ভারী মর্টার শেল নিক্ষেপ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সর্তক অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। স্থানীয়দের খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ ও প্রদান করেছে বিজিবি।

গতকাল মর্টার শেল নিক্ষিপ্ত এলাকায় এই প্রতিবেদক সরেজমিনে যাবার চেষ্টা করলে, বিজিবি জোয়ানরা ঘটনাস্থলে যেতে বারণ করেন, নিরাপত্তার অজুহাতে।
অসমর্থিত সুত্রে জানা যায়, মিয়ানমার বিমান সেনা সীমান্ত এলাকায় হেলিকপ্টার নিয়েও বোম্বিং করছে।

এদিকে মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তে নিক্ষিপ্ত হবার কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর ও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিষয়টিকে আক্রমণ হিসেবে দেখছে না, বরং দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এ ধরনের ঘটনায় আগেও মিয়ানমারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এবারও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে"।

রোববার সন্ধ্যায় এই কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, 'গত জুন-জুলাই থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র করছে দেশটির সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে রাখাইনেও আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে। সেখানে বাকি থাকা রোহিঙ্গাদেরও এ যুদ্ধের মাঝে টেনে আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা নয় এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর মানুষসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে দেশটির সেনাবাহিনী। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে'।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মিয়ানমার তার পশ্চিমের বিভিন্ন অংশে যেভাবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা সেখানে থাকা মানুষগুলোকে রোহিঙ্গাদের মতো আশপাশের দেশগুলোতে পালাতে আবারও বাধ্য করবে। এখন সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ আশঙ্কা করছে। এ কারণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কঠোর নজরদারি করা হয়। একজন মানুষও যাতে সীমান্ত পার না হতে পারে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজিবিকে।

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের থাকা রোহিঙ্গাদেরও উৎসাহিত করেছে মিয়ানমার ছেড়ে বের হয়ে আসতে। দেখা যাবে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও এ সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত অনেক বাংলাদেশিও নিজেদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিয়ে এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে'।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে প্রায় ২৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার জল সীমা। দুই দেশের স্থল সীমান্তের প্রায় অনেক অংশই ইতিমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে প্রায় সব রোহিঙ্গা পাঠিয়ে দিয়ে সেই বেড়া মেরামতও করেছে দেশটি।

সূত্রমতে বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধ, বিভিন্ন প্রকার সীমান্ত অপরাধ দমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় শাহপরীর দ্বীপ থেকে ২৭১ কিলোমিটার রিং রোডসহ কাটাঁতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া বাংলাদেশ। রোড তৈরীর কাজ শেষ হলেও বেড়া এখনো নির্মাণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবিকে যে কোন ধরনের বহিঃআক্রমন, শরনার্থীদের ঢল সামাল দেবার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানায় সংশিষ্ট সূত্র।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ