মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পেমেন্ট ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয় রাশিয়ার শীর্ষ কিছু ব্যাংককে। এমনকি যুদ্ধ শুরুর পর এক হাজার ২০০ বহুজাতিক কম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করেছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালিয়ে যেতে দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। -রয়টার্স, নিক্কি এশিয়া, বিবিসি
চীনের লেনদেনব্যবস্থা ব্যবহার করার পাশাপাশি দেশটির মুদ্রা ইউয়ানে পেমেন্ট গ্রহণ শুরু করে। স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনে দুই দেশ চুক্তির ব্যাপারেও একমত হয়েছে। সুইফটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পেমেন্ট বেড়ে যাওয়ায় চীনের বাইরে রাশিয়া এখন ইউয়ানের তৃতীয় বৃহৎ বাজার। গত জুলাই মাসে মূল্য অনুযায়ী বৈশ্বিক ইউয়ান পেমেন্টের প্রায় ৪ শতাংশ করেছে রাশিয়ার কম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যা জুন মাসের ১.৪২ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। মস্কো এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইউয়ান-রুবল বাণিজ্য ডলার-রুবল বাণিজ্যের পরিমাণকে অতিক্রম করেছে।
এ ছাড়া ইউরো-রুবল বাণিজ্যও বেড়েছে গত জুলাই মাসে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে চাপে পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। তাই বাণিজ্য চালিয়ে যেতে দেশটির আর্থিক ও করপোরেট খাত ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসছে। এতে মস্কো ও বেইজিং আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ইউয়ান ও অন্যান্য এশীয় মুদ্রায় আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশটি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া এরই মধ্যে সুইফটের বিকল্প নিজস্ব আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে, যার নাম এসপিএফএস। বিশেষ অ্যাকউন্ট খুলেছে এখনো নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি এমন ব্যাংকগুলোতে। এর মাধ্যমে জ্বালানি তেল, গ্যাস ইত্যাদি পণ্য রপ্তানির লেনদেন করছে চীন, ভারত ও তুরস্কের সঙ্গে। পেমেন্ট নিচ্ছে ইউয়ান, রুবল ও এশীয় অন্যান্য মুদ্রায়।
এই তিন বন্ধুপ্রতিম দেশের মুদ্রা ইউয়ান, রুপি, লিরাও কিনছে নিজস্ব মুদ্রাবিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়াতে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম ডেপুটি গভর্নর আলেক্সেই জাবিকোন বলেন, ‘ইউয়ান-রুবল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তারল্য ইউরো-রুবলের তারল্যের পর্যায়ে চলে গেছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ইউয়ানের গড় দৈনিক লেনদেন ১২ গুণ বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, বৈরী দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল- গ্যাস কিনতে হলে রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ব্লুমবার্গ বলছে, রুবল গত পাঁচ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কম্পানি গ্যাজপ্রম তাদের পেমেন্টের একটি বড় অংশ নিচ্ছে ইউয়ানে। এতে বৈশ্বিক লেনদেনে শক্তিশালী হচ্ছে চীনা মুদ্রা। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যও বাড়ছে। চীনের জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী এখন রাশিয়া।
বৈশ্বিক পেমেন্টের শীর্ষ পাঁচ মুদ্রার মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন ও ইউয়ান। সুইফটের হিসাব অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত বৈশ্বিক মোট লেনদেনের ২.১৭ শতাংশ হয়েছে ইউয়ানে, যা দুই বছর আগের চেয়ে ০.৪ পয়েন্ট বেশি। এ ছাড়া বৈশ্বিক লেনদেনের ৪১.১৬ শতাংশ হয় ডলারে, ইউরোতে হয় ৩৫.৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতও চীনের মুদ্রা ইউয়ানে রাশিয়ার কাছ থেকে কয়লা কিনছে। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রাশিয়া থেকে ভারতের কয়লা আমদানি এক-পঞ্চমাংশ বেড়ে হয়েছে রেকর্ড ২.০৬ মিলিয়ন টন। এ ক্রয়ে ডলারবহির্ভূত পেমেন্টের ৩১ শতাংশ হয়েছে ইউয়ানে, ২৮ শতাংশ হংকং ডলারে। ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল দিয়ে তুরস্ক গ্যাস কিনবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। রাশিয়া থেকে আমদানি করা গ্যাসের আংশিক দাম রুবল দিয়ে মেটাবে তুরস্ক।
জাপানের কিইও ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিষয়ক অধ্যাপক মাসায়া সাকুরাগাওয়া বলেন, ‘ইতিহাসের দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন, মুদ্রার প্রাধান্যের যে প্রবণতা তা বদলে গেছে একটি বড় যুদ্ধের পর; যেমন ডলার বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্শাল প্ল্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপকে সহযোগিতা করেছে। একইভাবে যুদ্ধের পর চীনও রাশিয়াকে সহযোগিতার মাধ্যমে ইউয়ানকে শক্তিশালী করতে পারে। চীন ২০১৫ সালে নিজস্ব আন্ত সীমান্ত লেনদেন ব্যবস্থা সিআইপিএস তৈরি করে, যা সুইফটের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এ লেনদেনব্যবস্থায় গত জুন পর্যন্ত এক হাজার ৩৪১টি ব্যাংক যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের শীর্ষ ব্যাংকগুলো, ডয়চে ব্যাংক ও জেপি মরগান চেজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।