Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দুদকের ক্ষমতা-সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা-সক্ষমতা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এখনই কিছু কাজ পুলিশের আদলে পরিচালিত হচ্ছে। দুদক পুলিশের মতো পরোয়ানা ছাড়াই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করছে। মামলার অনুসন্ধান পর্যায়েও সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার করছে। ১৫৩ ধারায় তল্লাশী ও আলামত জব্দ করার ক্ষমতাও সে পেয়েছে। এখন অনুসন্ধানের সময়সীমা ৬০ দিনের স্থলে ১২০ দিন করা এবং দুদকের জন্য আলাদা ব্যারাক ও হাজতখানা নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। কিছু বিধির সংশোধন প্রয়োজন, যা প্রক্রিয়াধীন। সূত্র মতে, দুদক আইন ২০০৪ এর ২০(৩) ধারা অনুযায়ী তদন্তের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মতো ক্ষমতাবান। কিন্তু দুর্নীতির অনুসন্ধান, মামলার তদন্ত ও অন্যান্য কার্যক্রমে ওসির মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না দুদক কর্তকর্তা। এমতাবস্থায়, পুলিশের কার্যপদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুদককে ঢেলে সাজানো হবে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, দুদকের নিজস্ব কোনো হাজতখানা নেই, নেই নিজস্ব আর্মড ইউনিট। পুলিশের সমান ক্ষমতা থাকলেও কার্যক্রম পরিচালনায় দুদক কর্মকর্তাদের লজিস্টিক সাপোর্টের ঘাটতি রয়েছে। এসব দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি নিজস্ব হাজতখানা ও অস্ত্রাগার স্থাপনের জন্য আমরা অর্থ চেয়েছি। দুদককে গতিশীল করতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আরও কিছু পরিবর্তন আসছে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
‘ঢাল-তলোয়ার’ না থাকলে ‘নিধিরাম’ যত বড় সরদারই হোক, তার করার কিছু থাকে না। বিধিতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া থাকলেও কার্যত দুদককে এতদিন ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদারই করে রাখা হয়েছে। এখন তাকে যথাযথভাবে ক্ষমতায়িত করার যে প্রক্রিয়া চলছে তাকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করা যায়। দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতা ওসির সমান, অথচ দুদকের কোনো হাজতখানা নেই, মালখানা নেই, ব্যারাক নেই, অস্ত্রাগার নেই এবং প্রয়োজনীয় লোকবলও নেই। এজন্য তাকে থানা-পুলিশের সাহায্য ও সহায়তা নিতে হয়। এতে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে যে রকম অসুবিধা হওয়ার কথা সে অসুবিধায় দুদককে পড়তে হয়েছে ও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুদকের প্রধান কৌঁসুলি, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) এবং এক পরিচালক যা বলেছেন, তার সারকথা হলো: পুলিশের আদলে দুদকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধি সংশোধানের তেমন একটা প্রয়োজন নেই। কিছু সংশোধনী ও অফিস অর্ডার দিয়েই কাজ চালানো সম্ভব। দুদকের এখন প্রয়োজন লোকবল, উপকরণগত সহায়তা ও অর্থ। এগুলো হলেই দুদক পূর্ণ কার্যক্ষম হয়ে উঠতে পারে। এখন পুলিশের সহায়তা ছাড়া গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা সম্ভব নয়। দেখা গেছে, এই সহায়তা নিতে গেলে নানা বিপত্তি ঘটে, কখনো কখনো আগেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। আবার গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজনদের পুলিশের হেফাজতে তার হাজতখানাতেই রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃতদের পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করার কোনো সুযোগ থাকে না দুদক কর্মকর্তার। এছাড়া রিমান্ডের ক্ষেত্রে থানা, আদালত ও দুদক কার্যালয়ে আসামীদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে পড়ার আশংকাও থাকে। এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে দুদকের পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা নিশ্চিত ও প্রতিষ্ঠিত করার বিকল্প নেই। সঙ্গত প্রশ্ন উঠতে পারে, দুদককে প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতায় ক্ষমতাবান করা হলেই কি তার কাছ থেকে যথাযথ আচরণ ও সেবা পাওয়া যাবে? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, অতীতে দুদুকের আচরণ ও কার্যক্রম জনতুষ্টি অর্জন করতে পারেনি। দুদককে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক হয়েছে। এখনো আলোচনা-সমালোচনা মুক্ত নয় এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
একথা কে না জানে, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর জায়গায় দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়। আশা করা গিয়েছিল, দুদক তার কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে দুর্নীতি দমন ও হ্রাসে কার্যকর অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু দেশের মানুষ তার আচরণ ও কার্যক্রমে চরমভাবে হতাশ হয়েছে। দুর্নীতি তো কমেইনি বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা দুদকের ব্যর্থতাই নির্দেশ করে। আমরা দুদককে ক্ষমতাসীনদের ক্রীড়নকে পরিণত হতে দেখছি। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের আচরণ ও ভূমিকার কথা ও প্রসঙ্গ স্মরণ করা যেতে পারে। নির্বাচিত সরকারের সময় দুদক তার আগের খোলস থেকে বেরিয়ে আসবে এমন ধারণা পোষণ করা হলেও দেখা গেছে, যথাপূর্বং তথা পরং। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দুদকের গাটছড়া আরও শক্ত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ‘রাজনৈতিক মামলার ক্ষেত্রে’ দুদকের দ্বৈতাচারের কথা সবারই জানা। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করে ‘ভালো মানুষের’ সার্টিফিকেট দেয়ার কথাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। দুদকের একজন সাবেক চেয়ারম্যান দুদককে নখদন্তহীন বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এটা দুদকের অক্ষমতা ও ব্যর্থতার একটি বড় সাক্ষ্য। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, দুর্নীতি দমন ও নিরোধ যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে সেই প্রতিষ্ঠানও মুক্ত নয়। দুদকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিতÑ এ অভিযোগ বরাবরের। কিছুদিন আগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে পিয়ন-দারোয়ান থেকে উপ-পরিচালক পর্যন্ত রয়েছেন। দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান দুদককে দুর্নীতিমুক্ত ও গতিশীল করার যে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তা সাধুবাদযোগ্য। আমরা আশা করতে চাই, সংশ্লিষ্ট সকলেই তাকে সহযোগিতা দেবেন। দুদক দুর্নীতি দমন ও রোধে সক্ষম এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।








 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন