বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত বরিশালে তার নাম চোখে পড়েনা কোথাও। প্রায় নীরবেই জাতীয় কবির ৪৬তম মৃত্যু বার্ষিকী চলে যাচ্ছে শনিবার। শুধু মাত্র নজরুল স্মৃতি সংসদ বরিশাল শিল্রপকলা একাডেমিতে সন্থধার পরে একটি আরোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এমনকি এ মহাগরীতে কবির দেখা ও লেখার স্মৃতিগুলোর অস্তিতও¡ ইতোমধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। বৃটিসÑভারত যুগে কবি নজরুল দুবার বরিশালে এসে এ নগরীর অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলেন।
নজরুলের বরিশালে এখনো রূপসী বাংলার চিরয়াত কিছু রূপ চোখে পড়লেও অব্যাহত নগরায়নে এ নগরীতে কবির দেখা ঝাউ ও পাম গাছ সহ প্রকৃতির অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। এমনকি জাতীয় কবি নজরুলের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বরিশালে তার নামে একটি রাস্তারও নামকরন হয়নি আজো। দলবাজ সুশীল সমাজ ও দলদাশ বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যপারে আজ পর্যন্ত কোন দাবীও তোলেন নি।
এনগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি পাম গাছ এখনো তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। পাম গাছের সারি বিলুপ্ত হলেও সাবেক নগর পরিাষদ নতুন করে নগরীর কয়েকটি স্থানে ঝাউগাছের আবাদ করেছিল। তার কিছু মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকলেও অযতœ অবহেলায় বেশীরভাগেরই অস্তিত্বও অপসৃয়মান। নগরীর পাশে বহমান কির্তনখোলা নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, আমতলার মোড়ের স্বাধিনতা পার্ক, গোাড়াচাঁদ দাশ রোডের খৃষ্টান গোরস্থান এবং বিসিক রোডের ধারে মহাশষানের পাশে ঝাউগাছের যে বনায়ন হয়েছিল বিগত নগন পরিষদের সময়ে, এখন তার তেমন কোন যত্ন নেই। বৃটিস-ভারত যুগে কবি নজরুল বরিশালে এসে কির্তনখোলার ধারে বাঁধ রোডের পাশের ঝাউবাগান দেখে মোহিত হয়েছিলেন। তিনি তার অমর উপণ্যাস ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় কির্তনখোলা নদী ও তার পাশের বাঁধ রোডের ধারে ঝাউ বাগানের বর্ণনা দিতেও ভোলেন নি।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশযুগে অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর শের এ বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে প্রথম বরিশালে আসেন ১৯২০ সালে। বরিশালের সন্তান ফজলুল হকের সাথে সেবার তিনি বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভায় দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করেন। পরবর্তিতে ১৯৩০ সালের দিকে তিনি নোয়াখালী হয়ে আরেকবার বরিশালে এসে এনগরীর প্রকৃতিক শোভায় মোহিত হয়ে অমর উপণ্যাশ ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রকৃতিক শোভার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। কবি নাসির উদ্দিনের সম্পাদনায় ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকায় মৃত্যুক্ষুধা উপণ্যাসটি বাংলা ১৩৩৪-এর অগ্রহায়ন থেকে ’৩৬ সালের ফাল্গুন পর্যন্ত সংখ্যাগুলোতে ছাপা হয়েছিল। কবি বৃটিশ যুগে এ শহরের পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদী তীরে সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি ।
জাতীয় কবি লিখেছিলেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আছে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছেÑবোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথÑচলার মত করে। যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম, শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ীÑপরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আকাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও, বৌ কথা কও। আঁধারে চাঁদর মুড়ি দিয়ে তখনো রাত্রী অভিসারে বোরোয়নি। তখনো বুঝি তার সন্ধ্যা প্রসাধন শেষ হয়নি। শঙ্কায় হাতের আলতার শিশি সাঁঝের আকাশে গড়িয়ে পড়েছে। পায়ের চেয়ে আকাশটাই রেঙে উঠেছে বেশী। মেঘের কালো খোপায় ভূতীয়া চাঁদরে গো’ড়ে মালাটা জড়াতে গিয়ে বেঁেক গেছে। উঠোনময় তারার ফুল ছড়ানো। .....।’
নজরুলের চোখ দেখা ‘বাংলার ভেনিস’ বরিশাল’কে এখন আর খুজে পাওয়া যায়না। অপরিকল্পিত নগরায়নে জাতীয় কবির বরিশাল থেকে বেশীরভাগ খালই বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। ফলে এনগরীতে এখন আর জোয়ার-ভাটার পানি আসা যাওয়া করেনা। খাল বুজিয়ে যে সব কংক্রীটের ড্রেন নির্মিত হয়েছে, তাতে পানি চলাচলের পরিবর্তে ময়লার ভাগারে ঠাশা। ফলে এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি রাস্তাকে সয়ঢলাব করে দিচ্ছে। অপরদিকে নদী বন্দর উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত ড্রেজিং-এ কির্তনখোলার পলি আবার পাশেই নদীতে ফেলায় তলদেশ ভড়াট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এনগরী ক্রমাগত জলাবদ্ধতার কবলে। বিবেকহীন কর্মকান্ডে এ নগরী থেকে প্রকৃতির অনেক দান বিলুপ্ত হলেও তাকে রক্ষা করা সহ ফিরিয়ে আনার সময় এখনো আছে বলে মনে করছেন পরিবেশবীদগন।
কবি নজরুল ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় যে স্থানের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেটি নিঃসন্দেহে নগরীর বাঁধ রোডের ভাটার খাল থেকে স্টেডিয়ামের মধ্যবর্তি এলাকা। কির্তনখোলা নদী তীরে সে সময়ের বরিশাল শহর, আজকের মহানগরীর ঐ এলাকায় বাঁধ রেডের দুধারে তখন ঝাউ আর পাম গাছের সারি যেকোন পাষানেরও মন যুড়াত। নজরুলের দেখা বাঁধ রোডটি জাতীয় কবির নামে নাম করণের দাবী রয়েছে সাধারন মানুষের।
কিন্তু অপরিকল্পিত ও বিবেকহীন নগরায়নের ধাক্কায় গত কয়েক যুগে নগরীর বাঁধ রোডের দুধার থেকে প্রকৃতির দান বিলুপ্ত হয়েছে। এ নগরীতে কোন পাম গাছেরই অস্তিত্ব চোখে পড়েনা। বাঁধ রোডে কির্র্তনখোলা তীরের ঝাউ বাগান পুরোপুরি বিলুপ্ত হবার পরে বছর দশেক আগে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে যেসব ঝাউগাছ লাগান হয়েছিল, তা এখন মাথা উচু করে অতীত স্মৃতির জানান দিচ্ছে। এমনকি বাঁধ রেডে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে যে কয়টি পাম গাছ তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল, তাও কয়েক বছর আগে কেটে ফেলা হয়েছে কথিত নিরাপত্তার অজুহাতে। যদিও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের কোল ঘেষে বাঁধ রোডের ধারে কিছু সোনালু গাছ রঙ ছড়াচ্ছে। কিন্তু পাম গাছ আর ফিরে আসেনি। সোনালু ফুল এ নগরীর শোভা বর্ধন করলেও ঝাউ গাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীর ফজলুল হক এভেনিউ ও হাসপাতাল রোডের পাশের প্রায় সব পাম গাছও বিলুপ্ত হয়েছে গত এক দশকে। নগর ভবন বা বন অধিদপ্তরও এ নগরীকে প্রকৃতির অতীত রূপে ফিরিয়ে আনতে তেমন কোন ভ’মিকা রাখছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।