গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেড়‘শ আসনে ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের কমিশনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইভিএমে নয়, ভোট হবে সম্পূর্ণ ব্যালটে। বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশন তারা শুধুমাত্র সরকারের ইচ্ছা পালন করবার জন্যে, তাদের যে লক্ষ্য আছে সরকার গঠন করার, সেই লক্ষ্যকে চূড়ান্ত রুপ দেয়ার জন্যই ইভিএমের কথা আবারো বলেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা কখনোই জনগণ গ্রহন করবে না, আমরাও গ্রহণ করছি না। এটাকে পুরোপুরিভাবে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি বলেন, বিএনপির দাবি খুব পরিস্কার, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণের দাবির প্রতিফলিত হবে না, জনগণের যে রায় সেই রায় প্রতিফলিত হবে না। সুতরাং আমরা যেটা পরিস্কার করে বলে এসেছি যে, অবিলম্বে এই সরকারকে তাদের ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে তাদেরকে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন করে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে হবে এবং জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে একটুও আমাদের ইন্টারেস্ট নেই। তারা কি বলছে না বলছে, কি করছে-এটা আমাদের কাছে খুব আগ্রহ সৃষ্টি করে না। কারণ আমাদের মূল বিষয়টা হচ্ছে, যেটা আমরা বিশ্বাস করি সরকার যদি পরিবর্তন না হয় নির্বাচনকালীন সময়ে সেখানে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। আজকে প্রমাণিত হলো যে, এই নির্বাচন কমিশনও যে এই সরকারেরই একটা অঙ্গসংগঠন। কারণ ওরা (আওয়ামী লীগ) তিন‘শ আসনে ইভিএম চেয়েছে। আর ওরা (নির্বাচন কমিশন) এখন অফার করেছে দেড়‘শতে। একটা রফা-কম্প্রোমাইজ সরকারের সঙ্গে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমস্ত রাজৈনৈতিক দলগুলো এমনকি জাতীয় পার্টি পর্যন্ত তারা সবাই বলে এসেছিল যে, আমরা ইভিএম চাই না। কারণ ইভিএম দিয়ে জনগণের রায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে না। তারপরেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেটি করেছে। যে নির্বাচন কমিশন করা হয়েছে এটা অবৈধ নির্বাচন কমিশন। কারণ এই কমিশন গঠন করাও সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নেওয়াজ হালিমা আরলি, তাইফুল ইসলাম টিপু, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শফিকুল ইসলাম মিলন, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান মুজিব, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, সেলিম রেজা, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১টায় মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফলভাবে পালনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দিবসটি পালনে বিএনপি দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বিএনপির জন্ম আসলে একটি ঐতিহাসিক মূহুর্তে ইতিহাসের প্রয়োজনে। যখন বাংলাদেশের অন্যান্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়েছে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে তখনই এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব দেশের মানুষের সামনে একটা নতুন আশার আলো সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।তারই ধারাবাহিকতায় আজকে এই দলটি বয়স ৪৪ বছর হয়েছে। অনেক চরাই-উতরাই গেছে।”
‘‘ আপনারা দেখেছেন কিছুদিন পরেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। তার পরে আমরা দেখেছি, ৯ বছর একটা স্বৈরাচার শাসন এখানে চলেছে। আমরা দেখেছি কিভাবে অত্যন্ত ষড়যন্ত্রমূলক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে ধবংস করার চেষ্টা হয়েছে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছে। তবে আমরা দেখেছি সেই ফিনিক্স পাখির মতো বিএনপি আবার জেগে উঠেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে।তিনি তার যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তিন তিনবার এই দলকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলেন। আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের সেই নেত্রী কারা অন্তরীন হয়ে আছেন, গৃহে অন্তরীন হয়ে আছেন।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা ১২/১৩ বছর ধরে একটা ফ্যাসিবাদী সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে এদেশের মানুষের সকল আশা-আকাংখাকে ধবংস করে দিয়ে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে দিয়ে তারা জবরদখলকারী একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় বসে আছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন কোনো কাজ নেই তারা করছে না। গুম হচ্ছে যেটা আগে বাংলাদেশে কখনো আমরা দেখিনি। সেই গুমের মধ্য দিয়ে ভয় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে ৃ।”
‘‘ তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা, বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে অর্জন করা-এটা বিএনপিই শুরু করেছিলেন, শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এগুলোকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং এখন সেই পতাকা ধারণ করে আছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশ নির্মাণ করবে যে বাংলাদেশে হবে সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ হবে মুক্ত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ হবে স্বাধীন সার্বভৌম সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এই হচ্ছে বিএনপির মূল লক্ষ্য।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।