গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিবশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধর্ণা দিতে পাঠিয়েছিলেন অন্য দেশে। যাতে তার অবৈধ ক্ষমতা টিকে থাকে। আর এই ঘটনায় লজ্জাহীন আওয়ামী সরকার গোটা জাতিকেই অপমানিত করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীরা ভ- রাজনীতিবিদের আচরণ করছে। কিন্তু প্রকারন্তরে তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়েছে। সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জ¦ালানী তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সকল দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রনেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে সোমবার থেকে সারাদেশে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে গুরুতর আহত করেছে। গৌড়নদীসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের মাটিকে তারা রক্তরঞ্জিত করেছে।
তিনি বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ এখন সারাবিশ^ থেকে আসতে শুরু করেছে। মিথ্যা মামলা এবং নির্বিচারে গ্রেফতার, নজরদারী, খবরদারীর মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশকে এখন নিষ্ঠুর বন্দীশালায় পরিণত করে এর লৌহকপাটের চাবি শেখ হাসিনা নিজের আঁচলে বেঁধে রেখেছেন। গণতন্ত্র, কথা বলার স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, নাগরিকদের স্বাধীন চলাচলের স্বাধীনতাসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিপীড়ক শেখ হাসিনা। নিপীড়ক শেখ হাসিনার বুদ্ধি, বিবেচনা, আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান এবং জাতি হিসেবে কোন গৌরব নেই।
রিজভী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে থাকতে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী স্বৈরতন্ত্রের চূড়ান্ত রুপ ধারণ করেছে। রাষ্ট্রের নিপীড়ক যন্ত্রগুলোর আধিপত্যই দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর নিষ্ঠুরভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বেআইনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের নানা কর্মসূচির ওপর রক্তাক্ত আক্রমণ চালাচ্ছে। জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং আহত করে পঙ্গুত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এই নারকীয় আক্রমণের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে শাসকদলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এরা আজ লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী ইত্যাদি নামে দেশবাসীর কাছে পরিচিত। এদেরই বর্বরোচিত আক্রমণের প্রকাশ আজও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার চিত্র তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বরিশালের গৌরনদীতে আওয়ামী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও কলেজ শিক্ষক আলী শরীফ, যুবদলের সদস্য সচিব মনির মাষ্টার, সরীকল ইউনিয়ন যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, পৌর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির, আবুল হোসেন এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রোকনুজ্জামানকে লাঠি, রড ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করেছে।
জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলায় কর্মসূচি শেষ করার পর উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব, সাবেক ভিপি ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফখরুজ্জামান মতিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা কর্মসূচি চলাকালীন হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতা- কাজল, আইন উদ্দীন, সাইফুল, যুবদল নেতা স্বপন ও শ্রমিক দল নেতা মনু সহ ১৫/২০ জন নেতা কর্মীকে আহত করে।
কুমিল্লার দেবিদ্দার বাগুর বাসস্ট্যান্ডে বিএনপি’র সমাবেশ বানচাল করার জন্য আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৬ আগষ্ট যশোর জেলাধীন বেনাপোল পৌর বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বেনাপোল বাজারস্থ মিলন চেয়ারম্যান মার্কেটের ৩য় তলায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল চলাকালে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে শর্শা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মলিন, পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আক্তারুজ্জামান, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র- সভাপতি মাকসুদুর রহমান রিন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম, প্রচার সম্পাদক হাবিব; পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুজ্জামান আরিফ, বেনাপোল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি সাদিকুর রহমান আলিফ, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ সভাপতি মিজানুর রহমান ও পৌর যুবদল নেতা মোঃ মুসা সহ ২০/২৫ জন নেতাকর্মীকে আহত করে।
এছাড়াও গত ২১ আগষ্ট সন্ধ্যায় কেশবপুর বাজারে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলা চালিয়ে- জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য প্রভাষক শাহাজাহান, থানা যুবদল নেতা আবুল কালাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম, পৌর বিএনপি’র সদস্য প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ সভাপতি মোঃ বুলবুল বুলি, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির পলাশ, যুবদলে সহ সভাপতি মোঃ আলম ও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মোঃ এমদাদকে গুরুতর আহত করে।
আজ বরিশালের গৌরনদী, পটুয়াখালী, কুমিল্লার দেবীদ্বার, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং কয়েকদিন আগে যশোরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং তাদেরকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।