Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আয়নাঘরের দেওয়ালে দেওয়ালে বাঁচার আর্তনাদ! রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৮ পিএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী নিষ্ঠুর সরকার গত এক যুগের বেশী সময় ধরে শুধুমাত্র তাদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মাধ্যমে গোটা দেশে ভয়ঙ্কর এক নারকীয় পরিবেশ তৈরী করেছে। অনেককে ৯ বছর, ১০ বছর ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু ও ঢাকার কমিশনার চৌধুরী আলমসহ ৬০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। অথচ মিথ্যার পুজারী আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা বলে যে, এখানে গুম হয় না। গুম বলে কোন শব্দ নেই। তাহলে এতগুলো মানুষ গেলো কোথায়?

তিনি বলেন, সুইডেন ভিত্তিক নিউজপোর্টাল নেত্র নিউজের অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন ‘আয়নাঘর’নারকীয় এক গোপন সরকারী গুমকেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুমের শিকার বন্দীদের আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। গুমের নির্মম শিকার এই হতভাগ্যরা আপনার, আমার মতই এই সমাজের মানুষ। একদিন হুট করে মানুষ গুলো হারিয়ে যায়, আর আয়নাঘরের দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে রাখে 'বাঁচার আর্তনাদ!

রোববার (২১ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আয়নাঘর পৃথিবীর কুখ্যাত কারাগারের মতো ভয়াবহ। এই সরকারের অবসানের পরে এগুলো সব উন্মোচিত হবে, বিচারও হবে। এবং এই যুগটি ইতিহাসে গুমের যুগ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। নিপীড়ক শেখ হাসিনা আয়নাঘর তৈরী করে ক্ষমতার ময়ুর সিংহাসনে বসে আছেন। নিপীড়ক শেখ হাসিনা প্রায় তার পিতা-মাতা ভাইদের হত্যাকা-ের কথা বলতে গিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেন। তখন কি তার একবারও মনে হয় না যে, তার ডেথ স্কোয়াড প্রতিনিয়ত গুম-খুন করছে যাদের, তাদের পরিবারের কি অবস্থা! তারাও তো কেউ পিতা হারাচ্ছেন, কেউ স্বামী, ভাই বা স্বজন হারাচ্ছেন। গুম হওয়া পিতাকে ফিরে পেতে আর্তনাদ করছে সন্তানরা। আর না হয় তারা তাদের বাবার লাশটা ছুঁেয় দেখতে চায়।

তিনি বলেন, জনগণের ঘাম ঝরানো টাকায় পরিচালিত পুলিশ-র‌্যাবসহ গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো অন্যায়ভাবে ভিন্ন মতাবলম্বিদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার এ রাষ্ট্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাসী ও বিপজ্জনক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পরিণতিতে জনসমাজে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের এক ভীতিকর পরিবেশ। সরকারের সমালোচনাকারী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের সত্য উচ্চারণে নির্ভীক ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম ও বিচারবহির্র্ভূত হত্যা করে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার এক আবশ্যকীয় কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।

রিজভী বলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এদেশের সাবেক র‌্যাব প্রধানসহ সাত জন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিশেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে বেশ কিছুদিন ক্রসফায়ার বন্ধ রয়েছে। তবে গুম থেমে নেই। যা দেশের নাগরিক বিশেষ করে ভিন্নমতের মানুষের জন্য আতঙ্কজনক। সারাদেশে আয়নাঘর নিয়ে তোলপাড় চললেও বন্ধ করা হচ্ছে না বাংলাদেশী গ্যাস চেম্বার গুমঘর। বরং ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটার পর একটা ইস্যু তৈরী করছে সরকার। আমরা অবিলম্বে বন্দীশালা আয়নাঘরের রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য জাতিসংঘকে দিয়ে তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ দাবী জানাচ্ছি। এই অমানবিক আয়নাঘর নামের ডিটেনশন সেল থেকে অনতিবিলম্বে সবাইকে মুক্তি দিয়ে এই গুম চেম্বারের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বন্ধিশালা থেকে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল বলেছেন, শেখ হাসিনার আয়নাঘর গুড়িয়ে দিয়ে গণভবন উদ্ধার করা এখন সময়ের দাবী। এই দাবী বাস্তবায়ন করে গুম খুনের হোতাদের বিচার করতে রাজপথে নেমেছে দেশের মানুষ। মানবতা বিরোধী সরকারের পতন কেউ রুখতে পারবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এমনভাবে প্রকাশ্যে হাটে হাঁড়ি ভাঙার পর সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব এই সত্য ঢাকা দেয়ার জন্য মিথ্যাচার করলেও শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন তার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা নাকচ করে দিয়ে আবারো বলেছেন, আমি ভুল কিছু বলিনি। আমি জেনে শুনে বুঝে দায়িত্ব নিয়েই বলেছি। কারণ তাকে এটা নিয়ে তদবিরের দায়িত্ব শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বর ভারত যাচ্ছে ক্ষমতায় থাকার ধর্না দিতে। আব্দুল মোমেন তার পটভূমি রচনা করে এসেছেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন সে আওয়ামী লীগের কেউ না। কিন্তু তিনি সিলেট মহানগর থেকে তিনি এমপি হয়েছেন কোন দলের টিকিটে ? ওবায়দুল কাদের অনুমোদিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য কে ? কিন্তু দেশবাসী সহ আমরা সকলেই জানি তিনি এ কে আব্দুল মোমেন। তার উক্ত বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে দেননি। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি ব্যবহার করেই বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসংকোচ সত্য প্রকাশের পর দেশের জনগণের কাছে স্পস্ট হয়েছে যে, বিদেশী সরকারের মদদেই বর্তমান সরকার বিনা ভোটে জগদ্দল পাথরের মতো ক্ষমতায় বসে আছে, আগামীতেও তারা যে বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা পরিষ্কার করে বলেছেন। সরকার ১৩ বছর ভিন্ন দেশের মদদে জোর জবরদস্তি করে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় থাকার কারণেই এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট যে সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করছে। বিগত নির্বাচনের আগেও ভারতের বহুল প্রচারিত আউটলুক সাময়িকীতে শিরোনাম ছিল” হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চুড়ান্ত করছে ভারত সরকার।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি বার বার বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। বিদেশী প্রভূ। তারা দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছে। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নাই। ১৯৯১ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারীতে ঢাকায় বিশাল এক জনসভায় এই মহিয়সী নারী বলেছিলেন, আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা, অন্যদের হাতে গোলামির জিঞ্জির"। আজ প্রমানিত হলো বর্তমান সরকার প্রধান ক্ষমতার জন্য লেন্দুপ দর্জির ভূমিকা পালন করছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, একটা রাষ্ট্র কতটা অপদার্থ অক্ষম ও জনবিচ্ছিন্ন হলে অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়। এরাই বিদেশিদের পদলেহন করে ক্ষমতায় আছে আবার এরাই গলাবাজি করে বলে ক্ষমতার জন্য অন্যরা বিদেশিদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে। এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকাকে বলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে, ভারতকে বলে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে- এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ। অথচ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, খাবারের অভাবে সন্তানকে বিক্রি করতে বাজারে তুলছে মা, কন্যার স্কুলের বেতন জোগাড় করতে না পেরে আতœহত্যা করছে বাবা, লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, আর্থিক সংকটে বিদেশের ঋণ পেতে সবার দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন অর্থমন্ত্রী, ঠিক সে সময়ে এইতো কয়দিন আগে এই মোমেন সাহেব বলেছিল, দেশের মানুষ তুলনামূলক বেহেশতে আছে। জনগণের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার তদবির নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, ভারতের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকার এ হীন আকুতি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তে জড়িত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অঙ্গ বা কারও মক্কেলরাষ্ট্র নয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা নির্ভর করে দেশের জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভিপ্রায়ে নয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকার ক্ষমতায় আসবে যাবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। জনগণ চাইলে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে, আর না চাইলে না। অতীতে নির্বাচনের প্রাককালে দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করেছে জাতি। ২০১৮ সালে জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার তথাকথিত চ্যাম্পিয়ানের দাবিদার আওয়ামী লীগের আজ কি করুণ ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থা। আজ তারা জনগণকে বানিয়েছে প্রতিপক্ষ। জনগণের সাথে তাদের শত্রুতা। জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার তাঁরা স্বীকার করতে চাননা। তাই তারা বিদেশীদের কাছে দেশের সার্বভৌমত্বকে দূর্বল করে নিজেদের টিকে থাকার জন্য ভিক্ষার হাত প্রসারিত করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ