Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

| প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। কোনোভাবেই নির্দিষ্ট অর্থের মধ্যে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। আগে যে টাকায় বাজার সারতে পারত, এখন তার দ্বিগুণ টাকায়ও পারছে না। মাছ-গোশত দূরে থাক, চাল কিনলে, শাক-সবজি ও ডাল কেনার পয়সা হাতে থাকছে না। বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ খাদ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এক কেজির জায়গায় আধা কেজি, আধা কেজির জায়গায় আড়াইশ’ গ্রাম কিনে কোনো রকমে দিন গুজরান করছে। এক অসহনীয় ও অভাব-অনটনের মধ্যে পড়েছে তারা। কোনো পণ্যের দামই স্থির থাকছে না। কেবল বেড়েই চলেছে। এই দাম নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে আনার সরকারি কোনো ব্যবস্থাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে পরিদর্শক টিম নামিয়ে কিছু জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে সরকারি দায়িত্ব। ব্যবসায়ীরা রীতিমতো বেপরোয়া। তারা যথেচ্ছ দাম বাড়িয়ে লুটে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টের অর্থ। ভয়াবহ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এখন লাগামহীন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তাদের যেমন ক্রয় ক্ষমতা কমেছে, তেমনি খুচরা পর্যায়ের বিক্রিও অনেক কমেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে টানাপড়েন চলার পাশাপাশি উৎপাদকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লাভ হচ্ছে কেবল মধ্যসত্ত্বভোগী ও লুটেরা ব্যবসায়ীদের। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম কয়েক দিনে কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। এর সাথে ডাল, শাক-সবজি, তেলাপিয়া-পাঙ্গাস জাতীয় কমদামের মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে। কাঁচা মরিচের কেজি আড়াইশ’ টাকা ছুঁয়েছে। ডিম নিয়ে তো এক তুলকালাম কাণ্ড চলছে। ডজন ১৫০-১৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তবে সরকারের তরফ থেকে যেইমাত্র ডিম আমদানির কথা বলা হয়েছে, তখনই দাম কমতে শুরু করেছে। কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমদানি শুরু হওয়ায় তা কমতে শুরু করেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, গত ১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে প্রায় ৫২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কতটা বেপরোয়া। তারা দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট খালি করে দিচ্ছে। বরাবরই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তো পণ্যমূল্যের দাম বাড়াচ্ছেই, একই সঙ্গে সরকারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দেশে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা যৌক্তিকতা থাকলেও, এর নেতিবাচক প্রভাব যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হওয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়েছে। তবে যতটা বৃদ্ধির কথা, তার চেয়ে দেড়-দুইগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি যেসব পণ্যের দাম খুব একটা বাড়ার কথা নয়, সেগুলোও পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে সারের দাম বাড়িয়েছে। এতে খাদ্যের প্রধানতম খাত কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায়, অনেক কৃষকের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে অনীহা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব যে খাদ্যনিরাপত্তায় পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞরা খাদ্যের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় ইতোমধ্যে খাদ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। খাদ্য ও খাদ্যবর্হিভূত খাত মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ১৫ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন ৮.৪ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় ভালো। তবে এ মূল্যস্ফীতি ক্রমেই বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্র পড়ে। এর সাথে অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ব্যয় জড়িয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তা জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, যার ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক ও প্রধানতম উপকরণ হচ্ছে খাদ্যপণ্য। এই খাদ্যপণ্যের মূল্য যখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশের সাধারণ মানুষ এখন এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা বলতে শুধু পর্যাপ্ত খাদ্য থাকাকেই বোঝায় না, খাদ্য যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, প্রয়োজনমত কিনতে পারেÑএ বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য আছে, অথচ মানুষ কিনতে পারছে না, এ পরিস্থিতি অনেক সময় দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি করে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রধানত দায়ী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবং সরকারের যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের যে ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও সরকার নিরসন করতে পারে, যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সিন্ডিকেট ও মধ্যসত্ত্বভোগী কারা, তা খুঁজে বের করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। এদের শনাক্ত করে যদি আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি দেয়া হয়, তাহলে পণ্যমূল্য অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। সাধারণ মানুষ সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছে না। তাদের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, সরকার যেন তাদের দিকে কোনো খেয়াল বা তোয়াক্কা করছে না। সরকারের উচিৎ সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এসব মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের সমন্বয়ে যৌথ পদক্ষেপ নেয়া। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। সাধারণ মানুষ স্বস্তি ও সুবিধা পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন