Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামান্য কমেছে চাল, ডাল ও ডিমের দাম

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২২, ২:৫১ পিএম

কদিন আগে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছিল। ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, ডিমসহ সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। তবে সুখের খবর হলো, কয়েক দিনের চড়া বাজার আবার পড়তির দিকে। বাবুবাজারের মেসার্স ফরিদ রাইস এজেন্সির বিক্রয় প্রতিনিধি মোশারফ হোসেন জানান, এক সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বেড়ে যায়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তা থেমে গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবমতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সরু চালে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মোটা চালে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং মাঝারি চালে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাদামতলীর একজন চাল ব্যবসায়ী জানান, কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে এখন ১ টাকা কমানো হয়েছে। এটাকে কোনোভাবেই দাম কমানো বলা যাবে না। মিলমালিকেরা দাম না কমালে তাঁরাও কমাবেন না বলে জানান। আবার দাম কমে যাচ্ছে বলে অনেকেই চাল ঘরে তুলতে চাচ্ছেন না। চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানির দাম হঠাৎ একলাফে বেশি বাড়ার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নেয়। শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণায় দেশের মিল ও আড়তে চালের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ডাল ও ডিমের দামও কমতির দিকে। তবে খুচরা বাজারে ডাল ও চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, চার দিন আগে তিনি শেরপুরের একজন মিলমালিকের কাছে এক ট্রাক চালের জন্য ফোন করেন এবং অগ্রিম টাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই মিলমালিক বলে দেন ‘আমার এখন উৎপাদন নেই। টাকা পাঠানোর দরকার নেই।’ দুই দিনের মাথায় ওই মিলমালিক সুর পাল্টিয়ে তাঁকে ফোন করে চাল সরবরাহ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এখন দামও কেজিপ্রতি ১ টাকা কমিয়ে সরবরাহ করতে চাচ্ছেন। মালিবাগ বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, মিলমালিকেরা চাল নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ফোন করছেন। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি পর্যবেক্ষণ ছাড়া এখন আর চাল ঘরে তোলা হবে না বলে জানান।

বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজাম উদ্দিন জানান, চাল আমদানির শুল্ক আরও আগেই কমানো উচিত ছিল। তাহলে দেশে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা দেওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ কেজিপ্রতি ১ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। শুল্ক কমানোর ঘোষণায় বাজারে চালের ওপর প্রভাব পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, শুল্ক কমানোর ঘোষণায় বাজার স্থিতিশীল হবে। কিন্তু দাম কমবে না।

চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই দিন ধরে মিলে দাম কিছুটা কমানোয় তাঁরাও কেজিপ্রতি ১ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন। দুই দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৩-৭৩ টাকা। গতকাল তা ৬২-৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে ৬৩-৮০ টাকার নাজিরশাইল ৬২-৮০ টাকা, ৫৩-৫৬ টাকার লতা ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, জ্বালানির দাম বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি এ-ও বলেন, পরিবহন খরচে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা। আর চালের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪ টাকা। দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নিয়ন্ত্রণমূলক ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এরপরও ব্যবসায়ীরা ধরে নিয়েছেন চালের আমদানি বাড়বে।

ডালের বাজার : রাজধানীর পাইকারি বাজারে ডালের দাম কমতির দিকে। গত দুই দিনের ব্যবধানে ডালের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে জানিয়েছেন পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ এলাকার মেসার্স রাজ্জাক বিতানের মালিক হাজি ওমর আলী চুন্নু। তিনি বলেন, আগে প্রতি কেজি উন্নত মানের মসুর ডালের দাম ছিল ১৩০ টাকা। বর্তমানে ৫ টাকা কমে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১২০ টাকার মসুর ডাল ১১৫ টাকা এবং ১০০ টাকার বোল্ডার মসুর ডাল ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে। এ কারণে তাঁরাও দাম কমাচ্ছেন।

ডিমের দাম কমেছে : বুধবার রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। গতকাল তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আজিমপুর স্বপ্ন সুপারশপের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, বুধবার একটি ডিমের দাম ছিল ১৪ টাকা। গতকাল তা ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবমতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে শতকরা ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যা সর্বকালের রেকর্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ