Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যেসব কথা বা কাজে শিরক হয়

এসএম আরিফুল কাদের | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

১৫. কাউকে জিন, ভূত, প্রেত ইত্যাদি আছর করলে তা দূর করতে গরু, বকরী, হাঁস, মোরগ ইত্যাদি তিন রাস্তা, চৌরাস্তা, বটবৃক্ষ ইত্যাদিতে ভেঁট হিসেবে দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ যেসব শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো থেকে তারা (মুশরিকরা) এক অংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে অতঃপর নিজ ধারণা অনুসারে বলে এটা আল্লাহর এবং এটা আমাদের অংশীদারদের। অতঃপর যে অংশ তাদের অংশীদারদের, তা তো আল্লাহর দিকে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর তা তাদের উপাস্যদের দিকে পৌছে যায়। তাদের বিচার কতই না মন্দ।’ (সূরা আনআম, আয়াত ১৩৬)।

অপর আয়াতে আরো বলা হয়েছে- ‘তারা আমার দেওয়া জীবনোপকরণ থেকে তাদের জন্যে একটি অংশ নির্ধারিত করে, যাদের কোন খবরই তারা রাখে না। আল্লাহর কসম! তোমরা যে অপবাদ আরোপ করছ, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সূরা নাহল, আয়াত ৫৬)।
১৬. কোনো পীর-মুর্শিদ বা অন্য কারো নামে কোনো জন্তু মানত করা। হাদীসে এসেছে- আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, গোনাহের কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মানত করা বৈধ হবে না। (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস ১৫২৪)। আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত করা হারাম। সুষ্পষ্ট শিরকের শামিল। তাই এসব কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। জমহুর ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ফাতাওয়া উল্লেখ করা হয়- ‘আর জেনে রাখুন! যে মৃতদের প্রতি যে মানত করা হয় তা সাধারণ লোকদের মধ্যে অন্যতম এবং তাঁদের নৈকট্যে আসার জন্য শ্রদ্ধেয় ওলিদের কবরে দিরহাম, মোম, তেল এবং এর মতো যা নেওয়া হয়। এটা সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল এবং হারাম যদি না তারা তা গরীবদের জন্য ব্যয় করার ইচ্ছা করে এবং লোকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ (রুদ্দুল মুহতার, ২য় খণ্ড ৪৩৯ পৃষ্টা)।
১৭. কোনো পীর-বুযুর্গের কবর, দরগাহ বা গৃহ তাওয়াফ করা তথা চতুর্দিক ঘোরা। হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) বলেন- ‘ওলিদের কবরে সিজদা করা, কবরের তাওয়াফ করা, তাদের কাছে প্রার্থনা করা, তাদের জন্য মানত গ্রহণ করা হারাম।’ (মা-লাবুদ্দা মিনহু পৃষ্টা ৮৮)।
১৮. কারো সামনে সম্মান প্রকাশের জন্য মাথা অবনত করা।
আনাস ইবনু মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন , কোন একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা)! আমাদের কোন ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সাথে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বললেন- না। সে আবার প্রশ্ন করেন, তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বললেন- না। সে এবার বলল, তাহলে সে তার হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।
(জামে আত-তিরমিজি, হাদিস ২৭২৮)। মুহাক্কিক ফক্বীহ ও ওলামাদের মতে কারো সামনে সম্মান প্রকাশের জন্য মাথা অবনত বা কদমবুছি করা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুচিতে রুকুর হালাত এবং সিজদার হালাত হওয়া স্পষ্ট। সেই সাথে এটি বিধর্মীদের প্রতীক। তাই তা হারাম। এ উপমহাদেশে মৌলিকভাবে হিন্দুদের রুসুমটি প্রচলিত। আর কদমবুছি করতে গিয়ে রুকু বা সিজদার হালাত তৈরী হয়েই যায়। ‘ফক্বিহ আবু জাফর (রহ) বলেন, যদি সে ইবাদতের নিয়তে কর্তৃপক্ষকে সিজদা করে, সে নিয়তেও যদি তাকে না দেয়, তাহলে সে একই পদ্ধতিতে আল্লাহর সত্তাকে অস্বীকার করেছে।’ (ফাতাওয়া আলমগীরী ৫ খণ্ড ৩৬৯ পৃষ্টা )।
১৯. কারো সামনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকা। এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো, যে অহংকারবশতঃ নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে মনে করে, সবাই তার জন্য দাঁড়াক; এটা কামনা করে, এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ। ‘আবু মিজলায (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া (রা) ইবনুয যুবাইর ও ইবনে আমিরের নিকট আসলেন। ইবনে আমির দাঁড়িয়ে গেলেন, কিন্তু ইবনুয যুবাইর বসে রইলেন। মুয়াবিয়া (রা) ইবনে আমিরকে বললেন, বসো। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে লোক নিজের জন্য অন্য লোকের অপেক্ষা করাকে পছন্দ করে, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২২৯)
তাই হাদীসের আলোকে উমদাতুল কারী শরহে বোখারি গ্রন্থে এসেছে- দাঁড়ানোর চারটি দিক রয়েছে। প্রথমটি: এটি হারাম এবং যে ব্যক্তি তার কাছে দাঁড়াতে চায় তার জন্য যারা তার কাছে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে অহংকারী ও অহংকারী হওয়া।
২০. কারো নামে কোনো জন্তু জবাহ করা। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাহ করা পশু। (সূরা মায়িদা, আয়াত ৩)। হাদীসে এসেছে- ‘আবু তোফায়ল (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলী (রা)-কে বললাম, রসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে গোপনে যা জানিয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন! তিনি বললেন, মানুষের নিকট গোপন রেখেছেন এমন কিছুই তিনি আমার নিকট একান্তে বলেননি। তবে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবাহ করে আল্লাহ তাকে লানত করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৫০১৯)।
২১. কোনো পীর-বুযুর্গের প্রতি এরূপ বিশ্বাস করা যে, নিশ্চয়ই তিনি সদা-সর্বদা আমাদের সকল খবর ও অবস্থা জানেন। এটা মহান আল্লাহর গুণ। আল্লাহ তায়ালা ইরমাদ করেন- হে নবী (সা)! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন তাদের বলো, আমি তো তাদের খুব কাছেই আছি। প্রার্থনায় আমাকে যে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি, তার ডাকে সাড়া দেই। তাই আমাকে বিশ্বাস করা ও আমার ডাকে সাড়া দেয়া অর্থাৎ আমার দেয়া ধর্মবিধান অনুসরণ করা তাদের কর্তব্য। তাহলেই তারা সত্যপথে চলতে পারবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যেসব কথা বা কাজে শিরক হয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ