চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মহররম মাস হিজরি বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস। মুহররম একটি আরবি শব্দ অর্থ অলঙ্ঘনীয় পবিত্র, সম্মালিত ইত্যাদি। পবিত্র আল কুরআনে এ মাসকে শাহারুল হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মহররম মাসকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলেছেন। ইসলামের ইতিহাসে বহু গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা এ মাসে সংঘঠিত হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত এ মাসকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা। কিন্তু আমাদের দেশে মহররম মাসের আশুরাকে কেন্দ্র করে আহলে সুন্নাহ ও শিয়া নামে দ্ইুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। অথচ ইসলামের মৌলিক ইবাদত সাওম, হজ, যাকাত, কুরবানি ইত্যাদি নিয়ে কোনো মতভেদ দেখা যায় না। আশুরা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ দশ। ইসলামের পরিভায়ায় মহররম মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলে। এই আশুরাতে আদি পিতা হয়রত আদম (আ.) এর সৃষ্টি, হযরত নূহ (আ.) এর নৌযাত্রা ও প্রাবল, হযরত মুসা (আ.) এর সমুদ্রপথে রওনাসহ ইসলামের ইতিহাসে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে। আশুরার দিন রোজার অেনেক সাওয়াব রয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আশুরার দিন রোজা একসময় ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তা সুন্নত হয়ে গেছে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,‘কুরাইশরা জাহেরি যুগে আশুরার দিন রোজা রাখত। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর থেকে রোজা রাখেতেন এবং সাহাবাদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়, তখন তিনি বললেন, যার ইচ্ছে রোজা রাখ, আর যার ইচ্ছে রোজা রাখবে না। ( সহিহ মুসলিম-১১২৫) আশুরার দিনের রোযা এক বছরের কাফফারা। হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজা এ বছরে ও আগামী বছরের পাপের কাফফারা। আর আশুরার রোজা এক বছরের পাপের কাফফারা হবে।’( মুসনাদে হুমাইদি-৪৩৩) আশুরার আগের দিন বা পরের দিন মোট দুইটা রোজা রাখা রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর মদিনা এসে দেখলেন ইহুদিরা আশুরার একটি রোজা রাখে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের দুইটি রোজা রেখে ইহুদিদের বিরোধিতা করার আদেশ করেন।
কিন্তু ৬১ হিজরিতে ১০ই মহররম প্রিয় নবী (সা.) এর দৌহিত্র জান্নাতের যুবকদের সর্দার হযরত হুসাইন (রা.) সপরিবারে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর নিকট শাহাদাত বরণ করেন। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। আর এই কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিয়া সম্প্রদায় মহররম মাসে অনেক বিদআতের প্রচলন করেছেন। মহররম মাস আগমনের সাথে সাথে প্রথম দশ তারা নিরামিষের নামে আমিষে ভরপুর খাবার খাওয়া। কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাজিয়া তৈরি করে। অনেকের ধারণা এই তাজিয়াতে হযরত হোসাইন (রা.) সমাসীন হয়ে থাকে (নাউজুবিল্লাহ)। এজন্য তারা তাজিয়াকে সিজদাহ করে। হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) ঢাক, ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ব্যাপারে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। তারপরও তারা মহররম মাসে ঢাক, ঢোল ও তবলা বাজিয়ে শোক পালন করে। এছাড়া আশুরার দিন হযরত হোসাইন (রা.) কারবালার যুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুক-পিঠ চাপড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে এবং ‘হায় হোসাইন, হায় হোসাইন’ মাতম করে। যার সাথে ইসলামি শরীয়তের সামান্যতম সর্ম্পক নাই। মূলত, হযরত হোসাইন (রা.) এর বিরোধীরাই এসব বিদআত চালু করেছেন। এসব বিদাআত ও কুফুরি ঈমানকে নষ্ট করে দেয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত শরিয়ত বিরোধী এসব কাজ থেকে দূরে থাকা। প্রিয় নবী (সা.) এর সুন্নত তরিকায় মহররম মাসে আমল করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবী (সা.) এর সুন্নত তরিকায় চলার তৌফিক দান করুন এবং ইবাদতের নামে কুফুরি থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।