পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মাঃ আইয়ুব আলী বসুনিয়া, লালমনিরহাট থেকে : উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলায় নারী উদ্যোক্তা পরিচিত রয়েছে জেলাজুড়ে তার নাম উত্তমা রায় রত্না। পেশায় গৃহিণী হলেও সমন্বিত খামার তৈরি করে নারী উন্নয়নে রেখেছে এক বিরল দৃষ্টান্তর। তার সমন্বিত খামারে রয়েছে কবুতর, গবাদিপশু, রাজহাঁস ও মুরগির খামার। কবুতর পালনে পাল্টেছে শত নারীর ভাগ্যের খামার দেখে গ্রামের পর গ্রামের নারীদের পাল্টিয়েছে জীবনযাত্রার মান। তার সমন্বিত খামারে কাজ করে বেকারত্ব দূর করেছে অনেক হতদরিদ্র নারী। তারা দাঁড়িয়েছে নিজ পায়ে। লালমনিরহাটের পৌরসভার মাঝাপাড়ায় তার এ সমন্বিত খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শান্তির প্রতীক কবুতর। এ কবুতর পাল্টিয়েছে নারীর ভাগ্য। কবুতর পালন এখন লাভজনক ব্যবসা। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে কবুতরের খামার। দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে এ অঞ্চলের নারীদের জীবনযাত্রা। সরকারিভাবে নারীদের মাঝে কবুতর পালনে ঋণ ব্যবস্থা হলে পরিবর্তন হবে তাদের জীবনের। তারা থাকবে না কারো উপর নির্ভরশীল। স্বল্প ব্যয়ে কবুতর পালন করে লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে নারী খামারির সংখ্যা। ৩ হাজারের বেশি দরিদ্র নারীর সৃষ্টি হয়েছে কবুতর খামারে কর্মস্থান। এক সময় কবুতর দিয়ে করা হতো পত্র প্রেরণ। কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে সেই যুগের চিত্র। লালমনিরহাট শহরের মাঝাপাড়া গ্রামের উত্তমা রায় রত্না। ২০০০ সালে এ জেলায় প্রথম শুরু করে কবুতর পালন খামার। স্বামী অরুণ রায়-এর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে তার কবুতর খামারের যাত্রা। কবুতর পালন করে লাভের মুখ দেখছে সে। লাভজনক ব্যবসা কবুতর পালন করে পাল্টিয়েছে রত্না তার খামারের চিত্র। উত্তমা রানী রত্নার কবুতর খামার লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে কবুতর পালনের নারী খামারীর সংখ্যা। উত্তমা রায় রতœার কবুতর খামারে রয়েছে ২৮ প্রকারের কবুতর। একেক কবুতর বিক্রি হচ্ছে একেক দামে। প্রতি জোরা কবুতর ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
রতœার স্বামী অরুন রায় জানায়, খামারের কবুতর এলাকার অনেকে কিনে নিয়ে খামার তৈরি লাভ করছে। নারী খামারিরা এগিয়ে এসেছে বেশিরভাগ। রত্না তার খামার থেকে প্রতি বছর কবুতর বিক্রি করে তার নিজের জীবন নয়, পাল্টিয়েছে গ্রামের অনেক নারীর ভাগ্য। খামারে রয়েছে ২৮ জাতের কবুতর। তার মধ্যে লাক্কা, সিরাজী, অষ্ট্রএনজেল, কোটারন, এষ্ট্রাচার, টিপফ্লোয়ার জাতের বিদেশি জাতের কবুতর রয়েছে বেশি চাহিদা। এসব কবুতর ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ খামার থেকে কবুতর ক্রয় করে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় তৈরি হয়েছে ৫শ’ থেকে ৬শ’ কবুতর পালনে নারী খামারি। বড়বাড়ী এলাকার সবিতা রানী জানান, আগে আমার সংসারে ছিলো অভাব-অনটন রতœার কাছ থেকে কবুতর কিনে শুধু আমার না আমার এলাকার অনেক নারী তৈরি করেছে কবুতর খামার। এসব খামারে ৩ হাজারের অধিক বেকার দরিদ্র নারীর সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। প্রতিটি খামারে মালিকরা কবুতর পালন বিক্রি করে দেখছে লাভের মুখ। খামারে কাজ করে নারী শ্রমিকরা পাচ্ছে দিন হাজিরা দেড়শ’ টাকা। তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে নারী শ্রমিকরা। কবুতর খামারের শ্রমিক মিনতি বালা জানান, খামারে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার ভালো চলে। আমরা এখন আর স্বামীর উপর বোঝা হয়ে থাকি না। কাজ করে নিজে সংসার চালাই। শিউলি রানী জানান, হামার এলাকাত খামার হওয়ায় মহিলাগুলোর কাজ করতে বাহিরোত যাওয়া নাগে না। নিজেদের কর্মস্থান সৃষ্টি হওয়ায় নারী শ্রমিকরা নির্ভর করছে না স্বামীর উপর। এ নারী উদ্যোক্তা উত্তমা রায় শুধু কবুতর খামার না, পাশাপাশি তৈরি করেছে গবাদিপশুর খামার। তৈরি করেছে গরুর খামার। উত্তমা রায় রত্না গৃহিণী থেকে পরিশ্রম করে হয়েছেন খামার মালিক। ছড়িয়েছেন হতদরিদ্র বেকার নারীদের কর্মসংস্থান। তার গরু খামারেও কাজ করছে অনেক নারী। গরুর খামার থেকে প্রতিদিন ৪০ কেজি থকে ৫০ কেজি দুধ বিক্রি করছে। আয় করছে ভালো। দেশি-বিদেশি রয়েছে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ গরু। প্রতিটি গরু ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা মূল্য।
খামারে প্রথমে ১০টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন রত্নার খামারে রয়েছে অনেক গরু। মুরগির খামারে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার রয়েছে মুরগি। মুরগির খামার থেকে প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে লাভ হয় তার অনেক। গ্রামীণ নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনে উত্তমা রায় রত্না এক অনন্য দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছে লালমনিরহাটের মাঝাপাড়ায়। তার খামার থেকে কবুতর প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলার ৫টি উপজেলায় তৈরি হয়েছে অনেক নারী খামার। উত্তমা রায় রতœা জানান, স্বামী অরুণ রায়ের আন্তরিক সহযোগিতায় আমি কবুতর, গরু, মৎস্য, রাজহাঁস ও মুরগির সমন্বিত খামার তৈরি করে লাভের মুখ দেখছি। ইচ্ছা থাকলে নারীরা এগিয়ে যেতে পারে এটি আমার বিশ্বাস। লালমনিরহাট সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী জানান, উত্তমা রায় রতœার অদম্য ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নারী উন্নয়ন রূপকল্পের সাথে একত্রতা ঘোষণায় খামার তৈরি করে বেকার হতদরিদ্র নারীর কর্মসংস্থান যে সৃষ্টি করেছে তাকে অনুসরণ করে দেশ একদিন বেকার নারী উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাবে।
নারীদের লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতা মোঃ মকবুল হোসেন জানান, খামারিদের খামারগুলো সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে যে কোনো প্রয়োজনে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। তবে উত্তমা রায় রত্না খামার তৈরি করে অনেক নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। কোনো নারী খামার করতে চাইলে সরকারি সুবিধা দেয়া হবে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মোঃ আলাউদ্দিন জানান, খামার করতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা দেয়া হবে। নারী উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। খামারিদের দাবি সরকার ঋণ ব্যবস্থা করলে বাড়বে খামারের সৃষ্টি, হবে দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থান ও পাল্টাবে দরিদ্র নারীদের জীবনযাত্রার মান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।