পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে উপদেশ দিয়ে আদালত অবমাননা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচ কমিশনার আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা চেয়েছেন। গত শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদসহ অন্যান্য কমিশনার এবং একজন সিনিয়র সহকারী কর্মকর্তা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে হাজির হয়ে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল স্বীকার করে’ নিঃশর্ত ক্ষমার এফিডেভিট দাখিল করেছে। এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি দৈনিককে বলেছেন, ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ঢাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে অনেক অভিযোগ। এসব অনিয়মের নিষ্পত্তি না করে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি নির্বাচন কমিশন। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে তাদের আর সাংবিধানিক পদে থাকার অধিকার নেই। তাদের উচিত পদত্যাগ করা। সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সবাই আদালতে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। এতেই বোঝা যায় তারা দায়িত্ব এড়িয়ে চলছিলেন। হাইকোর্ট বলেছিলেন, অভিযোগের নিষ্পত্তি না করে প্রার্থীদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি আধা ফৌজদারি অপরাধ করেছে। এবিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, তখন ইউপি নির্বাচন চলছিল। তাড়াহুড়োর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশের সঠিক বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। উল্টো ভুল করে প্রার্থীদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এতেই আদালত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এবিষয়ে শিগগিরই পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ব্যাপক সহিংসতা, প্রাণহানি ও অনিয়মের মধ্যদিয়ে গত ২২ মার্চ ৭১২টি এবং ৩১ মার্চ ৬৩৯টি ইউপিতে প্রথম দুই পর্বের ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে বেশকিছু এলাকায় নির্বাচনী অনিয়ম সম্পর্কে কমিশনের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। চাঁদপুরে হাইমচর, চট্টগ্রামের সীতাকু-সহ আরো অনেক জায়গায় ভোটের দিন নির্বাচনী অনিয়মের খবর কমিশন যথাসময়ে পেয়েছিল। সাচিবিক কাজে বিলম্বের কারণে তারা অবৈধ ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারেনি। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজারের বেশি আবেদন পেশ করেছিল। কমিশন এসব অবেদন আমলে নেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হাইকোর্টে রীট করেছিলেন। হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। কমিশন হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ২৩ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীকে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। যে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠেছে সে নির্বাচনের মারাত্মক অনিয়ম নিয়ে তখনও পত্র-পত্রিকা-মিডিয়ায় ব্যাপক খবরাদি প্রকাশিত হয়েছে। মারামারি খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে। বহুপ্রার্থীকে নির্বাচনী কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। তৃণমূলে সরকারের কোন কোন মহলের ক্ষমতার প্রভাবে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। ব্যাপারটি যে একমাত্র তখনই ঘটেছিল সে কথা বলা যাবে না বরং ২০১৪ সালে এই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে প্রহসন করেছিল এটা ছিল তারই ধারাবাহিকতা। কার্যত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় অযোগ্যতার বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সকলে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যদিয়ে কার্যত নিজেদের উপর সংবিধান অর্পিত দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার দায়ই স্বীকার করে নিল। এই ক্ষমা প্রার্থনা কমিশনের গত পাঁচ বছরের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের অন্যান্য ব্যর্থতাকেও স্বীকার করে নেয়ার শামিল। এইক্ষমা প্রার্থনা প্রমাণ করেছে, সার্বিক বিচারে মানুষের ভোটাধিকার এবং এটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে তারা গৌরবজনক করার পরিবর্তে কতটা হেয়প্রতিপন্ন করেছে। ফলে নিজ নিজ পদে বহাল থাকার ভিত্তিও তারা হারিয়ে ফেলেছেন। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা প্রকৃত বিবেচনায় তাদের নিয়োগের এবং যোগ্যতার যৌক্তিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্যই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এটি সাংবিধানিক পদ। নিয়োগের পর তাদের পদত্যাগ ছাড়া অপসারণের কোন ব্যবস্থা নেই। এতটা দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের ব্যর্থতা কোন বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ক্ষমার অযোগ্য। মান-সম্মানবোধ থাকলে হয়ত ক্ষমা প্রার্থনার পূর্বেই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতেন। তাদের সময়ও আর খুব একটা নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আলোচ্য ব্যর্থতা নজিরবিহীন। বর্তমানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে দাবি সকলমহল থেকে উঠেছে সেখানেই প্রকৃতপক্ষে দক্ষ যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান কমিশনে এই লজ্জাজনক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে আগামীতে যাতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং দায়িত্বশীল নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলে নজর দিবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।