পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সারাদেশে শহর-বন্দরের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হিজড়াদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ। এবার খোদ রাজধানীতে হিজড়াদের বেপরোয়া নির্মম আচরণের শিকার হয়ে পা হারাতে বসেছে এক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজন মিয়া ঢাকার সরকারী কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গত বছর ধানমন্ডির একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিল। পরিবারের স্বপ্ন ছিল সুজন সফল ক্রিকেটার হয়ে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু হিজড়াদের নির্মমতার শিকার হয়ে পরিবারের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত সোমবার গ্রামের বাড়ি থেকে বাসে পুরনো ঢাকায় যাওয়ার পথে খামারবাড়ি এলাকায় কয়েকজন হিজড়া বাসে উঠে যাত্রীদের কাছে চাঁদাবাজি করার সময় সুজন তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করে এবং তাদের অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করায় হিজড়ারা তাকে বাস থেকে নিচে ফেলে দিলে পিছন থেকে আসা আরেকটি বাস তার ডান পা গুঁড়িয়ে দেয়। সুজন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সে আর কখনো ক্রিকেট খেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে গভীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমাবিশ্বে যখন লেসবিয়ান গে ম্যারেজ ও অধিকার নিয়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, তখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিজড়াদের মানবিক অধিকারের প্রশ্নে খুবই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। অথচ তারা তাদের শারীরিক অপূর্ণাঙ্গতার জন্য সাধারণ মানুষের উপর জেদ ঢালতেই যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। দেশে হিজড়াদের সংখ্যা যেমন দিন দিন বাড়ছে, একই সঙ্গে তাদের উৎপাত ও চাঁদাবাজির বিড়ম্বনাও বেড়ে চলেছে। এক সময় কিছু সংখ্যক এনজিও হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করলেও বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব এনজিও কার্যক্রম হিজড়াদের কর্মসংস্থান ও সামাজিকীকরণে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। পত্র-পত্রিকায় প্রায়শ হিজড়াদের তা-ব, চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। হাট-বাজার ও রাস্তার দোকানে হিজড়াদের চাঁদাবাজি অতি সাধারণ ঘটনা। দোকানি ও ব্যবসায়ীরা এদের নিয়মিত চাঁদা দিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো হিজড়া গ্রুপগুলোর সীমালঙ্ঘন ও মাত্রাতিরিক্ত চাঁদা দাবির ঘটনায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে থাকে। বিশেষত, কোন বাড়িতে নবজাতকের জন্ম হলে এবং বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানাদিতে হিজড়াদের হানা দেয়ার ঘটনা সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাস্তায় ও গণপরিবহনের যাত্রীদেরকেও হিজড়াদের চাঁদাবাজি, ও অভব্য আচরণে নাজেহাল হতে হচ্ছে। হিজড়াদের চাঁদাবাজিসহ সহনীয় পর্যায়ের বাড়াবাড়ি মানুষ মেনে নিলেও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকা- মেনে নেয়া যায় না।
সুজনের পা হারানোর মত আরো অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নজির সৃষ্টি করেছে হিজড়ারা। দাবিকৃত টাকার চেয়ে কম চাঁদা দেয়ার অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নিজ বাড়িতে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল সন্ত্রাসী হিজড়ারা। সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজিসহ নানামাত্রিক অপরাধমূলক কর্মকা-ের কারণে হিজড়া সম্প্রদায়ের একটি অংশ হিজড়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও এদের পেশাদার সন্ত্রাসী-অপরাধীদের মত আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। অপরাধ জগতের কোন কোন সিন্ডিকেট বাংলাদেশ থেকে সাধারণ পুরুষদের অপহরণ করে ভারতে নিয়ে লিঙ্গ কেটে হিজড়া বানায় বলেও অভিযোগও আছে। এ নিয়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে একটি হিজড়া সংগঠনের সদস্যরা ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে সে সব অপরাধী হিজড়া ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শাস্তি দাবি করে। হিজড়াদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যেমন পুলিশের তেমন কোন বিশেষ গাইডলাইন নেই। একইভাবে হিজড়াদের সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সকলের সহৃদয় ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি যেমন আমাদের মানবিক দায়, ঠিক একইভাবে সংঘবদ্ধ হিজড়াদের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। রাস্তায় বা গণপরিবহনে নিরীহ পথচারী ও যাত্রীসাধারণ হিজড়াদের হাতে হেনস্থা হওয়ার সময় সাধারণত নীরব থাকে। তাদের এ ভূমিকার কারণেই তারা প্রকাশ্য সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির সাহস পায়। প্রকৃত হিজড়াদের চাকুরী ও পুনর্বাসনে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে নকল, সিন্ডিকেটেড অপরাধী হিজড়াদের দৌরাত্ম্য ও যথেচ্ছ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।