পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তা আজও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শহর থেকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে। দেশে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। অবশ্য মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কতটা বেড়েছে, এটি বলা বেশ দুষ্কর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে ছাত্রসংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগত মানের ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এদিকে নতুন করে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মোট ২ হাজার ৭১৬ বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২ হাজার ৫১টি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আর কারিগরি ও মাদরাসা পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে ৬৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় নতুন ২ হাজার ৫১টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২২টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১০৯টি এবং ডিগ্রি কলেজ ১৮টি।
কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাভুক্ত ৬৬৫টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এসএসসি ভোকেশনাল অথবা দাখিল ভোকেশনাল ৯৭টি, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ২০০টি, ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার দুটি, দাখিল মাদরাসা ২৬৪টি, আলিম মাদরাসা ৮৫টি, ফাজিল মাদরাসা ৬টি এবং কামিল মাদরাসা ১১টি। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার আগে কর্মরত শিক্ষকদের যোগ্যতা ও মেধা কিভাবে যাচাই বাছাই করা হয়েছে বা আদৌ করা হয়েছে কিনা অনেকেরই জানা নেই। এসব প্রতিষ্ঠান মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে কতটা ভূমিকা রাখছে তা সময়ই বলে দেবে।
ওদিকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী অর্জন করে দেশে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান না পেয়ে বা সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উন্নত জীবনের আশায় প্রবাসে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলছে। উন্নত জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য তারা নির্দ্বিধায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এতে করে দেশে মেধাহীন সমাজ তৈরি হচ্ছে। অথচ, আমাদের দেশের মেধাবীরা দেশে উন্নত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ না পেয়ে বিদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে বহিঃবিশ্বে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আমরা তাদের জন্য যোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছি, তাদেরকে তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারিনি।
যে কথা বলছিলাম, স্বাধীন বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে অনেক মেধাহীন, ক্ষেত্র বিশেষে অযোগ্য ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। বলতে দ্বিধা নেই, একজন শিক্ষক যোগদান করার পর থেকে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত তিনি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। মেধাহীন শিক্ষক কোনভাবেই মেধাবী জনগোষ্ঠী তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে সরকারি পলিসির কারণে বহু বেসরকারি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে এমন শিক্ষকও ছিলেন, যারা ক্লাসরুমে মান সম্মত শিক্ষাপ্রদানে অক্ষম। অনেকের আবার মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের ন্যূনতম যোগ্যতা ও মেধা আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। মূলত তাদের অনেকেই প্রতিযোগিতামূলক কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন নাই। তাদের অনেকেই নিয়োগ পেয়েছিলেন গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির অনুকম্পায়। এক্ষেত্রে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগও রয়েছে।
শিক্ষার গুণগত মানের নিম্নমুখীধারা দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা কিছুদিন আগেও গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির ওপর ন্যস্ত ছিলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা তাদের মনোনীত আত্মীয়-স্বজনরাই ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনীত এমন ব্যক্তিরা শিক্ষার উন্নয়নে যতটা না আগ্রহী তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি আগ্রহী ছিলেন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সীমাহীন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবার প্রতি।
গত দুই দশকে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের নামে অনেক ক্ষেত্রে মেধাহীন ও অযোগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীর মেধাকে অবজ্ঞা করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দলীয় বিবেচনায় এমন ব্যক্তিকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যাদের শিক্ষক হবার ন্যূনতম যোগ্যতাও ছিলো না। কখনও বা মেয়ে জামাইকে, কখনও নিজের অযোগ্য ছেলে-মেয়েকে আবার কখনও কখনও দলীয় বিবেচনায় মেধাহীনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কখনও আবার মেধার তোয়াক্কা না করে বউ, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েকেও ভিসি সাহেবরা শিক্ষক বানাতে গিয়ে জাতির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মানকে ধুলিৎসাত করে দিয়েছেন।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা বাতিলের দাবিতে দেশে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে রক্ত ঝরেছে, মিছিল মিটিং হয়েছে, সভা সমাবেশ হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন দেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। একপর্যায়ে সরকার কোটাপ্রথা বাতিল করেছিল। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা এখনও চালু রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান মহিলা কোটার কারণে অনেক মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষ ব্যাক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন না, তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী ও কমযোগ্যতাসম্পন্ন মহিলা প্রার্থী কোটার সুবিধা গ্রহণ করে সহজেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এতে করে শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) এর নিয়োগ পরীক্ষায় একজন পুরুষপ্রার্থী ৬০% পার্সেন্ট বা ৭০% পার্সেন্ট মার্কস পেয়েও নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন না। কিন্তু একজন মহিলা চাকুরি প্রার্থী তুলনামূলক কম মার্কস পেয়েও বা অনেক কম মেধা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কোটার কারণে সহজেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে যোগ্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে মহিলাপ্রার্থী তুলনামূলক অনেক কম মার্কস পেয়ে কোটার সুবিধায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হলেন শ্রেণীকক্ষে তার পাঠদানের সক্ষমতা কোনভাবেই যে পুরুষ প্রার্থী উল্লেখযোগ্য মার্কস পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি তার সমকক্ষ হতে পারেন না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অচিরেই কোটাপ্রথা বাতিল করা জরুরি। লিঙ্গ বৈষম্য নয় বরং যোগ্য লোক মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হোক, সেটাই প্রত্যাশিত। অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাহীন শিক্ষকে ভরে যাবে।
শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি। এখনও অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ কিছুকিছু নিয়োগের ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির হাতে ন্যস্ত রয়েছে। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনায়ন, দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ এবং যোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রধান/শিক্ষক নিয়োগে ম্যানেজিং কমিটির সকল নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত বিদ্যমান ক্ষমতা রহিতকরে পিএসসি’র আদলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ কমিশন গঠন করে সকল নিয়োগের দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত করা গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। মনে রাখতে হবে, একমাত্র যোগ্য শিক্ষকই পারে মেধাসম্পন্ন একটি জাতি গঠন করতে। শিক্ষক নিয়োগে মহিলা কোটাসহ সকল প্রকার কোটা প্রথা বাতিল করে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভবপর হবে না।
কিছুদিন আগ পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সর্বময় ক্ষমতা গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির ওপর ন্যস্ত ছিলো। নিয়োগ প্রদানে তারাই ছিলো সর্বেসর্বা। অথচ গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার বালাই ছিল না। যদিও বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রী পাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত মার্জিত এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি গভর্নিং বডির সদস্য হবেন। শিক্ষানুরাগী প্রতিটি মানুষ এটা প্রত্যাশা করে। গভর্নিং বডির সভাপতিসহ সকল সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তারা শিক্ষা উন্নয়নের চেয়ে নিয়োগ, শিক্ষক হয়রানি, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করার মতো অনৈতিক কাজে বেশি মনোযোগী হবেন। কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ কোনোভাবেই শিক্ষা উন্নয়নের পরিবর্তে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আখের গোছানোর জন্য তিনি কাজ করবেন না। এই বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা সঠিকভাবে তদারকি করবেন বলে আশা করতে চাই। কোনভাবেই মামলার আসামি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তি যেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে না আসতে পারেন তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করতে হবে।
অতিসম্প্রতি বেশ কয়েকটি জেলায় শিক্ষকরা গভর্নিং বডি বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, একটি দেশের যদি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু যদি সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মানসম্মত হয় তাহলে একদিন না একদিন সেই জাতি অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। কিন্তু যদি সব ঠিক থাকে আর শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সে দেশ আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এই চিরন্তন সত্য কথাটি মাথায় রেখে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে মনোনিবেশ করতে হবে। মেধার সাথে কোনো আপোস নয়, বরং শিক্ষক নিয়োগে সর্বাবস্থায় মেধা ও যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচুর ধনসম্পদ রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের ধনসম্পদের সঠিক ব্যবহার বা তদারকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই হচ্ছেনা। গভর্নিং বডির সভাপতি বা ক্ষেত্রে বিশেষে অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ন অধ্যক্ষরা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করছেন, সম্পদ নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্যয় করছেন। ধনসম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গভর্নিং বডি এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো তৎপর হতে হবে।
আগেই বলেছি, দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানের ক্রমাবনতি হয়েছে, যা দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ, মেধার পরিবর্তে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগই এমন ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এছাড়া গবেষণা খাতে অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি আজ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। সম্প্রতি টিআইবি ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা কার্যপরিচালনা করেছে। তার গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে অশিক্ষিত মানুষ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকদের সঙ্গে কমিটির সমস্যা ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, শিক্ষার গুণগতমানের ক্রমাবনতি ঠেকাতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক বিবেচনা নয়, বরং মেধা ও যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই দেশের শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঠেকানো সম্ভবপর হবে।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের, আইবিএ’র প্রফেসর।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।