পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সম্রাট শাসিত রাজকীয় রাষ্ট্র জাপানের সাংস্কৃতিক নগর হিরোশিমা। নগরের জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৮-১৫ মিনিটে ১৫.০২ কিলোটন টিএনটি’র ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমাটি বি-২৯ যুদ্ধ বিমান থেকে হিরোশিমা নগরে নিক্ষেপ করা হয়। তেজষ্ক্রিয়ায় তৎক্ষণাৎ নিহত হয় ৬৬ হাজার এবং আহত হয় ৭০ হাজার মানুষ। বোমা বিস্ফোরণের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৮ কি.মি. ব্যাসার্ধের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বছরের শেষ নাগাদ হিরোশিমায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার।
দ্বিতীয় বেসামরিক নগর নাগাসাকি। জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৭০ হাজার। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট স্থানীয় সময় ভোর ৩-৪৭ মিনিটে ৬.৫ টন টিএনটি শক্তির ‘ফ্যাটম্যান’ নামের দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটি বি-২৯ যুদ্ধ বিমান থেকে ঘুমন্ত নাগাসাকি নগরে নিক্ষেপ করা হয়। তেজষ্ক্রিয়ায় তৎক্ষণাৎ নিহত হয় ৭৩ হাজার ৮৮৫ এবং আহত হয় ৭৪ হাজার ৯০৯ জন মানুষ। বোমা দু’টো বিস্ফোরণের পর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার ডিগ্রী উঠে যাওয়ায় নগর দু’টো পরিণত হয় তাপচুল্লীতে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে দু’টো নগর পরিণত হয় মানব সৃষ্ট দুই দোজখে। বোমা বিস্ফোরণের কেন্দ্র থেকে ৬.৭ মিলিয়ন বর্গমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বছর শেষে নাগাসাকির নিহতের সংখ্যা পৌঁছে ১ লক্ষ ৫০ হাজারে। ফলে দুই নগরের নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার। বোমা বিস্ফোরণের কেন্দ্র থেকে বৃত্তাকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তাপরশ্মি আঘাত হানলে দু’টি নগরের স্থাপনাসমূহ এবং ঘরবাড়িগুলো ভস্মীভূত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর সকাল ৭-৫৫ মিনিটে হাওয়াই দ্বীপের হনুলুলুতে অবস্থিত মার্কিন নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবারে আক্রমণ করে জাপান। ২৭৫ মাইল উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগরে এডমিরাল নাগুমোর নেতৃত্বে অবস্থান নেয়া ৬টি বিমানবাহী রণতরী থেকে উড়ে জাপান রাজকীয় বিমান বাহিনীর ৩৬০টি ফাইটার ও বম্বার বিমান এসে বিনা প্রতিরোধে দুই ঘণ্টা আক্রমণ চালিয়ে শক্তিশালী নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবার ধ্বংস করে এবং এরিজোনা, ওকলাহোমা, ভার্জিনিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া নামের চারটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এই ঘটনার পরদিন ৮ ডিসেম্বর জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংলিন ডিলানো রুজভেল্ট। জার্মানীর পর জাপান আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি যখন নিচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পার্ল হারবার ধ্বংসের প্রতিশোধ নেয়াসহ জাপানের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিশ^বাসীর সামনে সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের হুকুমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দু’টো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে মানবতার চরম বিপর্যয় ঘটায়। হিরোশিমা ও নাগাসাকি সভ্যতার ইতিহাসের চরম ট্র্যাজেডির দুই বেদনাদায়ক নিদর্শন। দুই নগরের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করার পরও যুদ্ধ শেষে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করে বিশে^র মোড়ল রাষ্ট্রগুলো।
দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত জানা মতে, মাত্র ৮টি রাষ্ট্র পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে। এই রাষ্ট্রগুলোর উৎপাদিত ও মজুদ করা বোমার সংখ্যা ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিটি বোমা লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান থেকে কয়েকশ’ গুণ অধিক শক্তিশালী। এক সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটালে এই সকল বিধ্বংসী বোমা পৃথিবী নামের এই গ্রহটিকে কয়েক দফা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে সক্ষম। জাপানের দুই নগরে নিহত লক্ষাধিক নিরীহ মানুষের আত্মা প্রতি বছর এই দুইটি দিনে আর্তনাদ করে এবং বিশে^র দানব চরিত্রের মোড়লদের মানবতা বিরোধী যুদ্ধ পরিহার করে শান্তির পথে চলতে নিঃশব্দে আকুতি জানায়।
ইতিহাস বলছে, আধিপত্যের যুদ্ধ কখনো স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক নয়। পরবর্তীতে পরাজিতকে প্রতিশোধ যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। ঠান্ডা মাথায় প্রতিশোধ স্পৃহায় ঘটানো হিরোশিমা ও নাগাসাকির গণহত্যা ও ধ্বংস যজ্ঞ স্মরণ করলে বিশ^বাসী আজো আতংকিত ও বেদনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মানব সভ্যতাকে রক্ষা করাসহ বিশে^ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যুদ্ধ পরিহারের বিকল্প নেই এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে মজুদ থাকা পারমাণবিক বোমাগুলোকে ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে হবে। সেই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন করার প্রতিযোগিতার প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ^ গড়তে শান্তিকামী জনগণ যদি ব্যর্থ হয় তাহলে শক্তিধর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের উন্মাদনার কারণে ভবিষ্যতে এই পৃথিবী প্রাণীশূন্য এক বিরান গ্রহে পরিণত হবে।
লেখক: স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।