পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি বাসে একদল ডাকাত যাত্রীদের মারধর ও হাত-পা বেঁধে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। শুধু ডাকাতি করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিবাদ করায় দুই নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এক নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সেই ভয়াবহ, নির্মম ও মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ দেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাসটিতে যাত্রী ছিলেন নারী-শিশুসহ বয়স্করা। গভীর রাতে বাসটি রাস্তায় বারবার থামিয়ে যাত্রী উঠায়। ডাকাত দলের সদস্যরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বাসটিতে উঠে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়ায় এসে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ১০-১২ জনের ডাকাত দল। পুরুষদের বেঁধে লুটপাট চালায়। এ সময় এক নারী প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাসের মধ্যে চলে নারকীয় তাণ্ডব। ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগে রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার তথ্য মোতাবেক বাকিদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবরই অত্যন্ত নাজুক। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। শঙ্কা নিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। পরিবহনের অভ্যন্তরের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের সংশয়ে থাকতে হচ্ছে। নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা কাজ করছে। হাইওয়েতে বাস তো বটেই, প্রায়ই মালবাহী পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কোটি কোটি টাকার মাল নিয়ে ডাকাতরা উধাও হয়ে যায়। সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী হয়রানি ও ডাকাতির সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। মাঝে মাঝে ভয়াবহ ঘটনা ঘটলেই কেবল তা সংবাদ শিরোনাম হয়। অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ের একশ্রেণীর পুলিশের সাথে ডাকাতদের যোগসাজস রয়েছে। কোথায় ও কোন এলাকায় কারা ডাকাতি করে, তা পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। জানা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। উল্লেখিত ঘটনায় পুলিশ দ্রুতই অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকিরা কে কোন এলাকার তা শনাক্ত করেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পুলিশ তৎপর হলে অপরাধীরা পার পেতে পারে না। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ডাকাত দল সক্রিয় এবং ওঁৎ পেতে থাকলেও কিংবা চিহ্নিত হলেও ডাকাতির আগে তাদের ধরা হয় না। ডাকাতির পর কেউ অভিযোগ করলেও তা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বাসে ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কয়েক বছর আগে সাভারে এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়। নারায়ণগঞ্জেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপার জড়িত ছিল। কয়েক মাস আগে রামপুরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করে বাসের কন্ডাক্টর। সর্বশেষ টাঙ্গাইলে ডাকাত দল এক নারীকে গণধর্ষণ করেছে। ধারাবাহিকভাবেই এসব ঘটনা ঘটে চলেছে। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে অস্বাভাবিক ও কুৎসিৎ কোনো ঘটনা আলোচিত হলে দেখা যায়, তার পুনরাবৃত্তি হয়। এটা একশ্রেণীর বিকৃত মানসিকতার মানুষকে উসকে দেয়। উল্লেখিত ধর্ষণ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে কিনা জানা নেই। তাদের দ্রুত শাস্তি হলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যেমন ঘটত, তেমনি যাত্রীরাও আশ্বস্ত হতো। কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত না থাকায় তা বারবার ঘটছে। এক্ষেত্রে পুলিশের দায় রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে শৈথিল্য রয়েছে। অথচ বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা এবং গুলি করতে তারা খুবই তৎপর। এক্ষেত্রে তাদের বলা লাগে না। নিজেরাই অতি উৎসাহী হয়ে উঠে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে তাদের তেমন কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। এক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ ব্যর্থতার দায় তাদেরই প্রাপ্য।
টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, তার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি করার বিকল্প নেই। দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা তো করতেই হবে, পাশাপাশি তাদের পরিচয় এবং ছবি ব্যাপক হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে হবে, যাতে আর কেউ এ ধরনের অপকর্মে জড়াতে সাহস না পায়। হাইওয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে সবসময় সতর্ক ও কর্মতৎপর থাকতে হবে। হাইওয়ের পার্শ্ববর্তী কোন এলাকা ডাকাতপ্রবণ এবং ডাকাতির সাথে করা জড়িত তা চিহ্নিত করা সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে হবে। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। যেকোনো মূল্যে হাইওয়েকে নিরাপদ করতে হবে। পরিবহন মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। তাদের বাস যাতে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ছাড়া হাইওয়ের যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।