Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধে রুল নিষ্পত্তি হয়নি দু’বছরেও দ্রুত রুল নিষ্পত্তির প্রত্যাশা আইনজীবীর

বিদেশি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টের জারী করা রুল নিষ্পত্তি হয়নি দু’বছরেও। ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারী করেন। একই বছর ৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রিট দায়ের করন। ২ বছর ৩ মাস ২৩ দিন অতিক্রিম করলেও রুল নিষ্পতি হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটকারীর আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, আমরা হাইকোর্টের দু’টি বেঞ্চে রুল শুনানির জন্য আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। দুভার্গ্যক্রমে রুল শুনানি হয়নি। আশা করছি আগামী বছরের শুরুতেই রুল শুনানি শুরু হবে। এসময় আমরা আদালতে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপনা করব। তিনি আরো বলেন, এসব চ্যানেলের সিরিয়ালে অভিনয়কারী বিভিন্ন পোশাকে আকৃষ্ট হয়ে অনেক তরুণ-তরুণী অপসংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়ছে। আদালত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে তিনটি ভারতীয় টিভি চ্যানেলের (স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা। এসব চ্যানেলের ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলায় প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখে শিশু-কিশোরদের আত্মহত্যা, পরকীয়া, তালাক ও সংসার ভাঙার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।ওই সব প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট সৈয়দা শাহীন আরা লাইলি রিট দায়ের করেন।  রিটে তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, যাদু ব্রডব্যান্ডের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, স্টার জলসায় ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালে প্রভাবিত হয়ে ‘পাখি’ পোশাক না পেয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় শাহিন নামের এক যুবক স্ত্রীকে ‘পাখি’ পোশাক দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তা ছাড়া এসব ভারতীয় চ্যানেলের কারণে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া কিংবা গৃহিণীদের সাংসারিক কাজকর্ম বিঘিœত হচ্ছে। এমনকি গৃহকর্মীরাও এসব সিরিয়ালের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর ওই তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারী করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। তথ্য ও স্বরাষ্ট্রসচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যানসহ, সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।  এর পর দুবছর পার হলেও ওই রুল নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। এদিকে সম্প্রতি বিদেশি অনুষ্ঠান বাংলায় ডাবিং করে প্রচার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।  এ ছাড়া  এদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন  সংশ্লিষ্টরা। রিটকারীর আইনজীবী বলেন, বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ঠিক করা হয়েছিল। পরে ওই বেঞ্চ ভেঙে যায়। এরপর আবারও ওই বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদন জমা  দেয়া হয়। কিন্তু অবকাশ চলে আসায় আর শুনানি করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে অন্য একটি বেঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানেও রুল শুনানি সম্ভব হয়নি।  
জানা গেছে, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার সব চেয়ে বেশি হচ্ছে বাংলাদেশ। হবিগঞ্জের ধল গ্রামে ‘কিরণমালা’ সিরিয়াল দেখা নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। কিরণমালার সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত ২০ আগস্ট সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর বড়দাপ গ্রামে কিরণমালা সিরিয়াল দেখতে গিয়ে ১৬টি পরিবারের বসতবাড়ি-জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর আগে ভারতীয় সিরিয়াল ‘বোঝে না সে বোঝে না’ নাটকের পাখি চরিত্রের ‘পাখি জামা’ না পেয়ে ২০১৪ সালে ঈদে আত্মহত্যা করেছে অন্ত ১০ জন। তার আগে শিশুদের জন্য ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত কার্টুন ‘ডোরেমন’ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা নিয়ে আলোচনা হয় জাতীয় সংসদেও। পরে শিশুদের লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট এবং তাদের মানসিক বিকাশের কথা চিন্তা করে তা বন্ধে বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার।  
বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে আইনি নোটিশ : ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোটের আইনজীবী। রিটে বিবাদী হলেন তথ্য ও বাণিজ্য সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, ন্যাশন ওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডিজি যাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড। নোটিশে বলা হয়, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনা-২০০৬ এর ১৯ ধারা অনুসারে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রদানে বিধি নিষেধ আছে। যদি এ আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুই বছরের কারাদ- বা এক লাখ টাকা দ-ে দ-িত হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ