Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চীনের সামরিক হুমকি সত্ত্বেও আজই তাইওয়ান যেতে পারেন পেলোসি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২২, ১০:১৩ এএম

বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। আর তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য সফরকে ঘিরে দুই দেশের সেই উত্তেজনার পারদ যেন বেড়েছে আরও।
যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় ক্ষমতাধর এই রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর রুখতে ইতোমধ্যেই সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে রেখেছে চীন। তবে এই পরিস্থিতিতেই চীনা হুমকি পায়ে ঠেলে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) তাইওয়ানে যেতে পারেন ন্যান্সি পেলোসি। বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পেলোসির সম্ভাব্য এই সফর সম্পর্কে জানানো হয়েছে এমন ব্যক্তিরা এই বিষয়ে রয়টার্সকে জানিয়েছে।
এদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মঙ্গলবার তাইওয়ান সফরে যাচ্ছেন বলে তিনটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে চীন ‘আসলে বসে থাকবেন না’ এমন হুমকিকে যুক্তরাষ্ট্র ভয় পায় না বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
রয়টার্স বলছে, পেলোসির সফরসূচি সম্পর্কে জানেন এমন একজন ব্যক্তি বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের তাইওয়ান সফরের বেশিরভাগ কর্মসূচি বুধবার নির্ধারিত রয়েছে। এদিনই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সাথে পেলোসির বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। আর পেলোসির প্রতিনিধিদল বুধবারের প্রথম দিকে তাইওয়ানে পৌঁছাবে। তবে ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘সবকিছুই (এখনও) অনিশ্চিত।’
তাইওয়ানের সংবাদপত্র লিবার্টি টাইমস জানিয়েছে, পেলোসির প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে তাইওয়ানে পৌঁছানোর কথা ছিল। যদিও তাদের প্রতিবেদনে কোনো সূত্রের উল্লেখ করেনি সংবাদপত্রটি।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার পেলোসির মালয়েশিয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল। পেলোসি সোমবার সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে তার এশিয়া সফর শুরু করেছেন এবং তার অফিস বলেছে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানও সফর করবেন। তবে এখানে তাইওয়ান সফরের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পেলোসির ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রতিবেদনের বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই। তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, পেলোসির (তাইওয়ানে) যাওয়ার অধিকার রয়েছে। যদিও আসলেই পেলোসি তাইওয়ানে সফর করছেন কি না সেটি নিশ্চিত করেনি হোয়াইট হাউস।
অবশ্য চীন বারবারই ন্যান্সি পেলোসির সফরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, পেলোসির সম্ভাব্য সফরকে ঘিরে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, বড় আকারের বিমান বা নৌ কর্মকাণ্ড পরিচালনা বা তাইওয়ান প্রণালী আন্তর্জাতিক জলপথ নয় বলে চীন ‘ভুয়া আইনি দাবি’ করতে পারে।
কিরবি আরও বলেন, ‘আমরা ফাঁদে পা দেবো না বা স্যাবার র‌্যাটলিংয়ে (সামরিক সংঘাতে) লিপ্ত হবো না। একই সময়ে, (চীনের সামরিক হুমকিতে) আমরা ভয়ও পাবো না।’
এদিকে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু মিত্র দেশকে অবহিত করেছে। অন্য দু’টি সূত্র জানিয়েছে, পেলোসি সম্ভবত বুধবার তাইওয়ানে থাকার সময় চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্টভাষী কর্মীদের একটি ছোট দলের সাথে দেখা করার কথা রয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বলেছেন, পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে এটি ‘চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চরম হস্তক্ষেপ’ হবে। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এটি ‘খুব গুরুতর ফল এবং পরিণতি’ বয়ে আনবে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান এদিন বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পেলোসিকে মার্কিন সরকারের ‘তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি (পেলোসি) যদি সেখানে (তাইওয়ান) সফরের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমরা বলব— সে পরিকল্পনার পরিণতি খুব গুরুতর হবে।’
‘আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। পিপলস লিবারেশন আর্মি (চীনের সেনাবাহিনী) চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না। চীন তার সার্ভভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় অবশ্যই শক্তিশালী ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।’
চীনের সামরিক বাহিনী ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে ঝাও বলেন: ‘যদি তিনি তাইওয়ানে যাওয়ার সাহস করেন, তাহলে আসুন আমরা অপেক্ষা করি এবং দেখি কী হয়।’
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ