Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জন্মনিবন্ধন সহজ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুর হিসাব নিবন্ধিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সরকারি বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তি, পাসপোর্ট ইস্যু, স্কুলে ভর্তি, জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু ও ওয়ারিশান সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশ্বের সব দেশেই সরকার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন করে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার বর্তমান সরকার জাতীয় তথ্য বাতায়নের আওতায় জন্মনিবন্ধনকে স্বচ্ছ ও সহজতর করতে ডিজিটালাইজ ও অনলাইনভিত্তিক করেছে। দেশের বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সব স্তর এখন সরকারি ডিজিটাল তথ্যসেবার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যেই জন্মনিবন্ধন পেতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছে। গত বছর থেকে সন্তানদের স্কুলে ভর্তির সময় জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে বলে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। জন্মনিবন্ধনের এসব বাধ্যবাধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই নিবন্ধন পেতে মানুষের ভীড় বাড়বে। মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে সহজেই জন্মনিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়া হলেও কোথাও কোথাও অনেককে তার ১০-২০ গুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের কোথাও কোথাও জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ডিজিটালাইজেশন সিস্টেমে এনালগ পদ্ধতি থেকে স্বচ্ছ ও সহজভাবে ঘরে বসে অথবা তথ্যকেন্দ্র থেকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করার সুযোগ নিশ্চিত হওয়ার কথা। বাস্তবে উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, সচিব ও তথ্যকর্মীদের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সার্ভারে জটিলতা, সফ্টওয়্যারে ঘাটতি, ইন্টারনেটের ধীরগতি ইত্যাদি বিড়ম্বনার পাশাপাশি মানুষের জরুরি প্রয়োজনের সুযোগে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। তারা সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তির সাথে যোগসাজসে বাড়তি অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একজনের জন্মনিবন্ধনে ৮টি ভুলের তথ্য রয়েছে। বলা বাহুল্য, অনভিজ্ঞ সাধারণ মানুষের ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তবে অপারেটর ও তথ্যকর্মীদের ভুলের খেসারত দিতে সাধারণ মানুষকে জন্মসনদ ভুল সংশোধনের জন্য আবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-কাউন্সিলরদের অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন, নতুন নিবন্ধনের চেয়ে ভুল সংশোধনে খরচ ও ভোগান্তি বেশি। শিশুদের স্কুলে ভর্তি, প্রবাসী কর্মী বা চিকিৎসার্থে বিদেশ গমনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ, সুলভ ও দ্রুততর করার জন্য পর্যবেক্ষকরা তাকিদ দিয়েছেন।

তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রযাত্রায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যই হচ্ছে, স্বচ্ছ ও সহজ প্রক্রিয়ায় সরকারি তথ্যসেবা নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সুযোগ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, সরকারি কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ হওয়া। দুঃখজনক হচ্ছে, এ কাজে ক্রমেই জটিলতা বৃদ্ধি ও মানুষের হয়রানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জন্ম নিবন্ধনের মত জরুরি ও মৌলিক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে দালাল, মধ্যস্বত্বভোগীসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের বাড়তি অর্থ আদায় ও অব্যবস্থাপনার শিকারে পরিনত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যেখানে অনেক ছোট ছোট দেশ জনগণের জীবন সহজ করার নিরন্তর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে জটিল আকার ধারন করেছে। অথচ সরকারের নিজের এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি দ্রুত ও সহজ করা অত্যাবশ্যক। জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘরে ঘরে লোক পাঠিয়ে তা করা প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তির দৌরাত্ম তা জটিল করে তুলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অবিলম্বে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি ডকুমেন্ট সাপেক্ষে নিজের এবং সন্তানদের জন্মনিবন্ধন সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • আলিফ ২৭ জুলাই, ২০২২, ৩:০২ এএম says : 0
    ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে আগে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ থেকে শুরু করে কম্পিউটার ম্যানকে টাকা দিতে হয়। না দিলে বিভিন্ন ভোগান্তিতে ফেলে।
    Total Reply(0) Reply
  • আলিফ ২৭ জুলাই, ২০২২, ৩:০৩ এএম says : 0
    ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দুর্নীতি চললেও এর কোনো প্রতিকার নেই। এমনকি এ ব্যাপারে কোনো আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন