Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি

সম্পাদকীয় -২ | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত রোববার প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত ৫৩৬ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পদোন্নতি দেয়ার পরও বঞ্চিত থেকেছেন অনেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপণ জারি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি দৈনিককে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হলেও প্রশাসনে তেমন কোন আনন্দ-উচ্ছ্বাস নেই। কারণ বেশকিছু দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ পদোন্নতি পাননি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দফাতেও। সাধারণ কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন, বিপুল বঞ্চনায় পদোন্নতির আনন্দ মøান হয়ে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এতবড় পদোন্নতিও অনেকে মেনে নিতে পারেননি। অনেকে অভিযোগ করছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতি নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। মনে করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত পরিচয়ে নানামুখী তদবিরে মিলেছে পদোন্নতি। এমনকি বিভাগীয় মামলায় শাস্তি পেয়েছে এমন কয়েকজনের নামও  প্রজ্ঞাপণে দেখা গেছে। একটি পত্রিকার সংবদে দেখা গেছে পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের ফাঁসি চেয়েছেন। এ পদোন্নতিকে বিশ্লেষকরা গণপদোন্নতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর কারণ পদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।
দেশ পরিচালনায় প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলাদের ধারাবাহিকতা থেকেই যায়। সে বিবেচনায় দেশ পরিচালনায় একটি দক্ষ ও মেধাবী আমলাতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বর্তমান আমলাদের অবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও তারা সুপরিয়র সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে পদোন্নতি পান বিধায় তাদের যোগ্যতা দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে যা হচ্ছে তাতে সে অবস্থা বহাল রয়েছে এমনটা বলার অবকাশ খুব একটা কম। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে যে বিপুলসংখ্যক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, এতে চেইন অব কমান্ডে বড় ধরনের ধাক্কা লাগা স্বাভাবিক। এমনিতেই অনেক আগেই পদের অধিক পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনের মধ্যভাগ মোটা করে ফেলা হয়েছিল। সর্বশেষ পদোন্নতি দেয়ার ফলে প্রশাসন উল্টো পিরামিড আকার ধারণ করল। অর্থাৎ মাথাভারী প্রশাসনে রূপ লাভ করল। মূলত প্রশাসনের যে পীরামিড কাঠামো তা ভেঙ্গে দেয়া হলো। এতে হয়ত পদোন্নতিপ্রাপ্তদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে, অর্থিক সুবিধাও বাড়বে তবে তাদের কাজ করতে হবে অধঃস্তন পদে থেকেই। অন্যদিকে এই অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বহন করতে হবে দেশের জনগণকেই।
প্রশাসনে পদোন্নতি নিয়মিত ব্যাপার। এটি নির্ধারণ করা হয় মন্ত্রণালয়ও বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থায় কোথায় কী ধরনের পদে কত জনবল প্রয়োজন তার ভিত্তিতে। তা না হলে পদোন্নতির যোগ্য সব কর্মকর্তার পদোন্নতি যেমনি দেয়া সম্ভব নয় তেমনি পদোন্নতির পর পোস্টিং দেয়াও সম্ভব নয়। এখন দেখা যাচ্ছে, পদোন্নতির ব্যাপারটি অনেকটা তুষ্টকরণ প্রবণতার অংশে পরিণত হয়েছে। এটা মূলত জনগণের কাছে প্রকৃত জবাবদিহিতার অভাব থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের প্রবণতার মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সর্বত্র পড়তে বাধ্য। মূলত তুষ্টকরণমূলক পদোন্নতির চেয়ে দক্ষ ও যোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনকে অধিকতর গতিশীল করাই শ্রেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন