মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০২১ সালের শুরুর দিক থেকেই যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির গতি ঊর্ধ্বমুখী। কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে পণ্য ও সেবার মূল্য। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন নতুন করে প্রতিবন্ধকতা যুক্ত করে। সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয় জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য। এ ধারাবাহিকতায় গত মাসে ব্রিটিশ মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ হার দেশটির গত চার দশকের ইতিহাসে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বেতন ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের ব্যবধান বেড়ে ব্রিটিশদের জীবনমানে তীব্র পতন দেখা দিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুসারে, পেট্রল, ডিজেল ও খাদ্যের মূল্য যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হারকে ৪০ বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের পরিমাপ ভোক্তা মূল্যসূচক জুনে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মে মাসেও এ হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। এর আগে ২০২১ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর টানা নয় মাস ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে এ হার। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশঙ্কা করছে, চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে জ্বালানির মূল্য আরো বাড়লে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে ভোগ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম ব্রিটিশদের প্রকৃত মজুরিও কমিয়ে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা এ মজুরি মে পর্যন্ত তিন মাসে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কম ছিল। এ নিয়ে টানা ষষ্ঠ মাসে প্রকৃত মজুরিতে পতন অব্যাহত রয়েছে। ২০০১ সালে আধুনিক রেকর্ড শুরু হওয়ার পর এটিই সর্বোচ্চ পতন। ওএনএসের তথ্য অনুসারে, বোনাস ব্যতীত বেতন বাড়ার হার ৪ দশমিক ২ থেকে সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। যেখানে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এ অবস্থায় নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলো অতিরিক্ত খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক সিটি পূর্বাভাস দিয়েছিল, জুনে পেট্রলের মূল্য লিটারে ২০ পেনি বেড়ে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হবে। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা আশা করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মাসে সুদহার দশমিক ২৫ বা দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াবে। মাসভিত্তিক মূল্যবৃদ্ধির হার জুনে মে মাসের চেয়ে দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ বাড়ার হার ১৯৮৮ আধুনিক রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। গত বছরের একই মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ার হার ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। ওএনএসের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্যান্ট ফিজনার বলেন, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি পুনরায় বেড়ে ৪০ বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এমন রেকর্ডে ভ‚মিকা রেখেছে। যদিও পুরনো গাড়ির দাম না কমলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ত। ব্রিটিশ পরিসংখ্যান সংস্থা জানিয়েছে, গত মাসে পেট্রল ও ডিজেলের মূল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সময়ে মোটর জ্বালানি ব্যয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির পেছনে আরেকটি বড় কারণ ছিল খাদ্য। বিশেষ করে দুধ, ডিম ও পনিরের মূল্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। জুনে এ খাদ্যগুলোর মূল্য আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বাজারে মূল্যের অস্থিরতার মধ্যে থাকা খাদ্য ও জ্বালানি বাদে গত মাসে কোর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ হার মে মাসের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমেছে। আগামী মাসগুলোয় ব্রিটিশ ভোক্তাদের ওপর আরো বেশি মূল্যস্ফীতির চাপ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমবর্ধমান কাঁচামাল ও শ্রম ব্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত এ ব্যয় সংস্থাগুলো ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে। গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।