Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অপচয়

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২২, ১২:০৪ এএম

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উৎসব পালিত হলেও বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ের পুরনো ভোগান্তি আবার ফিরে এসেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ঘোষণা দিয়েই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করতে হচ্ছে। এমন অবস্থা আগে কখনো ঘটেনি। দেশের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় বেশি হলেও উৎপাদন হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। তবে রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তি মোতাবেক চাহিদা না থাকলেও, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। ভারতের আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতেও বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে। দেশে যখন জ্বালানি ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকট চলছে, তখন এসব বিদ্যুতকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু না। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ অর্থবছরের গত ৯ মাসে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। বিদ্যুতখাতে যেন এক প্রকার শুভঙ্করের খেলা চলছে। একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী হতে বলা হচ্ছে, রুটিন করে লোডশেডিং করা হচ্ছে, অন্যদিকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ না নিয়েও একেকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে শত শত কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। হয়তো বলা হবে, বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ প্রেক্ষাপটে এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের সাথে চুক্তি করেছিল সরকার। গতকাল প্রকাশিত আরেকটি খবরে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্তে¡ও আরো চারটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

তীব্র তাপদাহে জনজীবন যখন অতীষ্ট তখন বিদ্যুতের মাত্রাহীন লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নানাবিধ নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে বলা হচ্ছে। এমনকি নামাজের সময় মসজিদের এসি বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। অথচ, সরকারি কর্মকর্তাদের অফিস, গাড়ি এবং বাসাবাড়িতে এসি, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ সামগ্রিক বিলাসিতায় এতটুকু কমতি দেখা যাচ্ছে না। যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী সর্বক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা ও কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের কথা বলছেন, সেখানে সরকারি আমলা ও কর্মকর্তারা যেন সময়ের এই প্রয়োজনকে মানতে চাইছেন না। যারা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নেতৃত্বে থাকবেন, তারাই সরকারি নীতিমালা অগ্রাহ্য করবেন, এটা হতে পারে না। মিতব্যয়িতা ও কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের উদাহরণ প্রথমে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদেরকেই জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হওয়ায় রাতারাতি তা দৃশ্যমান করা সম্ভব নয়। স্বল্প সময়ের জন্য কুইকরেন্টাল, রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের খরচ মেনে নেয়ার যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল এটা চলতে পারে না। একযুগ ধরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকার কার্যব্যবস্থা হিসেবে সামনে রয়েছে। এভাবেই দেশের বিদ্যুৎখাত চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। চলমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুতের এই উদ্বৃত্ত সক্ষমতা জনগণের উপর বাড়তি বিলের বোঝা চাপানো ছাড়া তেমন কিছু দিতে পারেনি। রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ভর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে বছরে বিলিয়ন ডলারের ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হলেও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে তেমন কিছুই করা হয়নি। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটানোর খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। দেশে গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। দেশীয় কয়লা উত্তোলন এবং সাগরের বøকগুলোর উন্নয়নে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা সব সময়ই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম কোম্পানি বাপেক্সের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগানোর পক্ষে বলছি। বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়াতে এবং দেশীয় জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ আইনগত সিদ্ধান্ত ও সহায়তা নিশ্চিত করতে গত একদশকে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না থাকা হতাশাজনক। জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের সবকিছু যেন আমদানি ও বিপণন সিন্ডিকেট এবং রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকেন্দ্রিক সুবিধাভোগীদের স্বার্থেই পরিচালিত হচ্ছে। এটা একই সঙ্গে পরিতাপ ও উদ্বেগজনক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুত

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
১০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন