Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অদক্ষ তরুণদের ভবিষ্যৎ নেই

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২২, ১২:০৪ এএম

বিশ্বে ডিজিটালের ব্যবহার বেড়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। মানসম্পন্ন কাজ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও ব্যয় কম জনিত কারণে এটা হচ্ছে। তাই প্রতিটি কর্মেই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিযোগিতা চলছে। এতে যে যত বেশি অগ্রগামী হচ্ছে, সে তত বেশি টেকসই উন্নতি করছে। ডিজিটালের ব্যবহারের ফলে মানুষের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু মানুষের যেটুকু চাহিদা আছে, তার অধিকাংশই দক্ষদের। এর মধ্যে প্রযুক্তি দক্ষদের বেশি। অদক্ষদের কদর শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক সময়ে মানুষকে অতিক্রম করে যাবে। এতে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। স¤প্রতি ইলন মাস্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নকে ‘দৈত্যকে ডেকে আনার শামিল’ আখ্যায়িত করে এটাকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে রোবটের কারণে বিশ্বজুড়ে ৭.৫ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। তবে, নতুন প্রযুক্তির কারণে বিশ্বে ১৩ কোটিরও বেশি কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। ডাটা অ্যানালিস্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপার, সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট এ ধরনের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ ছাড়া শিক্ষক বা কাস্টমার সার্ভিস কর্মীর মতো কাজ, যাতে কিনা অনেক সুস্পষ্ট মানবিক গুণাবলির দরকার, সেরকম অনেক কাজও করতে সক্ষম হবে যন্ত্র। এই মনিষীদের বক্তব্য অনুযায়ী অদক্ষ মানুষের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ, বিশ্বে এরাই অধিকাংশ-প্রায় ৯০%। এর মধ্যে শিশু ও তরুণরাও রয়েছে। এই তথ্য খোদ জাতি সংঘের আওতাধীন সংস্থা-ইউনিসেফের। এ বছরের ১৩ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে প্রকাশিত ইউনিসেফ ও এডুকেশন শিক্ষা কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে বর্তমানে প্রতি চার তরুণের মধ্যে তিনজনেরই কর্মদক্ষতায় ঘাটতি আছে। পরবর্তী প্রজন্মও এই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত নয়। বিশ্বের ৯২টি দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, স্বল্প আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ দেশের ৮৫ শতাংশ তরুণের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থানের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা নেই। যেসব দেশের তরুণরা বিদ্যালয়ের বাইরে ও মাধ্যমিক স্তরে কম দক্ষতা অর্জন করে, সেসব দেশ দক্ষ জনশক্তির সংকটে ভুগছে। এসব দেশের বেশির ভাগ তরুণ কর্মজীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত নয়। এ ছাড়া নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ১০ বছর বয়সী বেশির ভাগ শিশু একটি সাধারণ পাঠ্য পড়তে ও বুঝতে অক্ষম। আর এই মৌলিক দক্ষতা না থাকার বিষয়টি পরবর্তী শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্কুলের বাইরে থাকা তরুণদের উচ্চহার এবং মাধ্যমিক স্তরে দক্ষতা অর্জনের নি¤œমুখীতাও অদক্ষতার জন্য দায়ী। আর এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দক্ষতা-সংকটে ভুগছে।

অপরদিকে, গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত ইউনিসেফ, এডুকেশন কমিশন, জেনইউ এবং ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবের যৌথ উদ্যোগ দ্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস ক্লক শীর্ষক প্রতিবেদন মতে,মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে দক্ষতায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে দক্ষতাহীন তরুণের সংখ্যা বাংলাদেশে ৫৭.৮%, আফগানিস্তানে ৯৩.৩% ভুটানে ৮৯%, পাকিস্তানে ৮৪.৫%, নেপালে ৮১.৭%, ভারতে ৭৩% ও শ্রীলঙ্কায় ৬১.৫%। মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের দক্ষতা বলতে ঐতিহ্যগত পঠন এবং গাণিতিক দক্ষতাকে বোঝানো হয়েছে, যা সাধারণত স্কুলশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া, একই বয়সের তরুণের ডিজিটাল দক্ষতা নেই বাংলাদেশে প্রায় ৮৫%, ভুটানে ৬৮.৫%, শ্রীলঙ্কায় ৭০.৬%, ভারতে ৭৩.১%, আফগানিস্তানে ৯৯%, পাকিস্তানে ৯০.২% ও নেপালে ৮৭.৪%। ডিজিটাল দক্ষতা বলতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও জানা-শোনাকে বোঝানো হয়েছে। তরুণদের কত অংশ কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রাথমিক কর্মকাÐ পরিচালনা করতে পারে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাউশির গবেষণা রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে মাধ্যমিকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে বেশি খারাপ। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬১% শিক্ষার্থীর ইংরেজিতে অবস্থা খারাপ। একই শ্রেণিতে গণিতে ৪৩% খারাপ বা গড়পড়তা অবস্থা। তবে যত ওপরে উঠছে, পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির তুলনায় অষ্টমে উঠে কিছু ভালো এবং দশমে আরও ভালো করছে। অবশ্য মাতৃভাষা বাংলার পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। এর আগে বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়তে ও লিখতে পারে না। অর্থাৎ দেশের উচ্চ মাধ্যম পর্যন্ত শিক্ষার মান খুবই খারাপ। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, স¤প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯% পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোন কোন অনুষদে উত্তীর্ণের হার ছিল সর্বোচ্চ ৪%। উপরন্তু যারা এ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা বিশ্বের সেরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিলে তাদের কেউ উত্তীর্ণ হতে পারতো কি-না সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ঢাবির চেয়ে অনেক ভালো। কিউএস সূচক-২০২৩ মতে, বিশ্বের সেরা ১৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচকে প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। গত বছরের মতো এবারও ঢাবি ও বুয়েটের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে রয়েছে। যা’হোক, দেশের নি¤œস্তরের শিক্ষার মানহীনতার প্রভাব পড়ছে উচ্চ শিক্ষায় তথা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষায়। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হচ্ছে গবেষণামূলক। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে না। অপরদিকে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণামূলক কর্মকাÐও সন্তোষজনক নয়। গত ১৪ জুলাই এক দৈনিকে প্রকাশ, ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১০৪টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় থাকা ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১টিতেই কোনো ধরনের গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল না। এছাড়া, গবেষণা খাতে একটি টাকাও ব্যয় করেনি ওই শিক্ষাবর্ষে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১৭। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে, বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো নয়। শিক্ষার এই মানহীনতার প্রভাব পড়ছে দেশের সব ক্ষেত্রেই। যেমন: ইউএনডিপির বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক-২০২১ মতে, ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান- প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ১১৯তম, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ৭৭তম, উচ্চশিক্ষায় ১২২তম, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ১৩৬তম , তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১১৭তম, অর্থনীতিতে ১০১তম ও সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশে ১৩৪তম। এ হচ্ছে সেকেলে শিক্ষার চালচিত্র। এছাড়া, কর্মমুখী শিক্ষা তথা কারিগরি শিক্ষার হার খুব কম। সরকারি হিসেবে ১৪%। কিন্তু সেটা ভোকেশনাল শিক্ষা ধরে। প্রকৃত কারিগরি শিক্ষার হার ৮-৯% এর মতো। তার মানও অতি নি¤œ। কারণ, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি নেই। থাকলেও সেখানে প্র্যাকটিকাল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বত্রই শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। উপরন্তু কর্মরত শিক্ষকদের বেশিরভাগের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে! শিক্ষার অনুকূল পরিবেশেরও অভাব রয়েছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেকেলে। মান খুবই খারাপ, যার প্রভাব পড়ছে দেশের সব ক্ষেত্রেই। যেমন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছে না। দেশের প্রবাসীদের মজুরী অন্য দেশের চেয়ে অনেক কম। প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক পাওয়া না যাওয়ায় বিদেশ থেকে বিপুল বেতন দিয়ে দক্ষ লোক এনে কাজ করাতে হচ্ছে বেসরকারি খাতে। তাতে যে অর্থ দেশ থেকে চলে যাচ্ছে তা রেমিটেন্সের প্রায় এক তৃতীয়াংশ! অন্যদিকে, দেশে বেকার সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

যা’হোক, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তরুণদের অধিকাংশই মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে অদক্ষ। ডিজিটাল যুগে এই তরুণদের এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ। কেননা, পুরাতন এনালগভিত্তিক কাজ ও স্ট্রাকচার বাতিল হয়ে নতুন ডিজিটাল ভিত্তিক কাজ ও ষ্ট্রাকচার তৈরি হচ্ছে, যা পরিচালনা ও কাজের জন্য উপযুক্ত দক্ষ লোক দরকার। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ততা তরুণদের বেশি। কারণ, বয়স্কদের চেয়ে তরুণরা পরিবর্তন ও নতুনত্ব গ্রহণে আগ্রহী বেশি। কিন্তু সেই তরুণরা যদি শিক্ষা ও ডিজিটালে অদক্ষ হয়, তাহলে তাদের কর্মহীন হয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকতে হবে। মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। অন্যদিকে, দক্ষ লোকের অভাবে দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই শিক্ষা ও ডিজিটালে দক্ষতার সংকট দূর করে দক্ষ করা দরকার। সে লক্ষ্যে ইউনিসেফ তার প্রতিবেদনে বলেছে, দক্ষতা সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতিটি শিশুর কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষা পৌঁছে দিতে এবং তাদের ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা বাধাগুলো দূর, ‘শিশুদের শেখার স্তরের মূল্যায়ন, তাদের প্রয়োজনীয় গতিতে ফিরিয়ে আনতে উপযোগী ক্যাচ-আপ ক্লাস প্রদান ও আজীবন শেখার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে মৌলিক দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও তাদের দক্ষতা উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে স্বল্পোন্নত, নি¤œমধ্য ও উচ্চ মধ্য আয়ের সব দেশকেই। একই অবস্থা করতে হবে আমাদের দেশেও। সর্বোপরি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক করতে হবে। শিক্ষার প্রতিটি স্তর করতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। কেননা, কর্মহীন ও মানহীন শিক্ষার ঘরে-বাইরে কোথাও মূল্য নেই। আর এসব করতে হলে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে। গত ৯ জুন বলেছেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ছয় ভাগে যেতে হবে। আমরা এখন তিন ভাগে আছি। কিন্তু শিক্ষা খাতে চাহিদা মাফিক বরাদ্দ করার বিষয়টি শুধুমাত্র বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দ্রæত বাস্তবায়ন করতে হবে। এই সঙ্গে শিক্ষার সব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা মানোন্নয়ন ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।

স্মরণীয় যে, ডিজিটালের ব্যবহার শুধুমাত্র বিশ্বেই ব্যবহার হচ্ছে না। সেই সাথে এর ব্যবহার গ্রহে, উপগ্রহে ও নক্ষত্রেও হচ্ছে। এর অনেক ক্ষেত্রের আউট পুট কল্পনাতীত, যা মানুষ কখনো কল্পনাও করেনি। বিস্ময় জাগানিয়া ঘটনা একের পর এক ঘটে যাচ্ছে, যার অন্যতম হচ্ছে- নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত যত টেলিস্কোপ মহাবিশ্বে প্রেরণ করা হয়েছে, তন্মধ্যে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপই সর্বাধিক শক্তিশালী, বৃহত্তম ও কার্যকর। এটি নাসা এবং ইউরোপীয় ও কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থার বানানো, যাতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি ডলার। এটি তৈরি করা হয়েছে দূর মহাকাশে, মহাবিশ্বের শুরুর দিকে গ্যালাক্সি সৃষ্টির সময়কে দেখার জন্য। এই টেলিস্কোপটিকে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাঠানো হয়। অতঃপর মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই সেটি মহাবিশ্বের হাজারো ছায়াপথের প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন একগুচ্ছ ছবি তুলে পাঠিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘এসএমএসিএস ০৭২৩’। বলা হচ্ছে, এগুলো এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের সবচেয়ে গহিনের, সবচেয়ে বিশদ এবং সবচেয়ে ভালোমানের অবলোহিত ছবি। এর প্রথম ছবিটি দেখানো হয়েছে গত ১১ জুলাই হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ছবিতে ক্ষুদ্র কণার মতো যেসব আলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করছে। জেমস ওয়েবের সাড়ে ছয় মিটার চওড়া আয়না এবং অতি সংবেদনশীল অবলোহিত যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে ছবিতে ছায়াপথগুলোর বিকৃত আকৃতি (লাল বাঁকানো রেখা) শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে যা ‘বিগ ব্যাং’-এর মাত্র ৬০ কোটি বছর পরে বিদ্যমান ছিল। আলোচিত বিগ ব্যাং তত্তে¡ মনে করা হয় ১৩৮০ কোটি বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল। এছাড়া, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রেরিত একগুচ্ছ ছবিতে শনাক্ত করা হয়েছে ছায়াপথের ১,১৫০ আলোকবর্ষ দূরে পৃথিবী সদৃশ একটি গ্রহ অবস্থান করছে। এটি সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আবর্তন করছে।এর নামকরণ করা হয়েছে ডবিøউএএসপি-৯৬বি । এই নব আবিষ্কৃত গ্রহে মেঘ ও কুয়াশা থাকার প্রমাণও মিলেছে। এর ভর বৃহস্পতি গ্রহের অর্ধেকেরও কম এবং ব্যাস ১.২ গুণ বেশি। এটি সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের চেয়ে বেশি স্ফীত। আর তাপমাত্রা ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অসাধারণ অগ্রযাত্রায় আমাদের শামিল হতে হবে।নতুবা উন্নতি কখনোই কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন