পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ব্যাংকিং খাত- বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্ট মহলকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এখন আসলেই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোর আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তবে বিভিন্ন ছাড় দেয়ার পরও ব্যাংক খাতে প্রতিদিনই বাড়ছে খেলাপিঋণ। আর তাই এটা কমিয়ে আনতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ খেলাপিঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া ম‚ল্যস্ফীতির কারণে আমানতের সুদ বেড়ে যাওয়ার পরও ঋণের সুদের ক্যাপ দিয়ে রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এক বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশন-২০২২ নামে প্রতিনিধি দলটি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে এসেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফের এশীয়প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে ব্যাংক খাতের সার্বিক পারফরম্যান্স ও খেলাপিঋণের পজিশন জানতে চায় আইএমএফ। খেলাপিঋণ কেন বাড়ছে সেই প্রশ্নও তোলা হয়। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণের পরিমাণ কেন বেশি তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপিঋণ কমিয়ে আনার স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা জানতে চাওযা হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। খেলাপিঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এ খেলাপিঋণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিদ্যমান সার্কুলারের আওতায় কোন ব্যাংকের খেলাপিঋণ বাড়লে, সেটির কারণ ব্যাখ্যাসহ তা কমিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়ে নিয়মিত চিঠি পাঠানো হয়। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে খেলাপিঋণ হ্রাসে অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার খসড়া এরই মধ্যে চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি শনাক্তে খেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে। ওই আইন পাশ হলে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করাসহ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।
গত মার্চ শেষে রাস্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপিঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ০১ শতাংশ। বৈঠকে রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ও খেলাপিঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সঙ্গে নিয়মিত এমওইউ করা হয়। এর আওতায় ক্লোজলি মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে বিগত সময়ের চেয়ে খেলাপিঋণ কিছুটা কমানোও সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো শুধু ঋণ দেয় না, দেশের স্বার্থে পারিপাশ্বিকভাবে অনেক সেবা দেয়। এ কারণে অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় কিছুটা খারাপ করছে। বৈঠকে রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ম‚লধন ঘাটতি প‚রণে সরকার থেকে সহায়তা করা হচ্ছে কিনা সেটিও জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অনেক আগে ব্যাংকগুলোকে সরকার ম‚লধন দিয়ে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘদিন ধরে এই সহায়তা দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। সেবার মান বাড়িয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে বলা হয়েছে।
আমানত ও ঋণের সুদের ক্যাপ বসানোর ফলে ব্যাংকের মুনাফা ও ঋণের প্রবৃদ্ধিতে কি ধরনের প্রভাব পড়েছে সেটিও জানতে চায় আইএমএফ। ঋণের সুদে ৯ শতাংশ ক্যাপ দেয়া আছে। আবার আমানত সুদ ম‚ল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পন্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও বাড়ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি ক্রমে বাড়ছে। এতে আমানতের সুদও বাড়াতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঋণের সুদের ক্যাপ দিয়ে রাখাটা কতটা যৌক্তিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কেবল ব্যক্তি আমানত ও প্রতিষ্ঠানের পেনশন ফান্ডের তহবিলের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সুদ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এরকম আমানতের পরিমাণ ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মাত্র ২৩ শতাংশ। বাকী ৭৭ শতাংশ আমানতের সুদ নির্ধারণে মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নেওয়ার দরকার নেই। তাছাড়া ঋণের সুদ নির্ধারণ করে দেওয়া সত্তে¡ও গত মে মাসে গড় ঋণের সুদহার ছিল ৭ শতাংশের মতো। অথচ ব্যাংকগুলো চাইলেই এটি ৯ শতাংশে উন্নীত করতে পারত।
করোনার সময়ে নেয়া সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালজুড়ে সব ধরনের বকেয়া কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা হয়। ২০২১ সালে বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ পরিশোধ সাপেক্ষ ঋণ নিয়মিত রাখার সুযোগ দেয়া হয়। চলতি বছরেও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় সুবিধা কিছুটা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত ৭ বছরে ৪ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে তফসিলী ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।