পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রস্তুত হ তেলবাহীসহ একসাথে ভিড়বে ৪টি জাহাজ হ বছরে হ্যান্ডলিং হবে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস কনটেইনার
জাহাজ ভেড়ানোর জন্য প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দরের ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’-পিসিটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত¡াবধানে এক হাজার ২২৯ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। খুব শিগগির এই টার্মিনালে পরীক্ষামূলক জাহাজ ভেড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পতেঙ্গায় চিটাগাং ড্রাইডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি স্থানে ৩২ একর জমিতে নব নির্মিত এই টার্মিনালের ব্যাকআপ ইয়ার্ড প্রায় ১৬ একর। যেখানে চার হাজার ৫০০ টিইইউএস কনটেইনারের ধারণক্ষমতা রয়েছে। পিসিটির ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ৯.৫ মিটার ড্রাফটের তিনটি কন্টেইনার জাহাজ এবং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণের প্রায় ১৬ বছর পর নতুন টার্মিনাল নির্মিত হলো দেশের এই প্রধান সমুদ্র বন্দরে। পিসিটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা আরো বাড়বে। জেটির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হবে না। দ্রæত জেটিতে ভিড়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করে বন্দর ছেড়ে চলে যেতে পারবে। এতে আমদানি-রফতানি আরো বেশি গতিশীল হবে, ব্যয়ও কমবে। তাতে বন্দরের প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে তেমনিভাবে দেশের অর্থনীতিও বেগবান হবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার পিসিটির জেটিতে জাহাজ ভিড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তারা। তবে কোন কারণে ওইদিন জাহাজ ভিড়তে না পারলে পরবর্তিতে যে কোন দিন জাহাজ ভেড়ানো হবে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ক জাহাজ (খোলা পণ্যবাহী জাহাজ) ভিড়লেও পর্যায়ক্রমে গিয়ারড জাহাজ (নিজস্ব ক্রেনযুক্ত জাহাজ) অগ্রাধিকার পাবে পিসিটিতে। এর মধ্য দিয়ে জিসিবি (জেনারেল কার্গো বার্থ), সিসিটি (চিটাগাং কন্টেইনারা টার্মিনাল) ও এনসিটির (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) পর যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে পিসিটির।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে এনসিটি, সিসিটির দূরত্ব যেখানে ১৪-১৫ নটিক্যাল মাইল সেখানে পিসিটির দূরত্ব মাত্র ছয় নটিক্যাল মাইল। এখানে ড্রাফট রয়েছে ১২ মিটার। বর্তমানে বন্দরের বিদ্যমান জেটিগুলোতে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ সিসিটি ও এনসিটিতে ড্রাফট বাড়িয়ে ১০ মিটারে উন্নীত করতে যাচ্ছে। অপরদিকে পিসিটিতে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাÐের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সামাল দিচ্ছে এই বন্দর। গেল অর্থবছরে বন্দরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। পণ্য পরিবহনের হার প্রতিবছর বাড়ছে। নতুন ধরনের পণ্য খালাসের সুবিধা প্রদান এবং সেইসাথে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন মাত্রায় গড়ে উঠছে চট্টগ্রাম বন্দর। তারই ধারাবাহিকতায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পে কাজ করছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পে এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও সড়ক, দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ছয় মিটার উঁচু এক হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, এক হাজার ২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, বিমানবন্দরগামী গাড়ি চলাচলের জন্য ৪২০ মিটারের ফ্লাইওভার, চার লেনের পৌনে এক কিলোমিটার এবং ছয় লেনের এক কিলোমিটার সড়ক পুন:নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কর্ণফুলীর পাড়ের ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক সরিয়ে ফ্লাইওভার চালু, রেড ক্রিসেন্ট গোডাউন, মেরিন ফিশারিজ, কাস্টম এফ ডিভিশন, কয়লার ডিপো পুলিশ ফাঁড়ি, ওমেরার স্থাপনা সরানো হয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগে। ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। কয়েক দফা বাড়িয়ে নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পিসিটির প্রধান কাজ জেটি নির্মাণ শতভাগ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের প্রায় ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ। এখন আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার ট্যাংক, প্রশাসনিক ভবনের পাশে ওভারহিট ওয়াটার ট্যাংক ও ইয়ার্ড কনস্ট্রাকশনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইয়ার্ডের কাজও প্রায় ৬৫ শতাংশ শেষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, পিসিটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এখন শেষ পর্যায়ের ফিনিশিং কাজ চলছে। কাস্টম হাউসের স্ক্যানারসহ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তবে এর মধ্যেই সেখানে জাহাজ ভেড়ানোর প্রস্তুতিও চলছে। বৃহস্পতিবার না হলেও খুব শিগগির সেখানে জাহাজ ভিড়বে।
জানা যায়, শুরুতে পিসিটিতে গিয়ারড জাহাজ এবং বাল্ক জাহাজ বেশি ভেড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে। এতে জাহাজের নিজস্ব ক্রেন দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা যাবে। বর্তমানে সিসিটি ও এনসিটি টার্মিনালে ‘কী গ্যান্ট্রি ক্রেন’ থাকলেও জিসিবিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন না থাকায় গিয়ারড জাহাজ দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা হয়ে থাকে। তবে পিসিটি চালুর মাধ্যমে বন্দরে আসা জাহাজগুলোর অবস্থান সময় বা টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম কমে আসবে।
এদিকে, সরকার ইতিমধ্যে এই প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর অপারেশনের দায়িত্ব যারা পাবে তারাই ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে। প্রাথমিকভাবে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম শোনা গেলেও এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে চ‚ড়ান্ত মনোনীত করা হয়নি। জানা গেছে, পিসিটি পরিচালনার জন্য অপারেটর হিসেবে সউদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি), দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ডেনমার্কের এপি মুলারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে পিপিপির আওতায় প্রতিষ্ঠান চ‚ড়ান্ত হওয়ার আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তত্ত¡াবধানে পিসিটি পরিচালনা করবে। বন্দরের ইকুইপমেন্টের বহরে থাকা অতিরিক্ত রাবার ট্রায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, রিচ স্টেকার, ফর্ক লিফটসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে ব্যবহৃত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।