Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর

চলছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আকার-আয়তনে বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। সেইসাথে বাড়ছে দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো ও সক্ষমতা। দ্রæত এগিয়ে চলছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কাজ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেটি নির্মাণ শেষ করে জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় নির্মিত টার্মিনালে বছরে সাড়ে চার লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। টার্মিনালে থাকবে চারটি জেটি, এরমধ্যে ৬০০ মিটার লম্বা তিনটি জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কন্টেনারবাহী জাহাজ বার্থিং করা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি সেখানে তেল খালাসের জন্য ২২০ মিটার লম্বা একটি ডলফিন জেটিও নির্মিত হচ্ছে। জেটির পেছনে ৩২ একর জমিতে তৈরি হবে টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিমানবন্দর সড়কের বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক, চিটাগাং ড্রাইডক ও বোট ক্লাবের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এটি চালু হলে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা বাড়বে। ওই টার্মিনাল থেকে খুব কম সময়ে আউটার রিং রোড হয়ে কন্টেইনার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। টার্মিনালের সাথে রেললাইন সংযোগ দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা থেকে পুলিশ ফাঁড়ি, কাস্টমসের এফ ডিভিশন এবং মেরিন ফিশারিজের অফিস সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের অফিস ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ওই অংশে বিমানবন্দর সড়কটি সরিয়ে জহুরুল হক ঘাঁটি গেইট থেকে বরাবর বোট ক্লাব পর্যন্ত নেওয়া হবে। সড়ক সরিয়ে নেওয়ার কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। একই সাথে ইয়ার্ড এবং জেটি নির্মাণের কাজও চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটি সরিয়ে নেওয়ার পর জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণ কাজে আরও গতি আসবে। চারটি জেটির মধ্যে আংশিক জেটি নির্মিত হলেই জাহাজ ভিড়ানো শুরু হবে।
সরেজমিন দেখা যায় পুরোদমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সরকারি বেশ কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। একই সাথে নদীতীরে চলছে জেটি নির্মাণের কাজ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে শত শত শ্রমিক কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অনেক কিছু দৃশ্যমান হয়েছে। ওই এলাকায় রয়েছে দুটি খাল। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে খাল দুটি অক্ষত রেখে পাকা করে দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি বড় বড় স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পর কাজের গতি আরও বেড়েছে। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। আর তখন জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো শুরু হবে। তিনি আশাবাদী পিসিটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। পিসিটিতেও এনসিটি ও সিসিটির মতো ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং করে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে গিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বন্দরের অভ্যন্তরে ছয়টি জেনারেল বার্থ, চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল এবং নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়ে যাওয়ায় নতুন টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চলতি বছর প্রায় ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গতিশীল করতে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ওভারফ্লো ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইয়ার্ড। ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন ইয়ার্ডের। পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির পাশের জমিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পিসিটি নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে জেটিসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিয়ে ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজন মেটানো হবে। ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পিসিটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কয়েক মাস পরে শুরু হয় মূল কাজ। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলে জানান বন্দরের কর্মকর্তারা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ