Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মহাযন্ত্রণা সিমেন্ট ক্রসিং-পতেঙ্গায়

এক্সপ্রেসওয়ে রিং রোডে ধীরগতি : বিঘ্নিত বন্দরমুখী পণ্য পরিবহন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির কাটগড়ের পৈতৃক বাড়ি থেকে আগ্রাবাদের ভাড়া বাসায় উঠেছেন। তার দুই ছেলে-মেয়ে নৌবাহিনী স্কুলের শিক্ষার্থী। কাটগড়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হতো তাদের। বাধ্য হয়ে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে এলাকা ছেড়েছেন তিনি।

গত একবছরে তার মতো অনেকে এলাকা ছেড়ে গেছেন। আর যারা যেতে পারেননি তাদের দুর্ভোগ-যন্ত্রণা সঙ্গী করেই থাকতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর মেগাপ্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আউটার রিং রোড নির্মাণে ধীরগতিতে দুর্ভোগে পড়েছে পতেঙ্গার লাখো মানুষ। বন্দরমুখী সড়কে যানজটে আটকা পড়ছে সেখানে গড়েওঠা বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোর শত শত কন্টেইনারবাহী লরি, কাভার্ড ভ্যানসহ ভারী যানবাহন। পর্যটনের মওসুম হওয়ার পরও প্রায় পর্যটকশূন্য দেশের অন্যতম বিনোদন স্পট পতেঙ্গা সৈকত। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া নগরীর প্রধান সড়কের এ বেহাল দশায় পোশাক শিল্পের ক্রেতা, বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সবাই অতিষ্ঠ। ওই এলাকার সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও চলছে মহামন্দা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিং রোড নির্মাণ শেষ না করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কথা ছিলো রিং রোড চালু করে বন্দরমুখী ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে। তবে পতেঙ্গা সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সাগরের তীরের সেই সড়কের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আটশ কোটি টাকার প্রকল্প দফায় দফায় বাড়িয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা করা হলেও কাজের গতি-মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলে পতেঙ্গায় এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। যানজটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে বিশাল এলাকায়। সরেজমিন দেখা যায় সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় মোড় পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিং শেষ হয়েছে। সেখান থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত চলছে পাইলিং। সড়কের মাঝখানে ত্রিশ ফুট দখলে নিয়ে কাজ চলছে। দুই পাশের সরুপথে চলছে যানবাহন। বেশিরভাগ ভারী যানবাহন হওয়ায় তীব্রজট হচ্ছে। সকালে এবং বিকালে জট এত বেশি হয় সামান্য পথ পার হতে ঘণ্টা পার হয়ে যায়। পুরো সড়ক এবং আশপাশের এলাকায় ধুলিঝড়। প্রকল্পের জন্য সড়কদ্বীপ ও দুই পাশের শত শত গাছ কেটে বিরাণ করা হয়েছে। তবে ধুলাবালু থেকে রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। এলাকার পরিবেশ ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে।

সড়কের দুপাশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। চরম দুর্ভোগের মুখে লাখ লাখ বাসিন্দা। যানজটের অজুহাতে পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবীরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, পতেঙ্গা সৈকতের উন্নয়ন হয়েছে, তবে আসার পথে যে দুর্ভোগ তাতে ভরা মওসুমেও পর্যটকশূন্য। সাগরপাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দা চলছে। সৈকতের যে পয়েন্টে কাজ চলছে সেখান থেকে ছেড়ে যায় সিটি সার্ভিসের ১০ ও ৬ নম্বর রুট এবং কাউন্টার সার্ভিস মেট্রো প্রভাতির বাস। চালক সহকারীরা জানান, পতেঙ্গা পার হতেই পুরোবাস ধুলায় সাদা হয়ে যাচ্ছে।

এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কলকারখানা ও ইপিজেডের হাজার হাজার শ্রমিকের বসবাস পতেঙ্গায়। তাদের দুর্ভোগে সড়ক পাড়ি দিতে হয়। কাটগড় মোড়ের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুরো বর্ষায় এলাকায় ছিলো কাদা পানির প্লাবন, এখন ধুলিঝড়। সারাদিনই রাস্তা অচল থাকে যানজটে। ব্যবসা বাণিজ্য বলে এখন আর কিছু নেই।

গেল বছরের ফেব্রæয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের করছে ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিন। বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছরের একবছর শেষ হলেও সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। এতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। জনদুর্ভোগ ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ারও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে পতেঙ্গায় কাজ না শেষ করেই সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং তথা ব্যস্ততম ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় কাজ শুরুর আয়োজন চলছে। বন্দর ও ট্রাফিক পুলিশের আপত্তির মুখে এক দফা এ উদ্যোগ থমকে যায়। ওই আপত্তির মুখে সর্বশেষ গেল জানুয়ারির মধ্যেই আউটার রিং রোডের কাজ শেষ করে বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ার কথা জানায় সিডিএ। পোর্ট কানেকটিং রোড এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডও জানুয়ারির মধ্যে খুলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনটি সড়কের কোনটিরই কাজ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় ইপিজেড-বন্দর এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হলে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ভারী যানবাহন চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে চলাচল করে। আবার চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানির জন্য পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি ডিপো ও বন্দরে আসে। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে বন্দর এলাকায় কাজ শুরু হলে এসব যানবাহনের জটে বন্দরে অচলাবস্থার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিডিএ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ইনকিলাবকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের কাজ স্বাভাবিক নিয়মেই এগিয়ে যাচ্ছে। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড-বন্দর হয়ে খুব শিগগির প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তার আগেই ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক খুলে দেয়া হবে।

রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌলশী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কাজ শেষ হতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে যেটুকু কাজ হয়েছে তাতে বন্দরমুখী ভারী যানবাহন চলতে পারবে। চলতি মাসের ২০ তারিখ নাগাদ রিং রোড খুলে দেয়া হবে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক বন্দর) তারেক আহমেদ বলেন, পতেঙ্গায় কাজ শুরুর পর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিকল্প সড়ক খুলে না দিয়ে বন্দর-ইপিজেড এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলে বন্দর এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পতেঙ্গায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ