বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনা আতঙ্ক না কাটতেই এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলছে কক্সবাজারে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি একদিনেই দুইজনের মৃ্ত্যু হয়েছে। এতে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই দুই ভেঙ্গু রোগির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ৩৬জন ডেঙ্গু রোগী।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, প্রায় মাস-দেড়েক আগে থেকে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসছে। প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোহিঙ্গাসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ১৩ জন রোহিঙ্গাও রয়েছে।
বর্ষা মৌসুম শুরুর পর সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কক্সবাজার জেলায় এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ এখন একটু বেশি। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ টেকনাফ- উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ বেড়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকার পর কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ এপর্যন্ত বেশি দেখা যাচ্ছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে শনিবার ১৭ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারের সরকারি হাসপাতালে ৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে দুইজন। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১২ জন। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালেও কিছু রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার সারা দেশে ২২২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন থাকার কথা জানা গেলেও এর মধ্যের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে এই বছর ডেঙ্গু রোগের প্রকোপটা রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই ডেঙ্গু রোগি বেশি শনাক্ত হয়েছে। এরপর টেকনাফ ও উখিয়ার স্থানীয়দের মাঝে ভেঙ্গু ছড়িয়েছে। ক্রমান্বয়ে জেলার অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়েছে ডেঙ্গু।
দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এতে চলতি মাসে এই আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক কন্যা শিশুর। কক্সবাজারস্থ শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালে স্বাস্থ্য সমন্বয়কারি ডা. তোহা ভূঁইয়া নুর এর কাছে জুন মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে সেখানে ১ হাজার ৮২১ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি মাসে ১৮৪ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৭ জন, মে মাসে ২৩৩ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। চলতি জুন মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২১ জন রোহিঙ্গা। ১৯ জুন থেকে শেষ ১০ দিনে আক্রান্তের কোন তথ্য কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে না থাকলেও তা অন্তত ৪ শত হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সমন্বয়কারি ডা. তোহা ভূঁইয়া।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মোমিনুর রহমান সর্ব মোট ৮৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান। গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৫ জন ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা আশিকুর রহমান জানান, গত ২৩ জুন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত জিসমা (8) নামের রোহিঙ্গা এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জিসমা কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পের ডি ১৬ ব্লকের করিম উল্লাহর মেয়ে। করিম উল্লাহ জানান, তার মেয়েকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওখানে রক্ত বমি করে মেয়ে মারা যান। কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারি ডা. তোহা ভূঁইয়া নিজেও এখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিটি ঘরে ৮ থেকে ১০ জন গাদাগাদি করে থাকে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে মশা জন্মানোর সুযোগ বেশি। এ কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতারও অভাব আছে। এখন সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে, ব্যবস্থা করা হয়েছে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষার। এ ছাড়া যেসব স্থানে পানি জমে থাকে, সেগুলো নষ্ট করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও কক্সবাজার শহরে চলমান সড়ক ও ড্রেইন সংস্কার কাজে দীর্ঘ সূত্রিতায় বিভিন্ন স্থানে পানিবদ্ধতা এডিস মশার বংশ বিস্তারের কারণ বলে মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।