Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোশাক খাতে কার্যাদেশ কমছে

বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিতে ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে মূল্যস্ফীতির হার। এই ধাক্কায় এ দুই বাজারের ক্রেতারা নতুন পোশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা সক্ষমতার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম কার্যাদেশ পাচ্ছে। এমতাবস্থায় আসন্ন কঠিন সময়ে টিকে থাকার লড়াইয়ের জন্য নতুন করে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প। অথচ মাস কয়েক আগেও পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তখন বিপুল কার্যাদেশ পাচ্ছিল পোশাক কারখানাগুলো।

করোনা মহামারির আশঙ্কা কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিকেই আশা দেখানো শুরু করে পোশাক শিল্প। মহামারিকালে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের কার্যাদেশ বাতিল হয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তৈরি পোশাক খাত। প্রতিটি বড় শিল্পই মন্দার মুখে পড়ে। এ সময় বস্ত্র রফতানি ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। চাহিদা কমে যাওয়া ছাড়াও ফ্রেইট খরচ প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়, আর অন্যান্য উপকরণের সাথে কাঁচামালের দামও বেড়ে যায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক শিল্প শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আয় করে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। যা আগের সর্বোচ্চ আয়ের চেয়েও প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি।

কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আরেকবার সঙ্কটের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় পোশাক শিল্প ধাক্কা খাওয়ায় এ উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হলো না। রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করার জন্য দেশটির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর জেরে সৃষ্ট জ্বালানি সঙ্কটে ইউরোপীয় অর্থনীতি নাভিশ্বাস ওঠে। চড়চড় করে বাড়তে থাকে মুদ্রাস্ফীতির হার, তার ধাক্কা লাগে বাজারে। দ্রুতই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায়। আর সেই উত্তাপ এসে লাগে দেশের আরএমজি খাতে। জুলাই থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরএমজি কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ৭০ শতাংশ বুকিং অর্ডার পাচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে ক্রেতা দেশগুলোতে অন্যান্য খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে পোশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী কেনায় কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এর ফলসূতিতে কমে যাচ্ছে কার্যাদেশ। বিপাকে পড়ছে দেশের সর্ববৃহৎ রফতানি খাতটি।

সম্প্রতি বেশিরভাগ কারখানাই অতিরিক্ত সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছিল। অনেক কারখানাই তাদের আকার বাড়িয়েছে বা ডাবল-শিফট শুরু করেছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতিতে আসন্ন মাসগুলোর পোশাকের অর্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মন্দার আশঙ্কা বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কারখানা সামনের মাসগুলোর জন্য ১৬ শতাংশ কম অর্ডার পাচ্ছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে মহামারির অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এ শিল্প অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

আরডিএম গ্রুপের চেয়ারম্যান রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, তার মাসিক সক্ষমতা ছিল ১৩ লাখ, কিন্তু জুলাই ও আগস্টের জন্য তার অর্ডার ছিল মাত্র ৬-৭ লাখ। অথচ এক মাস আগেও উৎপাদন চাহিদার চাপ সামলানোর জন্য তাকে ১৪ ঘণ্টা কারখানা চালু রাখতে চালাতে হয়েছে।
কার্যাদেশ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) ৩০ শতাংশ। চার মাস আগের তুলনায় এনকোয়্যারি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এক মাস পরও একই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে বলেও জানান মোহাম্মদ হাতেম। এছাড়া তারল্য সংকটে পড়বে বলে অনেক কারখানা ডিসেম্বরের পর থেকে শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারবে না বলে জানান তিনি।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে। রাষ্ট্রচালিত স্ট্যাস্টিস্টিকস কোরিয়ার তথ্য অনুসারে, গত মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, আর গত এপ্রিলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্যমূল্য বেড়েছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ২০ শতাংশ ইউডি কমার তথ্য জানিয়ে বলেন, রফতানিকারকরা শিপমেন্ট স্থগিত হয়ে যাওয়ার কথাও জানাচ্ছেন। তবে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো কার্যাদেশ বাতিলের খবর কেউ জানায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ