পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্ব যুবদিবসকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউনিসেফ ও দ্য এডুকেশন কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৯২টি দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এক চতুর্থাংশের বেশির চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই। শৈশব ও তারুণ্যের দক্ষতা বিকাশের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সব বয়সের শিশু ও যুবকদের মধ্যেই দক্ষতা নিম্ন স্তরের। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বেশিরভাগ ১০ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সের শিশু সাধারণ পাঠ্য পড়তে ও বুঝতে পারে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা যুবকের উচ্চ হার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে দক্ষতা কম অর্জনের কারণে বিশ্বব্যাপী দেশগুলো দক্ষতা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ যুবক বর্তমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে অংশ নিতে অপ্রস্তুত। ইউনিসেফ ও দ্য এডুকেশন কমিশন আহ্বান জানিয়ে বলেছে, প্রতিটি শিশুর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের ঝরে পড়ার ঝুঁকি রোধ করতে প্রত্যেক দেশের সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে শিক্ষার হার প্রায় ৭৩ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান থেকে আপাত দৃষ্টিতে বোঝা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশ বেশ এগিয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যান নিয়ে শিক্ষাবিদরা বরাবরই আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ পরিসংখ্যান ইউজলেস। এতে গুণগত ও কর্মমুখী শিক্ষার মান কতটা রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দেশে গুণগত এবং কর্মমুখী শিক্ষার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বেকারত্বের হার দেখে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এ পরিসংখ্যান কেবল শিক্ষিতের হার নির্দেশ করছে, কর্মক্ষেত্রে এর কোনো উপযোগিতা নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার মান নিশ্চিত করার পরিবর্তে শুধু শিক্ষাবাণিজ্য করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থীতে পরিণত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে গিয়ে তারা ব্যর্থ এবং চরম হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। দিনের পর দিন বেকার থাকায় তারা পরিবার, সমাজ সর্বোপরি দেশের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার মান কতটা নিচে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিভাগে পাসের হার দেখলেই বোঝা যায়। কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে ৮-১০ ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সুযোগ না পাওয়া বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পেরে অনেকে সার্টিফিকেট সর্বস্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আছে মান সম্পন্ন শিক্ষক, না আছে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের সুযোগ-সুবিধা। অথচ প্রতি বছরই এসএসসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার শতকের কাছাকাছি। এ পাসের হার নিয়ে শিক্ষাবিদরা শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। পর্যবেক্ষরা মনে করছেন, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য দেখানোর জন্য পাশের হার বেশি দেখাচ্ছে। এটা দেশের গুণগত শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে তথাকথিত শিক্ষিতের হার বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জিত হচ্ছে না। অথচ একটা সময় পাসের হার নয়, যোগ্যতার হার বিবেচানায় শিক্ষিতের সংখ্যা বিচার করা হতো।
প্রযুক্তির এ যুগে কর্মমুখী ও মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকল্প নেই। এছাড়া সামনে এগুনো যাবে না। যেনতেনভাবে পাস করা সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষিতরা দেশের বোঝা হওয়া ছাড়া অন্যকোনো কাজে লাগে না। বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হারের উল্লম্ফনে শিক্ষিতের পরিসংখ্যান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও শিক্ষার মান বাড়ে নি। ফলে শিক্ষিত যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ হতাশার কবলে পড়ে বিপথগামী হয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত হওয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণে তথাকথিত সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারিগরি, কর্মমুখী ও গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাঙ্গণ থেকে মানসম্পন্ন ও কর্মযোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এমন কারিক্যুলাম তৈরি করতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য এর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।