পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারীর পর ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ক্রমে ঘণীভুত হয়ে চলেছে। পশ্চিমা বাণিজ্য অংশীদারিত্ব এবং ডলার নির্ভর অর্থনীতির কারনে আমাদের দেশে এই সংকটের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সরকার ইতিমধ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্নস্তর পর্যন্ত ব্যয় সংকোচন নীতির ঘোষণা দিয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর এবং নতুন গাড়ী ক্রয় বন্ধের মত সিদ্ধান্তসহ সব মিলিয়ে চলতি বাজেটে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাযুজ্য ও সমন্বয় থাকতে হবে। ব্যয় সংকোচন নীতি ও নির্দেশনা জারির পরও অনেক ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এদিকে দেশে অর্থনৈতিক সংকটও ক্রমে ঘণীভ’ত হতে শুরু করেছে। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার এবার উপজেলা প্রশাসনের ব্যয় কমানোর নির্দেশনা জারি করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা পরিষদের ব্যয় কমাতে জনপ্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ১০ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দকৃত বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যয়োত্তর অনুমোদন দেয়া হবেনা মর্মে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেই সাথে গ্যাস-বিদ্যুত-পানির মত ইউটিলিটি সার্ভিসের ব্যয় সংকোচন এবং সময়মত বিল পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষ বহন করতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতার পালাবদলের পর অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে জনঅসন্তোষ বা গণবিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা. পানামা, ঘানা ও কেনিয়ায় মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারিরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতি-দু:শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমাদের দেশে অশনিসংকেত। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গত কয়েক মাসে সরকার ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণ করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নির্দেশনা জারি করেছে। সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসনকে ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিল। দেশের প্রায় ৫শ’ উপজেলা পরিষদে নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে যথাযথভাবে ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে চললে চলতি অর্থবছর থেকে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। সরকারের এই নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসন কতটা মান্য করে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় এ ক্ষেত্রে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাই এখন দেখার বিষয়।
প্রবাসি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং গার্মেন্ট রফতানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রির্জাভে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে এগিয়ে যাচ্ছিল। গত অর্থবছরের মঝামাঝি এসে দেখা গেল রফতানি এবং রেমিটেন্স থেকে প্রাপ্ত ডলারের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি, যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। তখন থেকেই সরকার আমদানি কমিয়ে আনার পাশাপাশি মূদ্রা ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করলেও বাস্তবে তার তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জার্ভে বড় ধরণের টান পড়েছে। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় বেশ কিছু বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস, পেট্টোল, এলএনজিসহ জ্বালানি ও খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে চলেছে। এমনকি অতিরিক্ত দামেও আমদানি করে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রতাই হচ্ছে বিকল্পহীন পন্থা। সেই সাথে জ্বালানি ও খাদ্যে নিজস্ব উৎস ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। প্রশাসনের সর্বস্তুরে ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে। সেই সাথে প্রতিরক্ষা বিভাগ, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। একদিকে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো ডলারের যোগান নিশ্চিত করতে পারছেনা। এহেন বাস্তবতায় শুধু প্রজ্ঞাপণ ও নির্দেশনা জারি করে বসে থাকলে হবে না। এসব নির্দেশন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুত, জ্বালানির জন্য বাড়দি অর্থের প্রয়োজন। এমতাবস্থায় সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের বকেয়া বিল আদায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে বড় অংকের বকেয়া রয়েছে। এটা দ্রুত আদায় করতে হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে কার্যকর ভ’মিকা পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।