Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদিজাকে সাভার সিআরপিতে নেয়া হতে পারে আগামীকাল

সুস্থ আছি ভালো আছি, সবাই দোয়া করবেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত খাদিজাকে আগামীকাল সোমবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে সাভারে সিআরপিতে পাঠানোর কথা রয়েছে। তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। গতকাল খাদিজা আক্তার নার্গিস বলেছেন, আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি, ভালো আছি। দোয়া করবেন যেন ভালো থাকি, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারি। পুরোপুরি সুস্থ হতে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন নার্গিস। তিনি বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ।’ এ সময় তিনি সাংবাদিক ও চিকিৎসকদেরও ধন্যবাদ জানান।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের হামলায় আহত খাদিজা বেগম নার্গিস এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
খাদিজা আক্তার নার্গিস নিজ হাতে মাইক্রোফোন ধরে বলেন, আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারি। তিনি আরো বলেন, সকল গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।
খাদিজা আক্তার নার্গিস আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি স্কয়ার হাসপাতালকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই গণমাধ্যমকর্মী ও দেশবাসীকেও।’ এসময় তার বাবা মাসুক মিয়া ও চিকিৎসকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্কয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ডা. মির্জা নাজিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনার সবাই জানেন এমসি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে নৃশংসতার শিকার হতে হয়। সিলেটে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন নার্গিসের যে অবস্থা তাতে তার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ, শতকরা মাত্র ৫ শতাংশ। তারপর এখানে আমরা তার সার্জারি করি। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। তার দুই হাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন তাকে সাভারের সিআরপিতে স্থানান্তর করা হবে। কারণ তার ফিজিওথেরাপি দরকার।’
নার্গিসের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে মেডিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের এ পরিচালক বলেন, ‘সে এখন নিজে খেতে পারে, যে কোনও লেখা পড়তে পারে। সে ধরে ধরে হাঁটতে পারে। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেহেতু তার জেনারেল নিউরোলজিক্যাল কন্ডিশন ভালো, তাই তাকে  ডিসচার্জ করা এবং ভালো কোথাও রিহ্যাব ফিজিওথেরাপি দেয়া দরকার।’ ডা. মির্জা নাজিমউদ্দিন আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি নার্গিসের ব্যাপারে আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি।
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়ন হয়েছে। তবে মানুষ এখনও অন্ধকারে আছে, তাই মিডিয়া কর্মীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা তুলে ধরবেন।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হন নার্গিস। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ৪ অক্টোবর ভোরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। ওই দিনই নার্গিসের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার অবস্থার উন্নতি হলে ১২ অক্টোবর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। নার্গিসের শ্বাসনালীতে সর্বশেষ অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় বদরুলকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। বদরুল হামলার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
খাদিজার চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর জন্য স্কয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর কথা বলেন খাদিজা। এর আগে খাদিজাকে ১১২৯ নম্বর কেবিন থেকে হুইল চেয়ারে করে নিচতলায় সংবাদ সম্মেলনস্থলে আনা হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলার সময় তিনি ডান হাত দিয়ে মাইক্রোফোন ধরে কথা বলেন। তার পাশে ছিলেন তার বাবা মাসুক মিয়া ও নিউরোসার্জন ডা. রেজাউস সাত্তারসহ হাসপাতালের অনেকে। সংবাদ সম্মেলন শেষে আবার খাদিজাকে হুইল চেয়ারে করে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে যে খাদিজা অমানবিকতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল, আজ সেই খাদিজা বাংলাদেশে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আর এটা সম্ভব হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং আপনাদের দোয়ায়।
তিনি আরো বলেন, মানুষের জীবনমানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থারও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে জনগণের আস্থা ও জনসচেতনতার জন্য মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী খাদিজার চিকিৎসার ব্যাপারে স্কয়ার হাসপাতালের ওপর যে আস্থা দেখিয়েছেন, তার জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানান মির্জা নাজিম।
মির্জা নাজিম বলেন, সিলেটে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ৪ অক্টোবর মুমূর্ষু অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় খাদিজাকে। তখন ইমার্জেন্সিতে খাদিজার জিসিএস (জ্ঞানের লেভেল) ছিল মাত্র ৫। সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় এবং বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে দিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় যে,  হাড় বিক্ষিপ্তভাবে থ্যাঁতলানো এবং ব্রেনের অন্যান্য অংশ গুরুতরভাবে আক্রান্ত এবং মিডলাইন থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, কালক্ষেপণ না করে সেদিনই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে নিউরো সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. এ এম রেজাউস সাত্তারের নেতৃত্বে অত্যন্ত বিপজ্জনক যেনেও মস্তিষ্কে অপারেশন করা হয়। তারপরই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ধীরগতিতে তার উন্নতি দেখা যায়।
গত ১৭ অক্টোবর অর্থোপেডিক বিভাগের ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৯ অক্টোবর তাকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
এরপর ৭ নভেম্বর অর্থোপেডিক এবং নিউরো সার্জারি বিভাগ একসঙ্গে মস্তিষ্কের হাড় পুনঃস্থাপন ও হাতের অপারেশন করে। ৮ নভেম্বর সার্বিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। একজন মানুষের জিসিএস থাকে ১৫ এখন খাদিজারও জিসিএস ১৫। কিন্তু তার বাঁ দিকে অবশ।
স্কয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সোমবার খাদিজাকে স্কয়ার থেকে সাভারে সিআরপিতে পাঠানো হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদিজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ