Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

যথাযোগ্য মর্যাদায় ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে গত ১০ জুলাই দেশব্যাপী ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। এবার প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক। ঈদযাত্রার শুরুতে কিছুটা দুর্ভোগ থাকলেও অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ কম ছিল। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত অনেকটা সহজতর হয়েছে। মহাসড়কে মটরসাইকেলসহ অননুমোদিত গাড়ী নিয়ন্ত্রণের কারণে সড়কে গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে সীমাহীন যানজট এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনার সংবাদ এবার তেমনভাবে উঠে আসেনি। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও ছিল সন্তোষজনক। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বলা বাহুল্য, মানুষের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাচ্ছন্দময়, নিরাপদ ও গতিশীল হলে দেশের অর্থনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে করোনায় বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বড় ধরণের ধাক্কা দিয়েছে। এর প্রভাবে দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জনঅসন্তোষ ও অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির কথা সবার জানা। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও দেশে এবং নিজ দলের মধ্যে মানুষের আস্থা হারিয়ে ক্ষমতা হারিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এক ধরণের আস্থাহীনতার সংকটে রয়েছেন। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে চীন তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে অগ্রগতির উৎকর্ষ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।


নিরাপত্তা, সুশাসন ও জনগণের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আশা করা যায়না। বৈশ্বিক মন্দাবস্থার মধ্যেও এবারের ঈদে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত চলাচল এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে। একসাথে কোটি মানুষের নিরাপদে চলাচলের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা নির্দেশ করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আবদ্ধ অবস্থা কখনো অর্থনীতিকে গতিশীল করে না। মানুষের স্বচ্ছন্দ বিচরণ ও যোগাযোগের ওপর অর্থনীতি বেগবান হয়। এবার মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তাহীনতা কম থাকায় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা ও গতিশীলতা মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে হাইওয়ে পুলিশের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা গেলে এবং চাঁদাবাজি, দখলবাজির মত ঘটনাকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো আরো নিরাপদ ও গতিশীল হয়ে উঠতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হতে দেখা যায়। উন্নত দেশের পর্যটকরা ভারত, নেপাল, মালদ্বীপের মত দেশে ভ্রমণ করে। নেপাল ও মালদ্বীপের জাতীয় আয়ের বড় অংশই পর্যটন নির্ভর। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, বৈচিত্র্যময় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা এবং অপরূপ পাহাড়ি নিসর্গ রাঙ্গামাটি-বান্দরবান ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে আছে অনেক সম্ভাবনাময়, দর্শনীয় পর্যটন স্থান। পর্যটনের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ চলাচল ও থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা সম্ভব।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমাদের দেশও রয়েছে। ইতোমধ্যে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞারা অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। ভবিষ্যত অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই সুসমন্বয়ের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো স্বচ্ছ, গতিশীল ও নিরাপদ করে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনীতির কোথায় এবং কোন খাতে কি ধরনের সমস্যা ও সংকট রয়েছে তা চিহ্নিত করে আগাম পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা নিতে হবে। খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ইস্যুতে দেশে দেশে যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন