Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উবার ফাইলস: ইমানুয়েল মাখোঁর বিরুদ্ধে তদন্তের ডাক বিরোধীদের

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২২, ৮:৪৮ এএম

উবার ফাইলসে নাম আসায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে তাঁর বিরোধী পক্ষ।
গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে উবারের গোপন নথি ফাঁসের তথ্য জানানো হয়। ফাঁস হওয়া লক্ষাধিক সেই নথিতে উবারকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নাম। তিনি অর্থমন্ত্রী থাকার সময় উবারকে সুবিধা দিতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, উবার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বিস্তারের ক্ষেত্রে সেসব দেশের সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা অনৈতিক লেনদেন, যোগসাজশ, আইন লঙ্ঘন, প্রতারণা ইত্যাদির মতো সব বাঁকা ও কদর্য পথই নিয়েছে। উবারের ফাঁস হওয়া এই গোপন নথিকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘উবার ফাইলস’ হিসেবে।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) মাধ্যমে উবারের ১ লাখ ২৪ হাজার গোপন নথি পেয়েছে গার্ডিয়ান। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ই-মেইল, আই-মেসেজ (আইফোনের নিজস্ব বার্তা সরবরাহব্যবস্থা), হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন, নোটবুক, ইনভয়েসও রয়েছে। বিশ্বের ৪০টি দেশে উবারের ব্যবসার নানা গোপন নথি ও বার্তা রয়েছে।
তালিকায় মাখোঁর নাম থাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এরই মধ্যে এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়ে মাখোঁর বিরুদ্ধে তদন্তের ডাক দিয়েছে বিরোধীরা। তাঁর বিরুদ্ধে এখন এককাট্টা হয়েছেন ফ্রান্সের বাম ও ডানপন্থী দলের রাজনীতিকেরা।
গার্ডিয়ান বলছে, ইমানুয়েল মাখোঁ অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ট্যাক্সি খাতের ব্যবসাকে কঠিন করে তুলতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল উবারের সঙ্গে আলাপের মধ্য দিয়েই।
ফলে মাখোঁ বেশ বিপাকেই পড়েছেন বলতে হবে। তিনি এমনিতেই কঠিন সময় পার করছেন। কিছুদিন আগে হওয়া নির্বাচনে দেশটির পার্লামেন্টে মধ্যপন্থী এ নেতা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে সংসদীয় তদন্তের ডাক দিয়েছেন ফ্রান্সের বাম, উগ্র ডানপন্থী দল এবং বামঘেঁষা ট্রেড ইউনিয়ন সিজিটির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বলছেন, আইসিআইজে যা বলছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। এটি দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে যুক্ত।
মাখোঁ ২০১৪ থেকে ২০১৬ সময় পর্যন্ত ছিলেন ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে। সে সময় তিনি উবারের জন্য সমর্থন আদায়ে ব্যাপক চেষ্টা করেছিলেন। এ জন্য তাঁর সঙ্গে উবারের গোপন চুক্তিও হয়েছিল। আর সেই চুক্তি অনুযায়ীই তিনি ফ্রান্সের পুরোনো ট্যাক্সি শিল্পকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেন। সে সময় ক্ষমতাসীন এবং বিভাজনে জেরবার সোশ্যালিস্ট পার্টিকে উবারের জন্য সহায়ক হয় এমন একটি চুক্তি করতে উমেদারি করেছিলেন তিনি।
উবার যখন ফ্রান্সে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে, সে সময় দেশটির পরিবহনমন্ত্রী ছিলেন আলাঁ ভিদালি। ফ্রান্স ইনফো রেডিওকে তিনি বলেন, সে সময় মাখোঁ যেভাবে উবারের সঙ্গে গোপনে সভা করে বেড়াচ্ছিলেন, তাতে তিনি ভীষণ বিস্মিত হয়েছিলেন। সেটা ভীষণ জটিল পরিস্থিতি ছিল। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সবকিছু জানার অধিকার ফরাসি জনগণের রয়েছে।’
এদিকে কোনো অনৈতিক সুবিধা মাখোঁ উবারকে দেননি বলে দাবি করেছে তাঁর দল। পার্লামেন্টে মাখোঁর দলের নেতা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘মাখোঁ তার কাজ ঠিকভাবেই করে যাচ্ছেন। উবার এমন একটি সেবার এনেছিল, যার প্রতি ফরাসিদের আগ্রহ ছিল। এই কোম্পানিকে ফ্রান্সে এনে মাখোঁ ঠিক কাজই করেছেন, যা বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।’ গোপন চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো চুক্তি হয়নি। ক্ষতিকর কোনো কিছুই হয়নি।’
অথচ উবার ফাইলসের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের মার্শেইয়ে উবারের কার্যক্রম নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। উবারের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার শীর্ষ ব্যক্তি তখন ফ্রান্সের মন্ত্রিসভায় উবারের মিত্র ইমানুয়েল মাখোঁর শরণ নেন। সাড়াও মেলে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মাখোঁ টেক্সট ম্যাসেজ করে জানিয়েছিলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির দেখভাল করছি। এই মুহূর্তে শান্ত থাকো।’
প্রসঙ্গত, উবার ব্যবসা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। কী সেই সুবিধা? উত্তর—বহু ধরনের। এমনকি কোনো দেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে গাড়িসেবা দেওয়ার মতো আইন না থাকলে, সেখানে তারা এই নীতিনির্ধারক ও প্রভাবশালীদের সহায়তায় নতুন আইন পর্যন্ত করিয়েছে তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ